নিউইয়র্ক সিটি কেবল যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় ও জনবহুল সিটি নয়, বরং পৃথিবীর অন্যতম বেশি জনবহুল সিটিগুলোর একটি। শুধু জনসংখ্যার বিচারে বা আন্তর্জাতিক রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দু হওয়ার কারণেই যে নিউইয়র্ক বিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিটি তা নয়, আন্তর্জাতিক অর্থনীতিরও এটি গুরুত্বপূর্ণ সিটি।
নিউইয়র্ক সিটিকে বলা হয় অর্থনীতির ‘ওয়ার্ল্ড ক্যাপিট্যাল’ বা অর্থনীতির বিশ্ব রাজধানী। ওয়াল স্ট্রিট ফাইন্যান্সিয়াল ডিষ্ট্রিক্টে আমেরিকান শেয়ার মার্কেটের সূচকে সামান্য পরিবর্তন হলেই বিশ্ব অর্থনীতি হয় চাঙ্গা হয়ে উঠে অথবা অস্থিরতা দেখা যায়। এমন একটি সিটির বাসিন্দা হিসেবে বসবাসে যেমন আনন্দ আছে, তেমনি বসবাসের আনুষঙ্গিক বিষয়গুলো নিয়ে ঝামেলাও আছে। এসব ঝামেলার অন্যতম হলো বাড়ির মালিকানা বা বাড়ি ভাড়া নিয়ে অর্থনৈতিক টানাপোড়েনের মধ্যে থাকা।
যারা বিপুল বিত্তের মালিক অথবা যারা এই সিটিতে উচ্চ বেতনে কাজ করেন, বা ব্যবসা করে প্রচুর মুনাফা অর্জন করেন তাদের বাইরে প্রচুর বাসিন্দা আছেন যারা সীমিত আয় করেন। যাদের পরিচয় মধ্যম আয় বা স্বল্প আয়ের বাসিন্দা। তাদের অনেকে কোনোক্রমে তাদের আজীবনের সঞ্চয় দিয়ে হয়তো ছোট্ট একটি বাড়ি বা অ্যাপার্টমেন্টের মালিক হয়েছে, কিন্তু বর্ধিত ব্যয়ের কারণে, বা মর্টগেজ পরিশোধ করতে না পেরে বাড়ির মালিকানা রাখতে হিমসিম খাচ্ছেন। এর বাইরে নতুন করে বাড়ি কেনা কথা মাঝারি আয়ের খুব কম মানুষই চিন্তা করতে পারেন। যারা ভাড়া বাড়িতে থাকেন তাদের অবস্থা আরও বেশি শোচনীয়। নিউইয়র্ক সিটিতে কারণে অকারণে বাড়ি ভাড়া বৃদ্ধি পায়। বাড়ি মালিকরা সুযোগের সন্ধানে থাকেন যে কখন কোন অজুহাতে বাড়ি ভাড়া বৃদ্ধি করবেন।
ভাড়াটের আয় সীমাবদ্ধতা তাদের মাথাব্যথার কারণ নয়। তাদেরও সীমাবদ্ধতা থাকতে পারে। তাদেরকে মর্টগেজ পরিশোধ করতে হয়। বাড়ি সংস্কার করতে হয়, বীমার কিস্তি পরিশোধ করতে হয়। তারা সবকিছু চাপান ভাড়াটেদের ওপর। সম্প্রতি নিউইয়র্ক সিটির রেন্ট গাইডলাইনস বোর্ড প্রায় ১০ লাখ রেন্ট স্ট্যাবিলাইজড অ্যাপার্টমেন্টের ভাড়া বৃদ্ধি অনুমোদন করেছে। এই বোর্ড সিটির বাসিন্দাদের সাশ্রয় সংকট এবং নিউইয়র্কসহ দেশের অন্যান্য বড় বড় সিটিতে একই ধরনের সমস্যাকে যাচাই করে সিটির হাউজিং অথরিটির আর্থিক সংকটের বিষয়গুলো নিয়েও আলোচনা করে। বোর্ড এক বছরের লিজের ক্ষেত্রে ২.৭৫ শতাংশ এবং দুই বছরের লিজের ৫.২৫ শতাংশ ভাড়া বৃদ্ধি করেছে।
কিন্তু প্রাইভেট বাড়ি মালিকরা এটিকে সুযোগ হিসেবে গ্রহণ করে তাদের মর্জিমতো বাড়ি ভাড়া বৃদ্ধির সুযোগ নেবে এতে কোনো সন্দেহ নেই। সিটিবাসীর বৃহৎ অংশের আয় বৃদ্ধি পেল কিনা, তা কারও মাথাব্যথার কারণ নয়। বাড়ি ভাড়া তো একটি দিক, নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস থেকে শুরু করে সবকিছু এবং সকল সার্ভিসের মূল্য বেড়েছে। মানুষ কি করবে। মাথা গোঁজার ঠাঁই পেতে হিমসিম অনেকে প্রতিবছর নিউইয়র্ক সিটি ছেড়ে যেতে বাধ্য হচ্ছে, এমন খবর প্রায়শ দেখা যায়। বর্তমান ভাড়া বৃদ্ধিতে হয়তো এ সংখ্যা আরও বৃদ্ধি পাবে। জানা গেছে, নিউইয়র্ক সিটির জনসংখ্যার প্রায় এক-চতুর্থাংশ অ্যাপার্টমেন্ট রেন্ট স্ট্যাবিলাইজড। সিটিতে প্রতিযোগিতামূলক বাজারে বাড়িভাড়া আকাশচুম্বী হয়েছে এবং কারও জন্য নতুন অ্যাপার্টমেন্ট পাওয়া প্রায় অসাধ্য। সবকিছুর বিবেচনায় রেন্ট স্ট্যাবিলাইজড অ্যাপার্টমেন্ট ভাড়ায় পাওয়া অনেক মূল্য এক প্রাপ্তি।
সিটির বাড়ির প্রাপ্য ও ভাড়ার পরিমাণের ওপর সাম্প্রতিক এক সমীক্ষা অনুসারে, নিউইয়র্কে খোলা বাজারে মাঝারি ভাড়ার একটি অ্যাপার্টমেন্ট ২০২৩ সালে যেখানে ২,০০০ ডলার ভাড়ায় পাওয়া যেত, সে তুলনায় ২০২৩ সালে রেন্ট স্ট্যাবিলাইজড অ্যাপার্টমেন্টের গড় মাসিক ভাড়া ছিল প্রায় ১,৫০০ ডলার। কিন্তু ভাড়াটে এবং তাদের প্রবক্তাগণ সাম্প্রতিক বছরগুলোতে রেন্ট স্ট্যাবিলাইজড অ্যাপার্টমেন্টের জন্য ভাড়া স্থিরীকৃত অথবা হ্রাস করার জন্য সিটির প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। কারণ বহু নিউইয়র্কবাসী জীবনযাত্রার উচ্চ ব্যয়ের সাথে পাল্লা করছে। বাড়িমালিকরা তাদের পক্ষ থেকে, সম্পত্তি কর, বীমা, মর্টগেজ এবং রক্ষণাবেক্ষণের উচ্চব্যয়ে সহায়তা লাভের জন্য ভাড়াবৃদ্ধির আবেদন করেছিলেন।অতএব বোর্ড রেন্ট স্ট্যাবিলাইজড বাড়ির ভাড়া বাড়িয়ে মাঝারি আয় ও নিম্ন আয়ের মানুষের ওপর আরেক দফা আঘাত হেনেছে।