নেত্রকোনা হাওরে মাছ লুট, দুই পক্ষের সংঘর্ষে আহত অর্ধশতাধিক

ডেস্ক রিপোর্ট
  ০৮ মার্চ ২০২৫, ২৩:১৯

নেত্রকোনার খালিয়াজুরীতে মাছ শিকারি ও স্থানীয়দের মাঝে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে অর্ধশতাধিক আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এ সময় শতাধিক অটোরিকশা, পিকআপ ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে ঘটনাস্থল থেকে ৪০ জনকে আটক করেছে পুলিশ।
শনিবার (৮ মার্চ) দুপুরে উপজেলার রসূলপুর গ্রামের পাশে ধনু নদীর ফেরিঘাটে এমন ঘটনা ঘটেছে।
স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, এক সপ্তাহ ধরে নেত্রকোনার হাওরাঞ্চল খালিয়াজুরী ও মদন উপজেলার বিভিন্ন ইাজারাকৃত জলমহালের মাছ লুটপাট করার মহোৎসব চালিয়েছে এক শ্রেণির লোকজন। পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী প্রতিদিন ময়মনসিংহের নান্দাইন, গৌরিপুর, ঈশ্বরগঞ্জ, কিশোরগঞ্জের তাড়াইল, নেত্রকোনা সদর, আটপাড়া, কেন্দুয়া, মদন ও খালিয়াজুরী উপজেলার হাজার হাজার লোকজন সমবেত হয়ে হাওরের ইজারাকৃত বিলের মাছ লুট করছে।
এক সপ্তাহে মদন উপজেলার নূরেশ্বর বিল, খালিয়াজুরী উপজেলার কির্তনকলা বিল, কারি বিল, উচাবাইদা বিল, হাইলা বিলসহ বেশ কয়েকটি ইজারাকৃত বিলের মাছ লুট করেছে মাছ শিকারিরা। প্রশাসনের লোকজনের বাঁধা উপেক্ষা করে প্রতিদিন এমন ঘটনা ঘটছে। যেসব বিলের মাছ লুট হয়েছে এগুলোর ইজারা মূল্য প্রায় চার কোটি টাকা।
উপজেলার ইজারাকৃত কাঠালজান ও মরাগাঙ্গের মাছ লুট করার জন্য ধনু নদীর পাড়ে জমায়েত হয় হাজারো লোকজন। পরে মাছ শিকারিরা রসূলপুর ফেরিঘাটের পাশে তাদের পরিবহনের শতাধিক পিকাপ, অটোরিকশা, সিএনজি, হেনট্রলি, মোটরসাইকেল রেখে ধনী নদী পাড় হওয়ার চেষ্টা করে। এ সময় ফেরিঘাটের লোকজনের সঙ্গে মাছ শিকারিদের বাগবিতণ্ডার এক পর্যায়ে সংঘর্ষ বাঁধে। সংঘর্ষে স্থানীয় লোকজন অংশ নিলে ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।
এ সময় উভয় পক্ষের অন্তত অর্ধশত লোকজন আহত হয়। পরে বিক্ষুব্ধ স্থানীয় লোকজন মাছ শিকারিদের পরিবহনের শতাধিক গাড়ি ভাঙচুর করে অগ্নিসংযোগ করে। খবর পেয়ে সেনাবাহিনী, পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। ফায়ার সার্ভিসের একটি ইউনিট গাড়িতে দেওয়ার আগুন নিয়ন্ত্রণ করে।
স্থানীয় লোজকনদের অভিযোগ, মাছ শিকারিরা ফেরি দিয়ে ধনু নদী পাড় হওয়ার সময় তাদের গালমন্দ করে। এ সময় তারা প্রতিবাদ করায় মারধর করতে থাকে। এ সময় সংঘর্ষ বাধলে হাজারো লোকজন রসূলপুর ফেরিঘাটের দোকানপাট ভাঙচুর ও লুটপাট করে। পরে রসূলপুর গ্রামে লোকজনের বসত বাড়িতে হামলা করলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাহিরে চলে যায়। পরে বিক্ষুব্ধ স্থানীয়রা মাছ শিকারিদের পরিবহনের শতাধিক গাড়ি ভাঙচুর করে আগুন ধরিয়ে দেন।
মদন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক নয়ন ঘোষ জানান, এখন পর্যন্ত হাসপাতালে ১৫-২০ জনকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। তারা মাছ শিকার করতে গিয়ে সংঘর্ষে আহত হয়েছেন। সব রোগী এক সঙ্গে আশায় নাম পরিচয় এখনো সঠিকভাবে নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। অনেক রোগী আবার প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে হাসপাতাল থেকে নিয়ে চলে যাচ্ছে।
খালিয়াজুরী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মকবুল হোসেন জানান, আমি ঘটনা স্থলে আছি। পরিস্থিতি বর্তমানে নিয়ন্ত্রণ রয়েছে। গাড়ি ভাঙচুর ও আহত সর্ম্পকে বিস্তারিত জানতে পুলিশ কাজ করছে। ঘটনাস্থল থেকে লোকজন আটক করে থানা নেওয়া হচ্ছে।