দেশে ফেরত আসা ছায়াসন্ত্রাসীদের সহায়তায় বাংলাদেশে নৈরাজ্য সৃষ্টির চেষ্টা করছে ভারতে আশ্রয় নেওয়া শীর্ষ সন্ত্রাসীরা। পুশ ইনের নামে এদের দেশে পাঠানো হচ্ছে বলে আশঙ্কা করছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এরই মধ্যে কুষ্টিয়ায় তিন ঘণ্টার শ্বাসরুদ্ধকর অভিযানে গ্রেপ্তার হয়েছে ঢাকার অপরাধজগতের কুখ্যাত শীর্ষ সন্ত্রাসী সুব্রত বাইন, মোল্লা মাসুদসহ চারজন।
মঙ্গলবার (২৭ মে) সকালে কুষ্টিয়া শহরের কালীশংকরপুর এলাকায় তিন ঘণ্টার এক শ্বাসরুদ্ধকর অভিযানে ঢাকার অপরাধজগতের ত্রাস, শীর্ষ সন্ত্রাসী সুব্রত বাইন ও মোল্লা মাসুদসহ ৪ সন্ত্রাসীকে গ্রেপ্তার করেছে সেনাবাহিনী। বাকি দুজন হলেন— বাইনের সহযোগী শুটার আরাফাত ও শুটার শরীফ।
অভিযানের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ভারতে আশ্রয় দেওয়া কয়েকজন বাংলাদেশি সন্ত্রাসীকে ছেড়ে দেয়। তারা এখন দেশে ফিরে এসে জোটবদ্ধ হয়ে রাজধানীসহ বিভিন্ন জায়গায় নৈরাজ্য চালাচ্ছে। এদের অনুগত চক্র রাজধানীতে চাঁদাবাজি, ছিনতাইসহ নানা অপরাধে যুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তার করা হলে এসব অপরাধ কমে আসবে, বলেন ওই কর্মকর্তা।’
কালীশংকরপুর শহরের বাসিন্দারা জানান, আজ মঙ্গলবার ভোর ৫টা থেকে সকাল ৮টা পর্যন্ত সোনার বাংলা মসজিদের পাশের একটি তিনতলা বাড়ি ঘিরেন রাখে সেনাবাহিনীর সদস্যরা। কমপক্ষে পাঁচটি গাড়ি অভিযানে অংশ নেয় এবং বাড়ির নিচতলা ও আশপাশের এলাকায় দীর্ঘ সময় ধরে তল্লাশি চালানো হয়। অভিযান চালানো বাড়িটি স্থানীয় মীর মহিউদ্দিনের মালিকানাধীন। বাড়ির দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলায় কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা মেস হিসেবে থাকেন।
সেই মেসের কয়েকজন শিক্ষার্থী বলেন, কয়েক দিন ধরে নিচতলায় এক দাড়িওয়ালা অপরিচিত ব্যক্তিকে থাকতে দেখা যাচ্ছিল। তিনি দিনে একবার শুধু খাওয়ার সময় বাইরে বের হতেন। অভিযানের সময় সেনাসদস্যরা শিক্ষার্থীদের নির্দিষ্ট দুটি কক্ষে বসিয়ে রাখেন এবং বারবার বলেন, ‘তোমাদের কোনো ভয় নেই।’
এক শিক্ষার্থী বলেন, সকাল ৮টার দিকে একটি কালো মাইক্রোবাস আসে। তখন সেনাসদস্যরা একজন দাড়িওয়ালা ব্যক্তিকে হাতকড়া পরিয়ে এবং অন্য এক যুবককে হাত বেঁধে গাড়িতে তোলেন। অভিযান শেষে একজন সেনা কর্মকর্তা শিক্ষার্থীদের বলেন, এখন বললে ভয় পাবে। পরে মিডিয়ার মাধ্যমে সব জানতে পারবে।
ঘটনাস্থলের পাশের বাসিন্দা রবিউল আলম বলেন, সকালবেলা দেখি সেনাবাহিনীর গাড়ি। পরে দেখি দুজনকে ধরে নিয়ে যাচ্ছে। আরেকজন জানান, জানালা দিয়ে দেখতে পান ভেতরে তল্লাশি চলছে এবং কিছুক্ষণ পর সেনাবাহিনীর সদস্যরা দুজনকে নিয়ে চলে যান। এদের একজনের মুখে দাড়ি আছে।
সরকারি একটি দায়িত্বশীল সূত্র বলেছে, সুব্রত বাইনকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের পর ঢাকায় নেওয়া হবে। এরপর সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে বিস্তারিত জানানো হবে। গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের ধারণা, রাজধানীতে সাম্প্রতিক যেসব সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ঘটেছে, তার পেছনে পলাতক শীর্ষ সন্ত্রাসীদের হাত রয়েছে। সূূত্র: আজকের পত্রিকা