সংবিধান ও আইন অনুযায়ী বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচন দেখতে চায় চীন সরকার। এতে বাইরের কারও হস্তক্ষেপ তারা আশা করে না।
চীন সরকারও অন্য দেশের নির্বাচন হস্তক্ষেপ করে না।
বৃহস্পতিবার (৯ নভেম্বর) রাজধানীর একটি হোটেলে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন ঢাকায় নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন। বিআরআই’র ১০ বছর: পরবর্তী সোনালী দশকের সূচনা শীর্ষক সেমিনারে তিনি অংশ নিয়েছিলেন। সেমিনারটি যৌথভাবে আয়োজন করে ডিপ্লোম্যাটিক করেসপন্ডেন্ট অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ (ডিকাব) ও ঢাকার চীনা দূতাবাস।
অনুষ্ঠানে চীনা রাষ্ট্রদূত বলেন, নির্বাচন বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়। বাংলাদেশের নির্বাচনের বিষয়ে বাংলাদেশিরাই সিদ্ধান্ত নেবে। চীনের প্রত্যাশা, সব অংশীদার মিলে স্থিতিশীলতা বজায় রাখবে। এবং বাংলাদেশ জানে কী ধরনের নির্বাচন প্রয়োজন।
এ সময় নির্বাচনের পরও বাংলাদেশে স্থিতিশীলতা দেখতে চায় চীন, কথাটি উল্লেখ করেন ইয়াও ওয়েন। এর আগে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সংলাপের বিষয়ে করা এক প্রশ্নের জবাব দেন রাষ্ট্রদূত। তিনি বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোই কেবল এ বিষয়ে বলতে পারবে। চীন বাংলাদেশের সমাজে স্থিতিশীলতা চায়।
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে রাষ্ট্রদূত বলেন, চীন, বাংলাদেশ, মিয়ানমার মিলে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরুর চেষ্টা করছে। রোহিঙ্গারা এ দেশে অতিথি হিসেবে এসেছে। তাদের প্রত্যাবাসনে আন্তর্জাতিক সমর্থনও প্রয়োজন। চীন দেখতে পাচ্ছে, অনেকেই রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন চায় না।
অনুষ্ঠানে সিইএবি সভাপতি কে চ্যাংলিয়াং বলেন, বাংলাদেশের অনেক বৃহৎ প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে চীন। আগামী দিনে আরও প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে। স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে পাশে থাকবে চীন।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন ডিকাবের সভাপতি রেজাউল করিম লোটাস ও সাধারণ সম্পাদক ইমরুল কায়েস।
রিজার্ভ সংকট মোকাবিলায় সহযোগিতা দিতে আগ্রহী চীন
ঢাকায় নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন বলেছেন, রিজার্ভ সংকট মোকাবিলায় বাংলাদেশ সহযোগিতা চাইলে চীন পাশে থাকবে।
অনুষ্ঠানে চীনা রাষ্ট্রদূত বলেন, রিজার্ভের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে এখনও ভালো অবস্থানে আছে। বর্তমানে রিজার্ভ নিয়ে যে সংকটের কথা বলা হচ্ছে, এটা থেকে বাংলাদেশ সহজেই উত্তরণ হতে পারবে। আর বাংলাদেশ যদি রিজার্ভের ক্ষেত্রে সহযোগিতা চায় চীন প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করতে প্রস্তুত থাকবে। বাংলাদেশের পাশে থাকবে চীন।
বাংলাদেশ-চীনের মধ্যে বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে দুই দেশের সংশ্লিষ্টরা কাজ করছেন বলে জানান ইয়াও ওয়েন। রাষ্ট্রদূত বলেন, দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে কাজ চলমান আছে। এক্ষেত্রে মুক্ত বাণিজ্য অর্থনীতি সংক্রান্ত নানাবিধ কাযক্রম চলমান রয়েছে। আশা করা হচ্ছে, ২০২৬ সালের মধ্যে চীন ও বাংলাদেশ মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি সম্পাদন করতে পারবে। এটা সম্পন্ন হলে বাণিজ্য ঘাটতি কমে আসবে।
ফিলিস্তিন ইস্যুতে চীনা রাষ্ট্রদূত বলেন, চীন শান্তি, ন্যায়বিচার, আন্তর্জাতিক আইন, বিশ্বের সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশের অভিন্ন আকাঙ্ক্ষার পক্ষে। আমরা বেসামরিক নাগরিকদের বিরুদ্ধে সমস্ত সহিংসতা এবং আক্রমণের নিন্দা জানাই। আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে এমন সমস্ত কাজের বিরোধিতা করি। আমরা বিশ্বাস করি যে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব যুদ্ধ বন্ধ করার জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা করতে হবে। এ পরিস্থিতির অবনতি এড়াতে আন্তর্জাতিক মানবিক আইন মেনে চলা, বেসামরিক নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা, যত দ্রুত সম্ভব মানবিক সহায়তা ও উদ্ধারের পথ উন্মুক্ত করা অপরিহার্য। আমরা প্রাসঙ্গিক দেশগুলোকে শান্ত থাকা ও সংযম অনুশীলনের আহ্বান জানাই।
তিনি আরও বলেন, ফিলিস্তিন সমস্যার সমাধানে জাতিসংঘকে যথাযথ ভূমিকা পালন করতে হবে। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদকে এর জন্য গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করতে হবে। যত দ্রুত সম্ভব আন্তর্জাতিক ঐকমত্য গড়ে তুলতে হবে। এ লক্ষ্যে বাস্তব ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
এতে আরও বক্তব্য রাখেন সিইএবির প্রেসিডেন্ট কে চেংলিয়াং, ডিপ্লোম্যাটিক করেসপন্ডেন্ট অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ-ডিকাবের সভাপতি রেজাউল করিম লোটাস ও সাধারণ সম্পাদক ইমরুল কায়েস।