কমলা হ্যারিস ও ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রথম টিভি বিতর্ক ছিল উত্তেজনাপূর্ণ। একে অপরকে একচুল ছাড় দেননি কেউ।
এই টিভি বিতর্ককে বলা হচ্ছে ‘ফায়ারি ডিবেট’। ফিলাডেলফিয়ায় কমলা ও ট্রাম্প এবিসি টিভি চ্যানেল আয়োজিত বিতর্কের মুখোমুখি হয়ে একে অপরের বিরুদ্ধে সমানে অভিযোগ করলেন। যুক্তি-পাল্টা যুক্তি, অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগের মধ্য উঠে এল অর্থনীতি, গর্ভপাত, অভিবাসন, হামাস–ইসরায়েল যুদ্ধ, ক্যাপিটলের হিলে হামলা ও রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধ, কর ব্যবস্থার মতো বিষয়গুলো। দুজনেই দুজনই ‘মিথ্যাবাদী’ বললেন। ডয়েচে ভেলের প্রতিবেদন তুলে ধরা হলো নিচে–
অর্থনীতি, ধনী-গরিব নিয়ে বিতর্ক
কমলা হ্যারিস ভোটারদের বলেন, ‘আপনাদের জন্য ট্রাম্পের কোনো পরিকল্পনা নেই। ট্রাম্প শুধু ধনীদের জন্য কর ছাড় দেওয়া নিয়ে চিন্তিত। তিনি সুবিধাবাদী অর্থনীতির পক্ষে।’
জবাবে ট্রাম্প বলেন, ‘হ্যারিস হলেন খালি কলসি, যার ঢক্কানিনাদ বেশি। হ্যারিসের কোনো পরিকল্পনা নেই। তিনি বাইডেনের পরিকল্পনা পরিবেশন করে চলেছেন।’
হ্যারিসের অভিযোগ, ‘ট্রাম্প চীন ও অন্য দেশ থেকে আসা জিনিসের উপর কর বাড়াতে চান। এটা আসলে আমেরিকানদের উপর বিক্রয় কর বসানো। এর ফলে জিনিসের দাম বেড়ে যাবে।’ প্রতি মাসে সাধারণ মানুষের উপর কতটা বোঝা চাপবে সেটাও জানিয়েছেন তিনি।
ট্রাম্প বলেছেন, ওই করের অর্থ দিয়ে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের মানুষের কর কমাবেন। তার দাবি, ‘করের ফলে জিনিসের দাম বাড়বে না। বরং এই কর না থাকলে বেশি দামে জিনিস কিনতে হবে।’
এ সময় কমলার হ্যারিসের দাবি, ‘যুক্তরাষ্ট্রের মানুষের জন্য তিনি একটা আর্থিক নীতি নিয়ে চলছেন।’
ট্রাম্প পাল্টা অভিযোগ করে বলেন, ‘হ্যারিস পুলিশের জন্য অর্থ কমাতে চান, সকলের কাছ থেকে বন্দুক কেড়ে নিতে চান।’
কমলা বলেন, তার কাছে ও তার রানিংমেট টিম ওয়ালজের কাছে অনুমোদিত বন্দুক আছে। নিজের ব্যক্তিগত নিরাপত্তার জন্য তিনি বন্দুক রেখেছেন।
ইসরায়েল-ফিলিস্তিন নিয়ে
কমলা ও ট্রাম্প দুজনের কাছ থেকেই বিতর্কে জানতে চাওয়া হয়েছিল, তারা কীভাবে ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধ থামাবেন?
আগের অবস্থানের কথা আবার জানিয়ে কমলা হ্যারিস বলেন, ইসরায়েলের আত্মরক্ষার অধিকার আছে। গতবছর ৭ অক্টোবরে ইসরায়েলে ঢুকে হামাস ১ হাজার ২০০ মানুষকে হত্যা করেছিল। তিনি বলেন, এখন যুদ্ধ অবিলম্বে বন্ধ হওয়া দরকার। গাজায় সম্পূর্ণ যুদ্ধবিরতি প্রয়োজন। সেই সঙ্গে যাদের জিম্মি করে রাখা হয়েছে, তাদের মুক্তি দিতে হবে। কমলা হ্যারিস বলেছেন, ‘আমাদের দুই রাষ্ট্র (টু স্টেট) সমাধানের পথেই যেতে হবে। এর ফলে ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে।
ট্রাম্পের দাবি, তিনি প্রেসিডেন্ট থাকলে এ যুদ্ধ হতোই না। তাঁর অভিযোগ, কমলা ইসরায়েলকে ঘৃণা করেন। তিনি প্রেসিডেন্ট হলে দুই বছরের মধ্যে ইসরায়েল বলে কোনো দেশ থাকবে না।
ট্রাম্পের অভিযোগ, ‘কমলা আরবদেরও ঘৃণা করেন। আমি প্রেসিডেন্ট হলে দ্রুত এর সমাধান করে ফেলব।’
কমলা বারবার বলেন, তিনি এসব অভিযোগ অস্বীকার করছেন। তিনি ইসরায়েলের নিরাপত্তার অধিকার সমর্থন করেন। তার পাল্টা দাবি, বিশ্বনেতারা ট্রাম্পের কথায় হাসছেন।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ
ট্রাম্প দাবি করেন, ‘আমি এ যুদ্ধ বন্ধ করতে চাই। আমি মানুষের জীবন বাঁচাতে চাই। বাইডেন প্রশাসন ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসন হতে দিয়েছে।
আপনি কি চান, ইউক্রেন যুদ্ধে জিতুক? ট্রাম্প এ প্রশ্ন পাশ কাটিয়ে যান।
কমলার অভিযোগ, ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হলে তিনি পুতিনকে ইউক্রেন দখল করে নিতে দেবেন। কমলা বলেন, ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হলে পুতিন এতক্ষণে কিয়েভে বসে থাকতেন। তার নজর থাকত বাকি ইউরোপের দিকে। কমলা বলেন, ‘ইউরোপীয় নেতারাও চান না, ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হোন।’
ক্যাপিটল হিল নিয়ে যা হলো বিতর্ক
ট্রাম্প বলেন, ‘ক্যাপিটলের ঘটনার সঙ্গে আমার কোনো সম্পর্ক নেই। আমাকে ওরা একটা ভাষণ দিতে বলেছিল, এইটুকুই।’
তার সমর্থকেরা ক্যাপিটলে ঢোকার আগে ট্রাম্প ভাষণ দিয়েছিলেন। সেখানে তিনি বলেছিলেন, ‘ফাইট লাইক হেল'। তিনি সেসময় তার সমর্থকদের শান্তিপূর্ণভাবে ক্যাপিটলে যেতে বলেছিলেন।
ট্রাম্প এই কথা বলতে অস্বীকের করেন যে তিনি অনুতপ্ত। হ্যারিস বলেন, ‘মনে করে পাতা উল্টে দেখুন। ওইদিন কী হয়েছিল।’
গর্ভপাত নিয়ে
ট্রাম্পকে গর্ভপাত নিয়ে তার মতামত জানতে চাওয়া হয়। ট্রাম্প বলেন, ডেমোক্র্যাটরা চায় গর্ভধারণের নয় মাস পরেও গর্ভপাত করার অধিকার দিতে। তিনি চান, গর্ভপাতের বিষয়টি রাজ্যগুলো ঠিক করুক। তারা আইন করুক। ধর্ষণ বা কিছু ক্ষেত্রে তিনি গর্ভপাতের অধিকারের পক্ষে। ট্রাম্পের অভিযোগ, কিছু রাজ্যে শিশু জন্মানোর পরেও তাদের মারার ব্যবস্থা আছে।
সঞ্চালকেরা বলেন, কোনো রাজ্যেই এ ধরনের কোনো ব্যবস্থা নেই।
কমলা বলেছেন, ট্রাম্পের আমলে যে তিনজন সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি নিয়োগ করা হয়, তারাই দুই বছর আগে গর্ভপাত নিয়ে কেন্দ্রীয় স্তরে সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার বাতিল করেছেন।
শেষ মন্তব্য
কমলা বিতর্ক শেষ করেন এভাবে, ‘আমরা আর পেছনে ফিরে যেতে চাই না। আমরা সামনের দিকে তাকাতে চাই। আমরা নতুন পথে হাঁটতে চাই।’
ট্রাম্প বলেন, হ্যারিস ছিলেন বাইডেন প্রশাসনের অঙ্গ। তিনি মানুষকে চাকরি দিতে পারেননি, যুক্তরাষ্ট্রের সীমান্ত সমস্যার সমাধান করতে পারেননি। তার উচিত, এখনই সরে দাঁড়ানো।
টেলর সুইফটের সমর্থন পেয়েছেন কমলা হ্যারিস
পপ তারকা টেলর সুইফটের সমর্থন পেয়েছেন কমলা হ্যারিস। ইনস্ট্রাগ্রামে এক পোস্টে টেলর লিখেছেন, ‘আমি ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে কমলা হ্যারিস ও টিম ওয়ালজকে ভোট দেব।’
২৮ কোটি ৩০ লাখ অনুসারীর উদ্দেশে টেলর বলেন, ‘আমি কমলা হ্যারিসকে ভোট দেব। কারণ, তিনি অধিকারের জন্য লড়াই করে যাচ্ছেন। আমি মনে করি, তিনি তাঁর লক্ষ্যে অবিচল।