ফ্যাক্ট-চেক

চিন্ময়ের গ্রেফতার বেআইনি- এমন কোনো মন্তব্য করেননি তুলসী গ্যাবার্ড

ডেস্ক রিপোর্ট
  ০৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৮:০৮

ইসকনের সাবেক নেতা ও বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে গত ২৫ নভেম্বর রাষ্ট্রদ্রোহের মামলায় ঢাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়। বর্তমানে তিনি চট্টগ্রাম কারাগারে। চিন্ময়কে গ্রেফতারের ঘটনাকে কেন্দ্র করে ফেসবুকে দাবি করা হচ্ছে, তাকে বেআইনিভাবে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদের সাবেক সদস্য তুলসী গ্যাবার্ড। সম্প্রতি তাকে যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী গোয়েন্দাপ্রধান হিসেবে মনোনীত করেছেন নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
বাংলাদেশি ফ্যাক্ট-চেকিং সংস্থা ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধানে দেখা যায়, চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের গ্রেফতার নিয়ে তুলসী গ্যাবার্ড কোনো মন্তব্য করেননি। তাই ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া মন্তব্যটি মিথ্যা হিসেবে সাব্যস্ত করছে ফ্যাক্টওয়াচ।
দাবিটির সত্যতা যাচাইয়ে তুলসী গ্যাবার্ডের ভেরিফায়েড এক্স (সাবেক টুইটার), ফেসবুক পেজ, ওয়েবসাইটে খুঁজে চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে নিয়ে তার কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড অনুসন্ধানে বাংলাদেশের বা আন্তর্জাতিক কোনো সংবাদমাধ্যমেও চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে নিয়ে তুলসী গ্যাবার্ড কোনো মন্তব্য করেছেন বলে তথ্য পাওয়া যায়নি।
পরে গত ৪ ডিসেম্বর বাংলাদেশের একটি শীর্ষস্থানীয় সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ও তুলসী গ্যাবার্ডের প্রসঙ্গ পাওয়া যায়। প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, গত ৩ ডিসেম্বর নিয়মিত প্রেস ব্রিফিংয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখ্য উপ-মুখপাত্র বেদান্ত প্যাটেল ধর্মীয় স্বাধীনতা ও মৌলিক মানবাধিকার নিয়ে কথা বলেন।
বাংলাদেশের হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর সহিসংতার বিষয়ে এক প্রশ্নে বেদান্ত প্যাটেল বলেন, প্রতিটি সরকার, যাদের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক রয়েছে তাদের সঙ্গে আমরা এ বিষয়ে একই অবস্থানে আছি; আমাদের অবস্থান স্পষ্ট- মৌলিক স্বাধীনতার প্রতি সম্মান জানাতে হবে; ধর্মীয় স্বাধীনতা ও মৌলিক মানবাধিকারের প্রতি সম্মান জানাতে হবে।
ব্রিফিংয়ে সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে নিয়ে আরেকটি প্রশ্ন করা হয়। চিন্ময় দাসকে ইসকন নেতা হিসেবে পরিচয় করিয়ে দিয়ে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মনোনীত জাতীয় নিরাপত্তা প্রধান তুলসী গ্যাবার্ডও ওই সংগঠনের সদস্য।
এরপর প্রশ্নকারী বলেন, চিন্ময় দাসকে বেআইনিভাবে গ্রেফতার ও জেলে পাঠানো হয়েছে এবং তার আইনজীবীকে পিটিয়ে হাসপাতালে পাঠানোর কারণে তার পক্ষে কেউ দাঁড়াতে রাজি হচ্ছেন না। এক্ষেত্রে আপনারা কি কোনো পদক্ষেপ নেবেন?

উত্তরে বেদান্ত প্যাটেল বলেন, এ ঘটনা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য আমার কাছে নেই। তবে যারা গ্রেফতার আছেন তারাও যাতে যথাযথ প্রতিনিধিত্ব দিতে সক্ষম হন এবং তাদের সঙ্গে মৌলিক স্বাধীনতা ও মানবাধিকার মেনে আচরণ করতে হবে, সে বিষয়ে আমরা জোর ও চাপ দিয়ে যাবো।
অর্থাৎ চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের গ্রেফতার নিয়ে তুলসী গ্যাবার্ড কোনো মন্তব্য করেননি। বরং যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের নিয়মিত প্রেস ব্রিফিংয়ে চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের গ্রেফতার প্রসঙ্গে প্রশ্ন করতে গিয়ে তুলসী গ্যাবার্ডকে আনা হয়। এই প্রশ্নের সূত্রেই পরে ফেসবুকে গুজব ছড়িয়ে পড়ে।
সার্বিক বিবেচনায় চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের গ্রেফতার নিয়ে তুলসী গ্যাবার্ডের মন্তব্য দাবিতে ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া পোস্টগুলোকে মিথ্যা হিসেবে সাব্যস্ত করছে।