প্রথম দেখায় যে কারও মনে হবে জলমহাল কিংবা বিলে মাছ ধরার উৎসব চলছে। কার আগে কে কত বেশি মাছ ধরতে পারে যেন তার প্রতিযোগিতা চলছে। এতে পিছিয়ে নেয় নারী-পুরুষ এমনকী শিশু-কিশোরাও।
অথচ এটি কোনো মাছ ধরার উৎসব নয়। দিনদুপুরে সরকারের ইজারা দেওয়া জলাশয় থেকে মাছ লুট করা হচ্ছে। স্থানীয় ১৫-২০ গ্রামের মানুষ মাছ ধরতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন। গত ছয় দিনে সুনামগঞ্জের দিরাই, শাল্লা এবং জামালগঞ্জ উপজেলার আটটি জলমহালের প্রায় ১০ কোটি টাকা মাছ লুট করা হয়েছে।
দিরাই উপজেলার বেতইর বিল। মঙ্গলবার (৪ মার্চ) রাতে বিলের ইজারাদার খবর পান বুধবার (৫ মার্চ) ভোরে তার বিলের মাছ লুটপাট করার জন্য প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। বিষয়টি ইজারাদার দিরাই পুলিশ ও উপজেলা প্রশাসনকে বিষয়টি অবগত করেন। পরে ভোর ৬টায় ওই বিলে অবস্থান নেয় দিরাই থানা পুলিশ , উপজেলা প্রশাসন ও সেনাবাহিনীর দুটি টিম। কিন্তু তাতে কোনোও লাভ হয়নি। শ্যামারচর, ললোয়ারচর, মাইতি, কার্তিকপুরসহ প্রায় ১৫ গ্রামের মানুষ একত্রিত হয়ে প্রশাসনের সামনেই জলমহালটির কোটি টাকার মাছ লুট করে নেন।
শুধু বেতইর জলমহাল নয়, গত ছয় দিনে দিরাইয়ের সতোয়া বিল, কামান বিল, মেঘনা বিল, আতনি বিল, লাইরা-দীঘা বিল, চনপইট্টা বিল, শাল্লার জোয়ারিয়া বিল, বাইল্লা বিল ও জামালগঞ্জের আয়লা ছাগাইয়া বিলসহ প্রায় আটটি বিলের মাছ স্থানীয় ১৫-২০ গ্রামের মানুষ লুট করেছেন।
বেতইর বিলে মাছ ধরতে আসা সাব্বির আহমেদ নামের একজন বলেন, ‘বিলগুলোতে অনেক ধরনের মাছ রয়েছে। যে যেমনে পারে মাছ ধরে বাড়ি নিয়ে যাচ্ছে।’
আলতাব আলী নামের আরেকজন বলেন, ‘বিল থেকে বড় একটা মাছ ধরেছি। বাসায় নিয়ে খাবো।’
এ বিষয়ে বেতইরা বিলের ইজারাদার বলেন, ‘আমাদের সব শেষ। প্রশাসনের সামনেই দিনদুপুরে আমাদের বিলের মাছ লুট করে নিয়ে যাচ্ছে। প্রশাসন আজ সক্রিয় ভূমিকা রাখলে আমার এক কোটি টাকার মাছ লুটপাট হতো না।’
জোয়ারিয়া বিলের ইজারাদার হিমাদ্রী সরকার বলেন, ‘জলমহাল লুট হওয়ায় আমি পথে বসে গেছি। দিনদুপুরে বিল থেকে জোর করে কোটি টাকার মাছ লুট করে নিয়েছে।’
এ বিষয়ে দিরাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘ভোর ৬টায় পুলিশ, উপজেলা নির্বাহী কর্মকতা ও সেনাবাহিনীর দুটি টিমসহ আমরা বেতইর বিলে অবস্থান করি, যাতে কেউ লুটপাট করতে না পারে। কিন্তু সেখানে এত পরিমাণ মানুষ যে আমরা তাদের সামাল দিতে পারিনি। তবে বিলমালিকরা অভিযোগ দিলে আমরা আইনগত ব্যবস্থা নেবো।’
শাল্লা থানার ওসি সফিকুল ইসলাম বলেন, হাজার হাজার লোক ভোরে বিলগুলোতে মাছ লুট করতে যায়। এসব বিল থানা থেকে অনেক দূরে। তাই পুলিশ যাওয়ার আগেই লোকজন চলে যায়।
সুনামগঞ্জের পুলিশ সুপার তাপস রঞ্জন ঘোষ বলেন, বিলগুলোতে লুটপাত বন্ধে পুলিশ সর্বোচ্চ ভূমিকা পালন করবে।
জেলা জলমহাল ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ও জেলা প্রশাসক ড. মোহাম্মদ ইলিয়াস মিয়া জাগো নিউজকে বললেন, বিষয়টি নিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে কথা বলবো।