যুক্তরাষ্ট্রে যত বাংলাদেশি আছেন, তাদের দুই তৃতীংশের বসবাস ডেমোক্র্যট রাজ্য খ্যাত নিউইয়র্কে। স্বভাবত, অন্যান্য রাজ্যের চেয়ে এই রাজ্যে যে কোনো নির্বাচনে মূলধারার বাংলাদেশি রাজনীতিকদের ভালো ফল করার কথা। কিন্তু হচ্ছে তার উল্টোটা। নিজেদের মধ্যে মতানৈক্য ও দ্বিধা-বিভক্তির অন্যান্য রাজ্যে এগিয়ে থাকলেও নিউইয়র্কে কেন পিছিয়ে?
কারণে বিভিন্ন নির্বাচনে প্রতিযোগিতা করলেও কাক্সিক্ষত জয় আসছে না। এমন অবস্থা চলতে থাকলে অদূর ভবিষ্যতে বাংলাদেশিদের এগিয়ে যাবার কোনো সম্ভাবনা নেই বলে মনে করা হচ্ছে। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে প্রায় দেড় কোটি প্রবাসী বাংলাদেশি রয়েছেন। তাদের অনেকেই যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপ ও অস্ট্রেলিয়ায় মূলধারার রাজনীতি করছেন। এ পর্যন্ত পাঁচজন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত যুক্তরাজ্য পার্লামেন্টে নির্বাচিত হয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রেও বিপুল প্রবাসী বাংলাদেশি মূলধারার রাজনীতিতে সক্রিয়। তাদের মধ্যে চারজন বাংলাদেশি আমেরিকান গেল ৮ নভেম্বর মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত মধ্যবর্তী নির্বাচনে বিজয়ী হয়েছেন, যারা রাজ্য আইনসভায় প্রতিনিধিত্ব করবেন। জর্জিয়া স্টেট সিনেটর হিসেবে তৃতীয় টার্মের জন্যে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন কিশোরগঞ্জের সন্তান শেখ রহমান (ডেমোক্র্যাট)। নিউ হ্যামশায়ার স্টেটের রিপ্রেজেনটেটিভ হিসেবে পঞ্চম মেয়াদের জন্য বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়েছেন পিরোজপুরের সন্তান আবুল খান (রিপাবলিকান)। কানেকটিকাট স্টেট সিনেট নির্বাচনে ডেমোক্রেটিক পার্টির মোহাম্মদ মাসুদুর রহমান বিপুল ভোটে জয়ী হয়েছেন সিনেট ডিস্ট্রিক্ট-৪ থেকে। চাঁদপুরের সন্তান মাসুদ এবারই প্রথম স্টেট সিনেটর নির্বাচিত হলেন।
অপরদিকে জর্জিয়া স্টেট সিনেট ডিস্ট্রিক্ট-৭ থেকে ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী নাবিলা ইসলামও বিপুল ভোটে জয়ী হয়েছেন। নোয়াখালীর সন্তান নাবিলা হলেন জর্জিয়া স্টেট সিনেটে প্রথম মুসলিম নারী এবং দ্বিতীয় বাংলাদেশি সিনেটর। এ স্টেটে প্রথম মুসলমান সিনেটর হিসেবে ৬ বছর আগে নির্বাচিত হন শেখ রহমান।
এই চার বাংলাদেশির বিজয়ে আনন্দিত যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী বাংলাদেশিরা। তারা বিজয়ীদের নানাভাবে অভিনন্দন জানিয়েছেন। পাশাপাশি একটি প্রশ্ন সামনে এসেছে, তা হলো নিউইয়র্কে কেন পিছিয়ে প্রবাসী বাংলাদেশিরা? এর উত্তরে নানাজন নানান কথা বলছেন। মূলধারার রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত বেশ কয়েকজন বাংলাদেশি রাজনীতিবিদ বলছেন, নিউইয়র্কে বাংলাদেশিদের মধ্যে মতানৈক্য ও বিভক্তি বেশী। একজন অগ্রসর হলে আরেকজন তাকে কীভাবে টেনে ধরবেন সেই প্রতিযোগিতায় ব্যস্ত হয়ে পড়েন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন মূলধারার রাজনীতিক বলেন, নিউইয়র্কে সাড়ে তিনশ বাংলাদেশি আঞ্চলিক সংগঠন রয়েছে। কিন্তু হাতে গোনা কয়েকটি ছাড়া নেতৃত্বের কোন্দলে বেশিরভাগই ভেঙে একাধিক হয়েছে। তিনি বলেন, যে কমিউনিটিতে প্রেসক্লাব চারটি এবং ব্যবসায়ী সংগঠন তিনটি, সেই কমিউনিটি কীভাবে এগিয়ে যাবে? গত জুনের প্রাইমারিতে নিউইয়র্ক সিটির ডিস্ট্রিক্ট ২৪ থেকে ৫ জন বাংলাদেশি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। বাংলাদেশি আমেরিকানরা বিষয়টি ভালোভাবে নেননি। এ কারণে ক্ষুব্ধ হয়ে অনেকে ভোটকেন্দ্রে যাননি। ফলে বাংলাদেশিরা বিপুল ভোটে পরাজিত হয়েছেন। আবার কোনো এলাকায় যোগ্য প্রার্থীর বদলে কমিউনিটির সঙ্গে সম্পৃক্ত নন এমন ব্যক্তি প্রার্থী হয়েছেন। ফলে তাকেও কেউ ভোট দেননি। ডিস্ট্রিক্ট-৩৯ থেকে বাংলাদেশি আমেরিকান শাহানা হানিফ বিপুল জয় পেয়ে সিটি কাউন্সিলে গেলেও তার জয়ের পেছনে বাংলাদেশিদের তেমন কোনো ভূমিকা ছিল না। কারণ শাহানা হানিফের এলাকাটি জুইশ অধ্যুষিত। তার বিজয়ী হবার পেছনে সাবেক কাউন্সিলম্যান ব্র্যাড ল্যান্ডারের বড় ভূমিকা ছিল বলে অনেকে মনে করেন।
অদূর ভবিষ্যতে নিউইয়র্কে মূলধারায় বাংলাদেশিদের অবস্থান কী হবে? এ ব্যাপারে জানতে চাইলে জ্যামাইকার একজন প্রবীণ রাজনীতিক ঠিকানাকে বলেন, ‘আগে প্রয়োজন আমাদের ঐক্য, ঐক্য এবং ঐক্য।’
ডেমোক্রেটিক পার্টির কুইন্স ডিস্ট্রিক্ট লিডার অ্যাট লার্জ অ্যাটর্নি মঈন চৌধুরীর কাছে এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, নিউইয়র্কে বাংলাদেশিদের আরো সময় লাগবে। কারণ নিউইয়র্ক সিটিতেই ৩৬০টি ভাষায় মানুষ কথা বলেন। তবে এজন্য মূলধারায় মনযোগী দিতে হবে বাংলাদেশি রাজনীতিকদের। তিনি বলেন, নিউইয়র্কের বাংলাদেশিরা বাংলাদেশি আওয়ামী লীগ ও বিএনপির রাজনীতি করে সময় ব্যয় করেন। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কমিউনিটির পিকনিকে যত অর্থ ব্যয় হয়, এই অর্থ যদি মূলধারার রাজনীতিতে ব্যয় হতো তাহলে সবাই ভালো অবস্থানে যেতে পারতেন। তবে ভবিষ্যতে বাংলাদেশিরা ভালো করবেন বলে আশাবাদী অ্যাটর্নি মঈন।