পাগলা মসজিদে দান বাক্সে মিলল এক বস্তা চিঠি

‘তুমি তাঁকে আমার করে দাও, যেন বিয়ে করতে পারি’

ডেস্ক রিপোর্ট
  ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:২৪

এক প্রেমিক চেয়েছেন, তিনি যাঁকে ভালোবাসেন, সেই ভালোবাসার মানুষের মনে যেন তাঁর জন্য প্রেম জাগে। তিনি যেন তাঁকে বিয়ে করতে পারেন। আরেক প্রেমিকা লিখেছেন, তিনি সৌদি আরবের এক পুরুষকে ভালোবাসেন। সৃষ্টিকর্তা যেন তাঁকে তাঁর করে দেন, তিনি যেন তাঁকে বিয়ে করে একসঙ্গে জীবন কাটাতে পারেন।
এমন অসংখ্য চিঠি পাওয়া গেছে কিশোরগঞ্জের পাগলা মসজিদের দানের সিন্দুক খুলে। সেখানে ২৯ বস্তা টাকার সঙ্গে এক বস্তা চিঠি পাওয়া গেছে। প্রিয়জনকে পেতে কিংবা মনের নানা বাসনা পূরণের জন্য তাঁরা চিঠি লিখেছেন।
সৌদির এক পুরুষকে ভালোবাসেন জানিয়ে এক নারী লিখেছেন, ‘হে মহান আল্লাহ, তুমি তাঁকে আমার করে দাও, যেন বিয়ে করতে পারি। (সুম্মা আমিন)। হে আমার রব, তুমি আমাকে খালি হাতে ফিরিয়ে দিও না। হে রব, তুমি আমাকে নবীর দেশের পবিত্র মাটিতে জন্মগ্রহণ করার সৌভাগ্য দিয়েছ, আমি যেন আবার সেই সৌভাগ্য নিয়ে তোমার পবিত্র মাটিতে মৃত্যুবরণ করতে পারি। (আমিন)। আমি যেন পড়ালেখায় ভালো হতে পারি, আমার পরিবারে যেন শান্তি বয়ে আসে। (আমিন)। আমি যেন হালাল রুজি-রোজগার করতে পারি। (আমিন)। হে রব, হে মহান আল্লাহ, তোমার কাছে দুই হাত তুলে চাইছি তুমি আমাকে মক্কার উত্তম, দ্বিনি, সুদর্শন লোকের সঙ্গে বিয়ে করিয়ে দাও।’
কিশোরগঞ্জ সদরের এক পুরুষ নিজের নাম সংক্ষেপে ‘এম’ উল্লেখ করে বাজিতপুরের এক তরুণীর নাম ‘টি’ উল্লেখ করে চিঠি লিখেছেন। তিনি লিখেছেন, ‘আল্লাহ আমি তোমার এক বান্দিকে আমার জীবনের থেকে বেশি ভালোবেসে ফেলেছি। আল্লাহ, আমি তাঁকে সঙ্গে নিয়ে তোমার এবাদত করতে চাই। সে যদি আমার নসিবে থাকে, তাহলে তোমার রহমতের দ্বারা তাঁকে আমার সঙ্গে মিলিয়ে দাও। সে যদি আমার নসিবে নাও থাকে, তাহলে তুমি তাঁকে আমার নসিব করে দাও। আল্লাহ তুমি তো সবার মন পড়তে পারো, তুমি ওর মনে আমার জন্য ভালোবাসা সৃষ্টি করে দাও। আল্লাহ, তুমি তাঁকে আমার সহধর্মিণী করে দাও। আল্লাহ, তোমার পরে যদি কাউকে ভালোবেসে থাকি, তাহলে সেটা ওকে।’
মসজিদ কমিটির প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. শওকত উদ্দিন ভূঁইয়া বলেন, প্রতিবারই সিন্দুক খোলার সময় অনেক চিঠি পাওয়া যায়। তবে অন্যবারের তুলনায় এবার সংখ্যাটা বেশি। ২৯ বস্তা টাকার সঙ্গে প্রায় এক বস্তা চিঠি পাওয়া গেছে। এমনিতেই সিন্দুক ঠাসাঠাসি থাকে। সে জন্য আগের ৯ সিন্দুকের জায়গায় এবার আরও দুটি সিন্দুক বাড়িয়ে ১১টি করা হয়েছে। কিন্তু এসব চিঠির কারণে জায়গা হয় না। অনেকে সিন্দুকে টাকা দিতে পারেন না। এসব অহেতুক চিঠির কারণে কর্তৃপক্ষ অনেকটা বিরক্ত। কেউ যাতে এসব চিঠি মসজিদের দানবাক্সে না ফেলেন, সে জন্য তিনি সবার প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন।
টাকা ও চিঠি ছাড়াও পাগলা মসজিদের সিন্দুক খুলে স্বর্ণালংকার ও বৈদেশিক মুদ্রা পাওয়া যায়। এ ছাড়া অনেকে তাঁর মুরগির দেওয়া প্রথম ডিম, গাছের প্রথম লাউ, প্রথম নারিকেল, অল্প মরিচ, মুরগি-গরু-ছাগলসহ নানা কিছু পাগলা মসজিদে দান করেন। এখানে খাস নিয়তে কোনো কিছু চাইলে মনোবাসনা পূরণ হয়, সেই বিশ্বাস তাদের মনে।
গতকাল শনিবার পাগলা মসজিদের দানের সিন্দুক খুলে এযাবৎকালের সর্বোচ্চ ৮ কোটি ২১ লাখ ৩৪ হাজার ৩০৪ টাকা পাওয়া গেছে।