মার্কিন মধ্যবর্তী নির্বাচন

ইতিহাস গড়লেন যারা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
  ১০ নভেম্বর ২০২২, ১০:৩০

ইতোমধ্যে মার্কিন মধ্যবর্তী নির্বাচনে বেশিরভাগ আসনের ফলাফল ঘোষণা করা হয়েছে। দেশটিতে এবারের নির্বাচনে অনেকেই ইতিহাস গড়েছেন। নানা কারণে অনেক প্রার্থীই বিভিন্ন কারণে রেকর্ডের খাতায় নাম লেখিয়েছেন। 
কেটি ব্রিট : রিপাবলিকান প্রার্থী কেটি ব্রিট (৪০) আলাবামা অঙ্গরাজ্য থেকে সিনেট সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। রাজ্যের প্রথম নারী হিসেবে দেশটির সিনেটে যাচ্ছেন তিনি। রিপাবলিকান এই প্রার্থী সিনেটর রিচার্ড শেলবির স্থলাভিষিক্ত হচ্ছেন। মধ্যবর্তী নির্বাচনে কেটি ব্রিট ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী উইল বয়িডকে হারিয়েছেন।
জয়ের পর উচ্ছ্বসিত কেটি ব্রিট বলেন, ‘আমি সবার প্রতি শ্রদ্ধা জানাচ্ছি। আমাকে সম্মানিত করা হয়েছে এবং আমি সবার প্রতি কৃতজ্ঞ।’ যুক্তরাষ্ট্রে ১৯৩২ সালের পর থেকে এখন পর্যন্ত ৫৮ জন নারী সিনেট সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
কেটি ব্রিট বলেন, তিনি সিনেটে একমাত্র রিপাবলিকান নারী সদস্য হচ্ছেন, যার স্কুলগামী সন্তান রয়েছে। তিনি তরুণদের জন্য উন্নত ভবিষ্যৎ গড়তে কাজ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
ম্যাক্সওয়েল ফ্রস্ট : মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদের ফ্লোরিডার একটি আসনে (১০ নম্বর কংগ্রেসনাল ডিস্ট্রিক্ট) নির্বাচিত হয়েছেন ২৫ বছর বয়সী ম্যাক্সওয়েল ফ্রস্ট। ডেমোক্র্যাট প্রার্থী ফ্রস্টই প্রথমবারের মতো ‘জেনারেশন-জেড’ (১৯৯৭-২০১২ সালের মধ্যে জন্মগ্রহণকারী)-এর প্রতিনিধি হিসেবে কংগ্রেসে যাচ্ছেন।
ফ্রস্ট নির্বাচনী প্রচারণায় আগ্নেয়াস্ত্রের মাধ্যমে সহিংসতা, জলবায়ু পরিবর্তন, গর্ভপাতের অধিকার ও স্বাস্থ্যসেবার আওতা সম্প্রসারণের মতো বিষয়গুলোতে গুরুত্ব দিয়েছেন। এর মাধ্যমে তিনি তরুণ ভোটারদের পক্ষে টানতে পেরেছেন বলে বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। ম্যাক্সওয়েল ফ্রস্টই সম্ভবত প্রথম আফ্রো-কিউবান হিসেবে মার্কিন কংগ্রেসে প্রতিনিধিত্ব করবেন।
মাউরা হিলি : যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে রেকর্ড গড়েছেন মাউরা হিলি। ডেমোক্রেটিক এই প্রার্থী ম্যাসাচুসেটস অঙ্গরাজ্যের প্রথমবারের মতো সমকামী নারী গভর্নর নির্বাচিত হয়েছেন। দেশটিতে এবারের মধ্যবর্তী নির্বাচনে গভর্নর প্রার্থীদের মধ্যে মাত্র দুজন প্রকাশ্যে নিজেদের সমকামী ঘোষণা করেছিলেন। এদের মধ্যে মাউরা হিলি একজন।
নির্বাচনী প্রচারে মাউরা হিলি শিশুর পরিচর্যাকে (চাইল্ডকেয়ার) আরও সাশ্রয়ী, চাকরির প্রশিক্ষণ কর্মসূচি বৃদ্ধি এবং তার অঙ্গরাজ্যে নারীর গর্ভপাত বৈধ ও আরও নিরাপদ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।
সারাহ হাকেবি স্যান্ডার্স : এদিকে আরকানসাস অঙ্গরাজ্যেও রেকর্ড গড়েছেন সারাহ হাকেবি স্যান্ডার্স। রাজ্যটিতে তিনি প্রথম নারী গভর্নর নির্বাচিত হয়েছেন। এর আগে সারাহ হাকেবি সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রেস সেক্রেটারি ছিলেন।
তবে হাকেবি স্যান্ডার্স প্রথম নারী হিসেবে গভর্নর নির্বাচিত হলেও আরকানসাসের গভর্নরের প্রাসাদ তার কাছে অপরিচিত নয়। তার বাবা মাইক স্যান্ডার্স ১৯৯৬ থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত সেখানকার গভর্নর ছিলেন।
নির্বাচনে স্যান্ডার্সের প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন ডেমোক্রেট প্রার্থী ক্রিস জোনস। রিপাবলিকান অধ্যুষিত আরকানসাসে তিনি জয় পাবেন-এমনটা আগে থেকেই ধারণা করা হচ্ছিল। রাজ্যটিতে এখনও ট্রাম্পের জনপ্রিয়তা অনেক বেশি।
আরকানসাসের গভর্নর নির্বাচনে তহবিল সংগ্রহেও রেকর্ড গড়েন সারাহ। তিনি ৯০ লাখ ডলারের একটি তহবিল গড়ে তোলেন।
ওয়েস মুর : ডেমোক্র্যাট নেতা ওয়েস মুর (৪৪) যুক্তরাষ্ট্রের মেরিল্যান্ড অঙ্গরাজ্যের গভর্নর নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি অঙ্গরাজ্যটির প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ গভর্নর। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ২৪৬ বছরের ইতিহাসে মাত্র তৃতীয় নির্বাচিত কৃষ্ণাঙ্গ গভর্নর হিসেবেও নাম লেখালেন তিনি।
এর আগে ম্যাসাচুসেটসে দেভাল প্যাট্রিক এবং ভার্জিনিয়া অঙ্গরাজ্যে ডগলাস উইল্ডার কৃষ্ণাঙ্গ গভর্নর নির্বাচিত হয়েছিলেন। ওয়েস মুর একজন লেখক। যুক্তরাষ্ট্রে সর্বাধিক বিক্রিত বই রয়েছে তার। এক সময় দারিদ্র্য বিমোচনে কাজ করা সংগঠন রবিন হুড’র প্রধানের দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি।
মার্কওয়েন মুলিন : ৩৫ বছর বয়সী রিপাবলিকান নেতা মার্কওয়েন মুলিনওকলাহোমায় সিনেটর নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি এই অঙ্গরাজ্য থেকে ১০০ বছরের মধ্যে প্রথম আদিবাসী আমেরিকান সিনেটর হিসেবে নাম লেখালেন। রিপাবলিকানরা ১৯৮৭ সাল থেকেই এ আসনটি ধরে রেখেছে।
চেরোকি জাতিগোষ্ঠীর সদস্য মার্কওয়েন মুলিন ২০১২ সালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। পরবর্তীতে তিনি আমেরিকান ককাসের সদস্য হন।
জেমস রোজেনার : জেমস রোজেনার (২৬)নিউ হ্যাম্পশায়ার অঙ্গরাজ্যের আইনসভার সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। ডেমোক্রেটিক পার্টির এই সদস্য একজন ট্রান্সজেন্ডার। যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে ট্রান্সজেন্ডার হিসেবে তিনিই প্রথম কোনো অঙ্গরাজ্যের আইনসভার সদস্য নির্বাচিত হলেন।
তিনি এই রাজ্যে নারীর গর্ভপাতের অধিকার, নারী-পুরুষের সমান মজুরি, সমকামীদের বিয়ের বৈধতাসহ তাদের অধিকার নিশ্চিতের দাবিতে আন্দোলন করে আসছেন।
ক্যাথি হোকুল : নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের প্রথম নারী গভর্নর ক্যাথি হোকুল পুনর্নির্বাচিত হয়েছেন। এর আগে গতবছর প্রথম নারী হিসেবে গভর্নর পদে শপথ নেন ক্যাথি হোকুল। নির্বাচনে রিপাবলিকান প্রার্থী লি জেলডিনের সঙ্গে তার হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হয়।
যৌন হয়রানির অভিযোগে নিউইয়র্কের গভর্নর অ্যান্ড্রু কুমো পদত্যাগে বাধ্য হলে যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ এই অঙ্গরাজ্যের প্রথম নারী গভর্নর হিসেবে দায়িত্ব পান ক্যাথি হোকুল। প্রথম মেয়াদে আবাসন খাত, আগ্নেয়াস্ত্রের সহিসংতা নিয়ন্ত্রণ ও অর্থনৈতিক সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর ওপর জোর দিয়েছিলেন তিনি। গর্ভপাত আইনের পক্ষেও তার অবস্থান ছিল।
ডালিয়া রমিরেজ : ডেমোক্র্যাট ডালিয়া রমিরেজ (৩৯) ইলিনয় অঙ্গরাজ্য থেকে প্রতিনিধি পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন । এই অঙ্গরাজ্য থেকে প্রথম লাতিন হিসেবে নির্বাচিত হলেন তিনি।
নির্বাচনের রাতে সমর্থকদের উদ্দেশে ডালিয়া রমিরেজ বলেন, ‘আজ রাতে আমরা ইতিহাস তৈরি করেছি।’ ২০১৮ সালে প্রথম গুয়েতেমালান–আমেরিকান হিসেবে ইলিনয় জেনারেল অ্যাসেম্বলির সদস্য নির্বাচিত হন ডালিয়া রমিরেজ। আবাসন সাশ্রয়ী করা ও গর্ভপাতের অধিকার রক্ষায় সোচ্চার রয়েছেন তিনি।