বিএনপিসহ বিরোধীদের অবরোধ মোকাবিলায় রাজধানীতে কেন্দ্রীয়ভাবে শান্তি সমাবেশ নয়, থানা-ওয়ার্ডে শান্তিপূর্ণ অবস্থান ও মিছিল করবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। এর মাধ্যমে রাজধানীর একটি বা দুটি স্থানে নেতাকর্মীদের জড়ো করার বদলে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে বিভিন্ন এলাকায় সতর্ক অবস্থানে রাখার পরিকল্পনা নিয়েছে দলটি। নেতারা মনে করেন, অবরোধের প্রতিদিন শান্তি সমাবেশ করার দরকার নেই। বরং থানা-ওয়ার্ডে অবস্থান করে সাধারণ মানুষের আস্থা তৈরি করা জরুরি। যাতে মানুষ স্বাভাবিকভাবে ঘরের বাইরে বের হতে আশ্বস্ত হয়।
২৮ অক্টোবর বিএনপি ও সঙ্গী দলগুলো মহাসমাবেশ করে। বিপরীতে শান্তি ও উন্নয়ন সমাবেশ করে আওয়ামী লীগ। একই দিন পাল্টাপাল্টি কর্মসূচিকে ঘিরে উত্তেজনা ছড়িয়েছে রাজনীতিতে। পুলিশের সঙ্গে বিএনপির সংঘর্ষে রণক্ষেত্রে রূপ নেয় রাজপথ। প্রাণ গেছে পুলিশসহ সাধারণ মানুষেরও। পরদিন রবিবার (২৯ অক্টোবর) বিএনপি ও জামায়াত হরতাল পালন করলে তার বিরুদ্ধে শান্তি সমাবেশ করে আওয়ামী লীগ। কিন্তু মঙ্গল, বুধ ও বৃহস্পতিবার বিরোধীদের দেশব্যাপী সর্বাত্মক অবরোধের দিন থানা-ওয়ার্ডে সতর্ক অবস্থান কর্মসূচি পালন করে ক্ষমতাসীন দল। নতুন করে বিএনপির ডাকা রবি ও সোমবারের (৫ ও ৬ নভেম্বর) অবরোধের বিপরীতেও একই কর্মসূচি পালন করবে আওয়ামী লীগ। তবে এ কর্মসূচি আনুষ্ঠানিকভাবে এখনও জানানো হয়নি।
দলীয় সূত্র জানায়, মঙ্গল, বুধ ও বৃহস্পতিবারের অবরোধের দিন কেন্দ্রীয়ভাবে শান্তি সমাবেশ করেনি ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগ। রবি ও সোমবারের অবরোধের দিনও সমাবেশ করা হবে না। অবরোধের আগের তিন দিনের মতো এই দুই দিনও থানা-ওয়ার্ডে সতর্ক অবস্থান কর্মসূচি ও মিছিল করবেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। কেন্দ্রীয় নেতারা মহানগর নেতাদের এবং মহানগর নেতারা থানা ও ওয়ার্ড নেতাদের এমন নির্দেশনা দিয়েছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমাদের নতুন কোনও কর্মসূচি নেই। আগের কর্মসূচিই বহাল রয়েছে। বিএনপির অবরোধের দিন থানা ও ওয়ার্ডে আমাদের নেতাকর্মীদের সতর্ক অবস্থান অব্যাহত থাকবে। আমরা জনগণের পাশে আছি এবং থাকবো। আমরা মানুষকে আস্থাশীল করতে চাই যে আওয়ামী লীগ তাদের পাশে রয়েছে, তাদের জানমালের ক্ষতি হওয়ার ভয় নেই।’
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াতের ‘সন্ত্রাস, নাশকতা ও নৈরাজ্যের প্রতিবাদে’ দেশব্যাপী আওয়ামী লীগের ‘শান্তি ও উন্নয়ন সমাবেশ’ অব্যাহত থাকবে বলে ৩০ অক্টোবর দলটির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছিল। ওই দিন দলের এক যৌথসভায় আওয়ামী লীগ ও সব সহযোগী সংগঠনের জেলা, মহানগর, উপজেলা, থানা, পৌর শাখাকে ব্যাপকভাবে এই কর্মসূচি পালনের জন্য সাংগঠনিক নির্দেশনা দিয়েছিলেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
কেন্দ্র থেকে শান্তি ও উন্নয়ন সমাবেশ অব্যাহত রাখার নির্দেশনা দেওয়ার পরও ঢাকায় কেন বিরোধীদের অবরোধ কর্মসূচির বিপরীতে সমাবেশ হচ্ছে না—জানতে চাইলে শেখ বজলুর রহমান বলেন, ‘মঞ্চ করে কোথাও একটি সমাবেশ করলে সব নেতাকর্মী সেখানে জড়ো হবেন। ঢাকার বাকি এলাকা ফাঁকা হয়ে পড়বে। এই সুযোগে যেকোনও এলাকায় ঝামেলা পাকাতে পারে বিএনপির নেতাকর্মীরা। সে কারণে কেন্দ্রীয়ভাবে সমাবেশ না করে প্রতিটি এলাকায়, থানা-ওয়ার্ডে আমরা সতর্ক অবস্থান নিচ্ছি। রবি ও সোমবার বিএনপির ডাকা অবরোধের দিনেও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা সতর্ক অবস্থানে থাকবে।’
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহমেদ মন্নাফী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বিএনপির অবরোধের তিন দিন আমরা কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে অবস্থান করেছি। রবি ও সোমবারের অবরোধের সময়ও আমরা থাকবো রাজপথে। প্রতিটি থানা ও ওয়ার্ডে নেতাকর্মীরা সতর্ক অবস্থানে আছেন। প্রতিদিন তো আর সমাবেশ করা যায় না। আমরা বিরামহীনভাবে কর্মসূচির মধ্য দিয়ে যাচ্ছি।’
এদিকে, বৃহস্পতিবার (২ নভেম্বর) দুপুরে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে জরুরি সভা করেছে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও ঢাকা দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সমন্বয়ক মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা।
এদিন বিকালে মানিক মিয়া এভিনিউতে সেচ ভবনের অডিটোরিয়ামে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের এক প্রতিনিধি সভা হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও ঢাকা উত্তরের সমন্বয়ক জাহাঙ্গীর কবির নানক, মির্জা আজম ও ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা।
ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের সভা দুটিতেই থানা, ওয়ার্ড ও ইউনিয়নের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকরা উপস্থিত ছিলেন। সভায় থানা ও ওয়ার্ডভিত্তিক নেতাকর্মীদের সতর্ক অবস্থানে থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তবে আগামী ৪ নভেম্বর মেট্রোরেলের আগারগাঁও থেকে মতিঝিল অংশ উদ্বোধন উপলক্ষে আরামবাগে ঢাকা বিভাগীয় জনসভা করবে আওয়ামী লীগ। দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা ওই জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য দেবেন। ৪ তারিখের এই কর্মসূচি সফল করতে প্রস্তুতির বিষয়টি নিয়েও বৃহস্পতিবারের সভায় বিশেষভাবে আলোচনা করা হয়।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, ‘আগামী নির্বাচন পর্যন্ত নেতাকর্মীদের মাঠে থাকার নির্দেশ দিয়েছি। আমাদের নেতাকর্মীরা সতর্ক অবস্থানে মাঠে রয়েছেন। আগামী ৪ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জনসভা হবে আরামবাগে। সেটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ জনসভায় ১০ লাখ লোক জমায়েত করতে আমরা ব্যাপক প্রস্তুতি নিচ্ছি। সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে জনসভায় হাজির হতে হবে।’
সূত্রমতে, ৩ নভেম্বর জেল হত্যা দিবসের কর্মসূচি পালন করবে আওয়ামী লীগ। পরদিন আরামবাগে জনসভা হবে। এ কারণে বিএনপি নতুন করে আরও দুই দিনের অবরোধের কর্মসূচি ঘোষণা করলেও নতুন কোনও কর্মসূচি দেয়নি আওয়ামী লীগ। দলটি ৪ নভেম্বরের জনসভায় বড় ধরনের জমায়েতের পরিকল্পনা নিয়ে ব্যস্ত সময় পারছে। ঢাকার প্রতিটি থানা এবং ঢাকার পার্শ্ববর্তী জেলাগুলোর নেতাদের সর্বোচ্চ সংখ্যক কর্মী-সমর্থক নিয়ে জনসভায় আসার নির্দেশ দিয়েছেন নেতারা।