মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন ২০২৪ 

কমলা হ্যারিস কী ইতিহাস গড়ার পথে!

ডেস্ক রিপোর্ট
  ১০ অক্টোবর ২০২৪, ১৩:১৫

ভাইস প্রেসিডেন্ট ও ডেমোক্র্যাট দলীয় প্রেসিডেন্ট প্রার্থী কমলা হ্যারিস কি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়ে ইতিহাস গড়তে যাচ্ছেন? হ্যারিসের জন্ম একটি ইমিগ্র্যান্ট পরিবারে। মা শ্যামলা গোপালন একজন ভারতীয় এবং বাবা ডোনাল্ড হ্যারিস একজন জ্যামাইকান কৃষ্ণাঙ্গ। ফেব্রুয়ারি ১১, ২০০৯ সালে মা শ্যামলা গোপালনের মৃত্যু হয়েছে ক্লোন ক্যান্সারে। বাবা ডোনাল্ড হ্যারিস স্ট্যানফোর্ড ভার্সিটির সাবেক অধ্যাপক ও একজন অর্থনীতিবিদ।
বাবা ডোনাল্ড হ্যারিস ৮৬ বছর বয়সে দ্বিতীয় বিয়ে করে ওয়াশিংটন ডিসিতে বসবাস করছেন। মেয়ে কমলার সাথে বাবা ডোনাল্ড হ্যারিসের যে ধরণের সম্পর্ক থাকার কথা সেটা কিন্তু নেই। যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে কমলা হ্যারিসের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে বাবা ডোনাল্ড হ্যারিস অনুপস্থিত ছিলেন। কমলা হ্যারিসের জন্ম হয়েছে ১৯৬৪ সালে ২০ অক্টোবর ওকল্যান্ড, ক্যালিফোর্নিয়ায়। ২০২০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার আগে তিনি স্যানফ্রানসিসকোর ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নি ও পরে তিনবার স্টেট অব ক্যালিফোর্নিয়ার অ্যার্টনি জেনারেল নির্বাচিত হয়েছিলেন । এবার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দৌড়ে এগিয়ে রয়েছেন ভাইস প্রেসিডেন্ট কমালা হ্যারিস। মঙ্গলবার নতুন এক জরিপের ফলাফলে দেখা যাচ্ছে, সাবেক প্রেসিডেন্ট ও রিপাবলিকান প্রার্থী ডনাল্ড ট্রাম্প ভোটার সমর্থনে কমালার চেয়ে কয়েক কদম পিছিয়ে রয়েছেন।
এ খবর দিয়েছে অনলাইন এনডিটিভি। এতে বলা হয়, সিয়েনা কলেজ এবং নিউইয়র্ক টাইমস কর্তৃক পরিচালিত জরিপে কমালা হ্যারিস জনসমর্থন পেয়েছেন ৪৯ শতাংশ। অন্যদিকে রিপাবলিকান নেতা ট্রাম্পের পক্ষে জনসমর্থন পড়েছে ৪৬ শতাংশ। নিবন্ধিত ভোটাররা ট্রাম্পের চেয়ে কমালাকেই এগিয়ে রেখেছেন। তবে শক্তিশালী নেতৃত্বের ক্ষেত্রে ট্রাম্পকেই অগ্রাধিকার দিয়েছেন ভোটররা। গত মাসে প্রেসিডেন্সিয়াল বিতর্কের পর টাইমস এবং সিয়েনার জরিপে ৪৭ শতাংশ সমর্থন পেয়েছিলেন কমালা ও ট্রাম্প। উভয় জরিপের ফলাফলই রিয়েল ক্লিয়ার পলিটিক্স ডট কম এর ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে, যা ন্যাশনাল নির্বাচনের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। ফলাফলে দেখা যাচ্ছে ট্রাম্পের চেয়ে দুই পয়েন্ট বেশি পেয়ে এগিয়ে রয়েছেন কমালা। এখন নির্বাচনের ফলাফল নির্ধারণের সম্ভাবনা হিসাবে দেখা সাতটি নির্বাচনী রাজ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা কঠিনতর হচ্ছে।
তাদের মধ্যকার এই কাছাকাছি অবস্থান আগামী ৫ নভেম্বরের নির্বাচনে দুই প্রার্থীর মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের আভাস দিচ্ছে। চারদিনের এই জরিপ শেষ হয়েছে সোমবার। এতে দেখা গেছে, ট্রাম্প যিনি সেপ্টেম্বরের ২০-২৩ তারিখের রয়টার্স/ইপসোস জরিপে হ্যারিসের চেয়ে ছয় পয়েন্ট পেছনে ছিলেন, তাকে এবার ভোটাররা বেশি সমর্থন দিয়েছে বেশি কিছু অর্থনৈতিক বিষয়ের কারণে। তাছাড়া, দেশে থাকা অবৈধ অভিবাসীরা অপরাধের দিকে ঝুঁকে বলে ট্রাম্প যে মন্তব্য করেছিলেন, সেকারণেও কিছু ভোটার তার দিকে চলে গিয়ে থাকতে পারে। জরিপে ভোটাররা দেশের অর্থনৈতিক বিষয়গুলোকেই শীর্ষে রেখেছে এবং ৪৪ শতাংশ ভোটারই বলেছে ‘জীবযাত্রা ব্যয় সংকট’ নিয়ে ট্রাম্প বেশি ভাল কথা বলেছেন। আর হ্যারিস এ বিষয়ে ভাল করেছেন বলে মত দেয় ৩৮ শতাংশ ভোটার।
অর্থনৈতিক বিষয়গুলোর মধ্যে আমেরিকার পরবর্তী প্রেসিডেন্টকে যেটি মোকাবেলা করতে হবে তার মধ্যে জীবযাত্রা ব্যয় এর বিষয়টিকেই সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ মনে করেন ৭০ শতাংশ ভোটার।
চাকরি, কর এবং অর্থনৈতিক দিক থেকে ভালভাবে জীবনযাপন করার বিষয়গুলোতে ট্রাম্প ভোটারদের সমর্থন পাচ্ছেন বেশি। যদিও ধনী এবং সাধারণ আমেরিকানদের মধ্যকার ফারাকের বিষয়টি সামনে নিয়ে আসার ক্ষেত্রে ৪২ শতাংশ ভোটার হ্যারিসকেই বেশি ভাল মনে করেছে।যুক্তরাষ্ট্রে থাকা অবৈধ অভিবাসীরা অপরাধের দিকে ঝুঁকে এ প্রসঙ্গে নতুন জরিপে ৫৩ শতাংশ ভোটার ট্রাম্পের বক্তব্যকেই সমর্থন করেছে। আর সমর্থন করেনি ৪১ শতাংশ।অথচ এই একই প্রশ্নে গত মে মাসে ভোটারদের মধ্যে খুব কম ব্যবধানে বিভক্তি দেখা গিয়েছিল। ট্রাম্পের কথা সমর্থন করেছিল ৪৫ শতাংশ ভোটার। আর সমর্থন করেনি ৪৬ শতাংশ ভোটার।তবে হ্যারিস গত জুলাইয়ে নির্বাচনি দৌড়ে সামিল হওয়ার পর থেকে ট্রাম্পের চেয়ে জনসমর্থনে এগিয়েই থেকেছেন।
সর্বসাম্প্রতিক জরিপে নভেম্বরের নির্বাচনে ভোট দেওয়ার সম্ভাবনা যাদের সবচেয়ে বেশি, এমন ভোটারদের মধ্যে হ্যারিসকে ট্রাম্পের চেয়ে ২ শতাংশ পয়েন্টে এগিয়ে থাকতে দেখা গেছে। হ্যারিস পেয়েছেন ৪৭ শতাংশ সমর্থন আর ট্রাম্প পেয়েছেন ৪৫ শতাংশ সমর্থন। ভোটাররা ট্রাম্পের তুলনায় হ্যারিসকে মানসিকভাবে বেশি শক্ত-সমর্থ বলে মনে করে। নতুন জরিপে দেখা গেছে, ৫৫ শতাংশ ভোটারই বলেছে, হ্যারিস মানসিকভাবে চৌকস এবং চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে সক্ষম। আর ট্রাম্পের ক্ষেত্রে একই মত পোষণ করেছে মাত্র ৪৬ শতাংশ ভোটার।
কমলার জন্য প্রচারে নামছেন ওবামা
প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আর খুব বেশি দিন বাকি নেই। আগামী নভেম্বরের ৫ তারিখে ভোটযুদ্ধ। নির্বাচনকে সামনে রেখে তাই পিছিয়ে পড়তে চাইছেন না কোনো পক্ষই। দুই শিবিরই চেষ্টা করছে নিজ নিজ সর্বোচ্চটা দিয়ে ভোটারদের আকৃষ্ট করতে। আর এ রকম একটি সময়ে ঘোষণা এলো ডেমোক্র্যাটিক পার্টির প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী কমলা হ্যারিসের জন্য প্রচার কাজে খোদ নামছেন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। গত ৪ অক্টোবর ওয়াশিংটন পোস্টের বরাতে এ খবর জানা যায়। পুরো এক মাস কমলার পক্ষে প্রচারে দেখা যাবে ওবামাকে। তিনি অবশ্য নিজ সমর্থন আগেই দিয়েছিলেন। জুলাইয়েই কমলা হ্যারিস পেয়ে যান ওবামা দম্পতির আশীর্বাদ। তবে এবার আর শুধু মুখে নয়, ওবামা নামবেন সশরীরে। এর আগে গতবার জো বাইডেনের প্রচারেও মাঠে নামতে দেখা গিয়েছিল ওবামাকে।
নাম না প্রকাশের শর্তে এক সূত্র জ্যেষ্ঠ এক নির্বাচনি কর্মকর্তার বরাত দিয়ে জানান, ওবামা আগামী ১০ অক্টোবর পিটসবার্গ সফরের মধ্য দিয়ে নিজ কর্মসূচি শুরু করবেন।এর আগে আগস্টে ডেমোক্র্যাটিক ন্যাশনাল কনভেনশনে ওবামাকে কমলার পক্ষে কথা বলতে দেখা গিয়েছিল। সেবার ওবামা মার্কিনিদের উদ্দেশে বলেছিলেন, ‘আমেরিকা নতুন অধ্যায়ের জন্য প্রস্তুত। আমেরিকা আরো ভালো গল্পের জন্য প্রস্তুত। আমরা প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসের জন্য প্রস্তুত।’ বর্তমানে জনমত জরিপে রিপাবলিকান পার্টির প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী ও নির্বাচনি প্রতিদ্বন্দ্বী ডোনাল্ড ট্রাম্পের চেয়ে কয়েক পয়েন্টে এগিয়ে রয়েছেন কমলা হ্যারিস। তবে নির্বাচনে যে তাকে ট্রাম্পের পক্ষ থেকে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের মুখোমুখি হতে হবে, সে বিষয়টি এক রকম স্পষ্ট। আর তাই হয়তো দলীয় প্রার্থীর জন্য প্রচারে নামছেন ওবামা।
কমলাকে সমর্থন করে ফলোয়ার বেড়েছে টেইলর সুইফটের
কিছুদিন আগেই পপ তারকা টেইলর সুইফট নিশ্চিত করে জানিয়েছেন, তিনি দেশটির আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্র্যাট দলীয় প্রার্থী কমলা হ্যারিসকে ভোট দেবেন। আর এই ঘোষণা দেয়ার পর থেকেই হু হু করে বাড়ছে তার ফলোয়ারের সংখ্যা। গত ১০ সেপ্টেম্বর টেইলর সুইফট জানান, তিনি কমলাকে সমর্থন করবেন। এরপর থেকে গত ৩ অক্টোবর পর্যন্ত স্পটিফাইতে তার ফলোয়ার বেড়েছে ১.৮৫ মিলিয়ন। অ্যানালাইটিকস ফার্ম ‘চার্মেট্রিক’ জানিয়েছে এ তথ্য। স্পটিফাইতে ফলোয়ারের দিক দিয়ে শীর্ষে আছেন অরিজিৎ সিং। অরিজিতের ফলোয়ারের সংখ্যা ১২৩.২৯ মিলিয়ন। এরপরেই আছেন টেইলর সুইফট, দ্বিতীয় স্থানে। টেইলর সুইফটের মোট ফলোয়ারের সংখ্যা ১২২.৫৬ মিলিয়ন। তবে ফলোয়ার বাড়ার পাশাপাশি কিছু ফলোয়ার হারিয়েছেন সুইফট। ট্রাম্প সমর্থকদের কেউ কেউ আনফলো করেছেন গায়িকাকে। জানা গেছে, গত ১০ সেপ্টেম্বরের পরে ৩ শতাংশ ফলোয়ার কমেছে সুইফটের।