টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য জোয়াহেরুল ইসলামের বাসা ভাঙচুর, লুটপাট, দখল ও ১০ কোটি টাকা চাঁদা দাবির মামলায় ‘সমন্বয়ক’ পরিচয় দানকারী মারইয়াম মুকাদ্দাস মিষ্টিকে অবশেষে গ্রেপ্তার করছে পুলিশ। গতকাল রোববার রাতে টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালের সামনে থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তার মিষ্টি জেলার বাসাইল উপজেলার ফুলকী ইউনিয়নের জশিহাটী গ্রামের মাজহারুল ইসলামের মেয়ে। তার স্বামীর নাম শাহ আলমাস। তিনি টাঙ্গাইল শহরের আকুর টাকুর পাড়ায় ভাড়া বাসায় বসবাস করেন।
জানা গেছে, গত শনিবার দুপুরে সমন্বয়ক পরিচয়ে মানসিক ভারসাম্যহীনদের নিয়ে শহরের ছোট কালিবাড়ীতে অবস্থিত জোয়াহেরের ছয়তলা ভবনটি দখল করা হয়। বাড়ির তালা ভেঙে ১৭ জন মানসিক ভারসাম্যহীন লোকদের নিয়ে ভবনে প্রবেশ করেন। এতে জেলাজুড়ে আলোচনা-সমালোচনার সৃষ্টি হয়। পরে রাত ১০টার দিকে সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রুহুল আমিন শরিফের নেতৃত্বে সেনাবাহিনী ও পুলিশ যৌথভাবে অভিযান পরিচালনা করে মানসিক ভারসাম্যহীনদের সরিয়ে নেওয়া হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে মিষ্টিকে পুলিশি হেফাজতে নেওয়া হয়। পরে গভীর রাতে মুচলেকা দিয়ে থানা পুলিশের কাছ থেকে মুক্তি পান তিনি।
এ ঘটনায় জোয়াহেরুল ইসলামের স্ত্রী রওশন আরা বাদী হয়ে রোববার রাত ৮টার দিকে সদর থানায় মামলা করেন। মামলায় তিনি উল্লেখ করেন, আকুরটাকুর পাড়ায় আমার ছয়তলা ভবনের কলাপসিবল গেইটের ছয়টি তালা ভেঙে মিষ্টির নেতৃত্বে ৮-৯ জন পূর্বপরিকল্পিতভাবে ১৭ জন মানসিক ভারসাম্যহীন লোক নিয়ে ভেতরে প্রবেশ করে বাড়িটি দখল নেয়। এ সময় তারা ভেতরে লুটপাট চালায়। বাসার ভেতর থেকে তারা নগদ পাঁচ লাখ টাকা, ১০ ভরি স্বর্ণালংকার চুরি করে। এছাড়া প্রায় ৫০ লাখ টাকার আসবাবপত্র ভাঙচুর করে। এ বিষয়ে মিষ্টিকে জিজ্ঞাসা করলে সে ১০ কোটি টাকা চাঁদা দাবি করে। টাকা দিতে ব্যর্থ হলে বাড়িটি আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেওয়ার হুমকি দেয়।
টাঙ্গাইল সদর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) রুহুল আমিন শরিফ বলেন, মারইয়াম মুকাদ্দাস মিষ্টি নামে এক নারী সাবেক সংসদ সদস্যের বাসাটি অবৈধভাবে দখল করে মানসিক ভারসাম্যহীন ১৭ জন নারী-পুরষষকে আবাসনের চেষ্টা করে। পরে তাকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হেফাজতে নেওয়া হয়। বাড়িটি কয়েক ঘণ্টার মধ্যে অবৈধ দখলমুক্ত করা হয় এবং মানসিক ভারসাম্যহীন ব্যক্তিদের উদ্ধার করা হয়। তাদেরকে সন্তোষের বড়ইতলার পূর্বের বাসায় স্থানান্তর করা হয়। সরকারের ব্যবস্থাপনায় তাদের স্থায়ীভাবে পুনর্বাসনের প্রক্রিয়া গ্রহণ করা হবে।
তিনি আরও বলেন, অভিযুক্ত নারী অপরাধ করেছেন মর্মে মুচলেকা দিয়ে ক্ষমা প্রার্থনা করেন এবং ভবিষ্যতে এই ধরনের অপরাধ করবেন না মর্মে প্রত্যয়ন দেন। মুচলেকায় তার স্বামীসহ মোট ৫ জন সাক্ষী স্বাক্ষর করেন। মানবিক বিবেচনায় ভুল শুধরে নেওয়ার একটি সুযোগ দিতে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল। পরবর্তীতে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি হয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এরূপ পোস্ট করলে এবং সরকারি বা বেসরকারি সম্পদ ভাঙচুর বা দখলসহ অন্য কোনো অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত হলে আইনগভাবে অধিকতর কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
টাঙ্গাইল সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তানবীর আহমেদ জানান, মামলার প্রেক্ষিতে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সোমবার সকালে তাকে সাতদিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে পাঠানো হবে। তার সঙ্গে আরও যারা জড়িত রয়েছে শনাক্ত করে তাদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।