১৯৭১ সালের গ্রীষ্ম ও শরৎকালে, যুক্তরাষ্ট্র সরকার পাকিস্তানি সামরিক শাসনের পক্ষে অবস্থান নিয়ে পূর্ব বাংলার জনগণের ওপর চলমান গণহত্যাকে সমর্থন করেছিল। তবে, ১৯৭১ সালের জুলাই মাসে রিচার্ড টেলরের নেতৃত্বে একদল আমেরিকান এই নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানায়। তারা পূর্ব উপকূলের বন্দরে পাকিস্তানি শিপিং বন্ধ করতে সচেষ্ট হয় এবং মার্কিন নীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে ভূমিকা রাখে। “ব্লকেড” হলো ক্যানো ও কায়াকের একটি “অহিংস বহর”-এর গল্প, যারা মার্কিন সরকারের নীতিকে পাল্টানোর জন্য লড়াই করেছিল।
১৯৭১ সালের এই অবরোধের অন্যতম কৌশলবিদ রিচার্ড টেলর আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন। তিনি ছিলেন এক দূরদর্শী, সাহসী এবং ন্যায়বিচারের প্রতি আপসহীন যোদ্ধা। রিচার্ডের বিনয়, যোগ্য ব্যক্তিদের সম্মান প্রদানের ক্ষমতা এবং তার অটল নেতৃত্ব তাকে সবার প্রিয় করে তুলেছিল।
মুক্তিযুদ্ধের সময় রিচার্ড আমাদের অবিচ্ছেদ্য বন্ধু ছিলেন, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র থেকে। তার নেতৃত্বে পাকিস্তানে অস্ত্র চালান বন্ধে যে আন্দোলন গড়ে ওঠে, তা আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক স্থাপন করে। এই কিংবদন্তি যোদ্ধার স্মৃতি আমাদের হৃদয়ে চিরকাল বেঁচে থাকবে।
১৯৭১ সালের জুলাই মাসে, রিচার্ড টেলরের নেতৃত্বে একটি দল বল্টিমোর বন্দরে ক্যানো ও কায়াক নিয়ে “পদ্মা” নামের পাকিস্তানি জাহাজকে আটকানোর চেষ্টা করেছিল, যা সামরিক সরঞ্জাম বহন করছিল। যদিও এই অবরোধ পুরোপুরি সফল হয়নি, এটি পরবর্তী বৃহত্তর আন্দোলনের অনুপ্রেরণা হয়ে দাঁড়ায়। ফিলাডেলফিয়ার ডক শ্রমিকরাও প্রতিবাদে যোগ দিয়ে পাকিস্তানি জাহাজগুলো লোড করতে অস্বীকৃতি জানান। সবচেয়ে দুঃখজনক হলো, এই সমস্ত প্রচেষ্টা সত্ত্বেও, ১৯৭১ সালের নভেম্বর পর্যন্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানের প্রতি তাদের সমর্থন বজায় রাখে। তবে কয়েক মাসের ধারাবাহিক আন্দোলনের পর, অবশেষে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানে অস্ত্র রপ্তানি বন্ধ করে দেয়। নয় মাসের রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের পর, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ তার বহু আকাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতা অর্জন করে।