আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা হচ্ছে না। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানকারীদের জোরালো দাবি আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার। অন্তর্বর্তী সরকারও দৃশ্যত এর বিরুদ্ধে নয়। এ ক্ষেত্রে কিছুটা সময় নেওয়ার পক্ষে। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস নিজেই বলেছেন, জুলাই-আগস্টের ছাত্র-জনতা আন্দোলনে হত্যাকাণ্ডের জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিচার হওয়ার পরই আওয়ামী লীগকে স্বাগত জানানো হবে।
প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যেই স্পষ্ট, আওয়ামী লীগ ও এর নেত্রী শেখ হাসিনার মতো কর্তৃত্ববাদী, স্বৈরাচারী আচরণের পক্ষে নন তিনি। বিএনপি-জামায়াতসহ রাজনৈতিক বিরুদ্ধবাদীদের অস্বীকার করে তাদের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের তাগিদ বোধ করেননি শেখ হাসিনা। কেবল বিরোধী পক্ষকেই নয়, নিজ দলের অভিজ্ঞ, প্রবীণ নেতাদের প্রতিও তার ন্যূনতম সম্মান, শ্রদ্ধা প্রদর্শনের নজির কম। সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা দলের ও ১৪ দলীয় জোটের শীর্ষ নেতাদের ১৫ বারও ডাকেননি। সব মিলিয়ে তাদের ডেকে আলোচনা করেন মোট ১২ বার। শেষ বৈঠক করেন সরকার পতনের কয়েক দিন আগে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে অনিবার্য হয়ে ওঠা পতন ঠেকানোর জন্য। আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, রাশেদ খান মেনন, হাসানুল হক ইনু, দিলীপ বড়ুয়া, শরীফ নুরুল আম্বিয়াসহ অভিজ্ঞ নেতাদের নিয়ে দেশের রাজনৈতিক পর্যালোচনা, সিদ্ধান্ত গ্রহণে তাদের মতামত, পরামর্শ নেননি। একমাত্র শেষ বৈঠকে পতন ঠেকাতে সেনা মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় সবার পরামর্শে। ১৫ বছরে জাতীয়, আঞ্চলিক, আন্তর্জাতিক সকল বিষয়েই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এককভাবে শেখ হাসিনা। প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস সক্রিয় রাজনীতিতে অভিজ্ঞতাসম্পন্ন না হলেও রাজনৈতিক ও জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়াবলিতে কোনো সিদ্ধান্ত এককভাবে নিয়ে চাপিয়ে দেওয়ার নীতিতে বিশ্বাসী নন তিনি। একচ্ছত্র এখতিয়ার থাকা সত্ত্বেও তিনি সে পথে হাঁটছেন না। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের লাগাতার দুঃশাসন, দুর্বিনীত আচরণ, নির্যাতন, নিষ্পেষণমূলক কার্যকলাপে অতিষ্ঠ বিরোধীপক্ষীয় নেতা-কর্মী-সমর্থকসহ দেশের সাধারণ মানুষ। ড. ইউনূস ও তার সরকার তার পরও দেশের কোথাও কাউকে প্রতিহিংসামূলক আচরণ করার সুযোগ দেয়নি। ফ্যাসিস্ট হিসেবে চিহ্নিত আওয়ামী লীগের নেত্রী ও নেতাদের বিচারের মুখোমুখি করেছে সরকার।
বৈষম্যবিরোধীরা কেবল আওয়ামী লীগকেই নয়, তার সহযোগী, অনুগামী অন্যান্য রাজনৈতিক দলকেও বাইরে রেখে নির্বাচন সম্পন্ন করার পক্ষে। ভারত, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্রসহ গণতান্ত্রিক বিশ্বও কি এই পক্ষে? বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীদের দমিত করার জন্যই কি নির্বাহী আদেশে জামায়াতের মতো আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ না করে আদালতের ওপর নির্ভরতা বাড়ানো হয়েছে।
অন্তর্বর্তী সরকারের অন্যতম উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) সাখাওয়াত হোসেন বলেছেন, ২০২৬ সালের মাঝামাঝি জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে। তার পূর্ববর্তী সময়ে সংবিধান, নির্বাচনী ব্যবস্থাসহ জরুরি কিছু সংস্কারকাজ সম্পন্ন করা হবে।
আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জামায়াতসহ অপরাপর দলসমূহের অংশগ্রহণে দেশে যেসব জাতীয় নির্বাচন হয়েছিল, তার সবগুলোতেই অন্যতম বৃহত্তম রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগের আত্মপ্রকাশ ঘটেছিল। সেই দলের অংশগ্রহণহীন নির্বাচন দেশের ভোটার সাধারণ ও বিদেশিদের কাছে প্রশ্নবিদ্ধ হতেই পারে। যদিও বৈষম্যবিরোধীরা কেবল আওয়ামী লীগকেই নয়, তার সহযোগী, অনুগামী অন্যান্য রাজনৈতিক দলকেও বাইরে রেখে নির্বাচন সম্পন্ন করার পক্ষে। ভারত, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্রসহ গণতান্ত্রিক বিশ্বও কি এই পক্ষে? বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীদের দমিত করার জন্যই কি নির্বাহী আদেশে জামায়াতের মতো আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ না করে আদালতের ওপর নির্ভরতা বাড়ানো হয়েছে। ড. ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকার সংগঠনগতভাবে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার পথে যেতে আগ্রহী নয়। তার চেয়ে তারা এই সংগঠনের নেতৃত্বে যারা রয়েছেন, তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে অধিকতর আগ্রহী। আওয়ামী লীগের সভানেত্রী ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ক্ষমতাসীনদের প্রধান টার্গেট। সাবেক মন্ত্রী, এমপিদের কমপক্ষে দুই-তৃতীয়াংশকে তারা বিচারের মুখোমুখি করে শাস্তি বিধান করতে চায়। ক্ষমতায় থাকাকালে ব্যাপক অনিয়ম, দুর্নীতি, অনাচার, দেশে-বিদেশে অর্থ-সম্পদ অর্জন, পাচারসহ সুনির্দিষ্ট অভিযোগে তাদের বিচার করে নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণার প্রক্রিয়া চলছে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিচার ও শাস্তি নিশ্চিত করে তাকে দলের নেতৃত্ব, রাজনীতি ও নির্বাচনের বাইরে রাখার কর্মপরিকল্পনা নিয়েই তারা অগ্রসর হচ্ছে। কিন্তু নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তা সম্পন্ন করা কি সম্ভব? যদিও অন্তর্বর্তী সরকার ও বৈষম্যবিরোধীরা স্বল্প সময়ের মধ্যেই যাবতীয় আইনগত প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে চান।