রাজধানীর বনশ্রীতে ব্যবসায়ী আনোয়ার হোসেনকে (৪৫) গুলি করে সোনা ডাকাতির ঘটনায় ছয়জনকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। গ্রেফতাররা হলেন- মো. কাউছার (৩১), মো. ফরহাদ (৬৪), খলিলুর রহমান (৫০), মো. সুমন (৩০), দুলাল চৌধুরী (৪৩) ও আমিনুল (৩৫)।
গ্রেফতারদের মধ্যে ডাকাতির মূলহোতা ছিলেন কাউছার। খলিল, ফরহাদ ছিলেন ব্যাকআপ হিসেবে। রেকি পার্টিতে দায়িত্বে ছিলেন সুমন এবং দুলাল চৌধুরী। ডাকাতির ঘটনায় ৭.৬২ এমএম রিভলভার উদ্ধার করা হয়েছে। আগের রাতে বনশ্রীতেই তারা ডাকাতি সংক্রান্ত প্রস্তুতিমূলক বৈঠক করেন।
শনিবার (৮ মার্চ) ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী।
এর আগে গতকাল শুক্রবার রাজধানী ঢাকা, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, বরিশাল, পিরোজপুর ও মাদারীপুরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ধারাবাহিক অভিযান পরিচালনা করে অভিযুক্তদের গ্রেফতার করে ডিবি। এ সময় তাদের কাছ থেকে লুট করা সোনার মধ্যে ৪ ভরি ৯ আনা, বিক্রি করা সোনার মূল্যবাবদ নগদ দুই লাখ ৪৪ হাজার ৫০০ টাকা, ঘটনায় ব্যবহৃত একটি ৭.৬২ এমএম রিভলভার, ৪ রাউন্ড গুলি ও একটি মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়।
ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী বলেন, আনোয়ার হোসেন একজন স্বর্ণ ব্যবসায়ী। তিনি রামপুরা বনশ্রীর সি-ডি ব্লকের অ্যাভিনিউয়ে অলংকার জুয়েলার্স নামের জুয়েলারি দোকানের মালিক। প্রতিদিনের মতো তিনি ২৩ ফেব্রুয়ারি রাতে দোকান বন্ধ করে দোকানের ১৬০ ভরি সোনাসহ বাসায় ফিরছিলেন।
রাত পৌনে ১১টায় বনশ্রী ডি ব্লকের ৭ নম্বর রোডের ২০ নম্বর বাড়িতে ভাড়া বাসার গেটের সামনে পৌঁছামাত্র তিনটি মোটরসাইকেলে করে ৬-৭ জন দুষ্কৃতকারী আগ্নেয়াস্ত্র ও চাপাতিসহ তার গতিরোধ করেন। এরপর তার কাছে থাকা সোনা ও নগদ টাকা ছিনিয়ে নেওয়ার সময় আনোয়ার হোসেন বাধা দিলে দুষ্কৃতকারীরা তাকে চার-পাঁচ রাউন্ড গুলি করেন।
দুষ্কৃতকারীদের ছোড়া গুলি আনোয়ার হোসেনের বাম হাঁটু ও বাম পায়ের উরুতে লাগে। এ সময় দুষ্কৃতকারীরা তাদের হাতে থাকা চাপাতি দিয়ে আনোয়ার হোসেনের শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত করে গুরুতর জখম করেন। এছাড়া তার সঙ্গে থাকা সাইড ব্যাগে রাখা সোনা ও নগদ টাকা ছিনিয়ে নিয়ে পালিয়ে যান।
এরপর গুরুতর আহত আনোয়ার হোসেনকে রামপুরার স্থানীয় এক হাসপাতালে ও পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এ ঘটনায় ভুক্তভোগীর স্ত্রী বাদী হয়ে রামপুরা থানায় গত ২৪ ফেব্রুয়ারি এক মামলা করেন।
ওই ঘটনার পর থানা পুলিশের পাশাপাশি ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা বিভাগ ঘটনার রহস্য উদঘাটন ও জড়িতদের গ্রেফতারের জন্য কাজ শুরু করে। বিভিন্ন ডাকাতির ঘটনা বিশ্লেষণ, ঘটনাস্থলের সিসি ফুটেজ পর্যালোচনা ও তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে বরিশাল থেকে একজনকে গ্রেফতার করা হয়।
বনশ্রীতে ডাকাতি ঘটনার আগে ঘটনায় জড়িতরা একটি প্রস্তুতি বৈঠক করেন। প্রাপ্ত তথ্য ও তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় ডিবির চারটি দল নিরলস প্রচেষ্টার মাধ্যমে রাজধানী ঢাকা, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, বরিশাল, পিরোজপুর এবং মাদারীপুরে অভিযান চালিয়ে ডাকাতদলকে গ্রেফতার করে।
গ্রেফতার সবার বিরুদ্ধে একাধিক ডাকাতি মামলা রয়েছে, তাদের অপরাধের ধরনও একই রকম।
ডিএমপি কমিশনার সংবাদ সম্মেলনে বলেন, গত ২৩ ফেব্রুয়ারি রাত পৌনে ১১টার দিকে স্বর্ণ ব্যবসায়ী আনোয়ার হোসেন নিজ বাড়ির সামনে সশস্ত্র ডাকাতির সেই ঘটনা বিভিন্ন মিডিয়ায় এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যাপক প্রচার হয়। ভিডিও আকারে সোশ্যাল মিডিয়ায় আসে, সেটা অত্যন্ত ভীতিকর। মানুষের মধ্যে ব্যাপক নিরাপত্তাহীনতা সৃষ্টি করে।