সুনামগঞ্জের ২৫০ শ্যয্যা বিশিষ্ট সদর হাসপাতাল। দুর্গম হাওর থেকে আসা রোগীদের প্রথম ও শেষ ভরসা এটি। রোগীদের যেন সিলেটে কম যেতে হয় সেজন্যই ২০২৩ সালে এই হাসপাতালে ২ কোটি ৪৬ লাখ ৫৫ হাজার টাকা ব্যয়ে ১০ শয্যার আইসিইউ ইউনিট স্থাপন করা হয়।
ওই বছরের ২১ মার্চ প্রয়োজনীয় শয্যা, সরঞ্জাম, যন্ত্রপাতি বুঝে পেয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। অথচ লোকবলের অভাবে আইসিইউ চালু করা যায়নি আজও। সেইসঙ্গে হাসপাতালের ডাক্তারসহ লোকবল কম ও তদারকির অভাবে হাসপাতাল নিজেই যেন রোগীতে পরিণত হয়েছে। হাসপাতালে গেলে চিকিৎসার পরিবর্তে ভোগান্তি পোহাতে হয় জেলার ২৬ লাখ মানুষকে।
হাসপাতালের দেওয়া তথ্যমতে, আইসিইউ বিভাগ চালু করতে হলে তিনজন চিকিৎসক এবং তিনজন অ্যানেস্থেশিয়ান লাগবে। এছাড়া আরও কয়েকজন সহযোগী কর্মীর প্রয়োজন। আইসিইউ চালু করতে প্রয়োজনীয় লোকবলের জন্য একাধিকবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কাছে চিঠি দিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। একইসঙ্গে আইসিইউতে প্রয়োজনীয় কিছু সরঞ্জামের চাহিদাও পাঠানো হয়। কিন্তু চিকিৎসক বা সরঞ্জাম পাওয়া যায়নি। যার ফলে আড়াই বছর ধরে আইসিইউ বিভাগ চালু করা সম্ভব হয়নি।
এদিকে হাসপাতালে বিভিন্ন পর্যায়ে ৬৬ জন চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও আছেন মাত্র ৩১ জন। শূন্য রয়েছে ৩৫ জন চিকিৎসকের পদ। ২৬১ জন নার্সের বিপরীতে আছেন ১৪১ জন। শূন্য রয়েছে ১২০টি নার্সের পদ।
সরেজমিনে সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিতে এসে হাসপাতালের অব্যবস্থাপনায় হয়রানির শিকার হচ্ছেন রোগীরা। আবার যারা একটু জটিল সমস্যা নিয়ে আসছেন তাদের দ্রুত সিলেটে পাঠানো হচ্ছে।
সুনামগঞ্জের স্থানীয় বাসিন্দা অনিক মিয়া বলেন, জেলা সদর হাসপাতালে যে পরিমাণ চিকিৎসা সেবা পাওয়ার কথা এই অঞ্চলের মানুষ সেটা পাচ্ছে না। দ্রুত হাসপাতালের আইসিইউ সেবাসহ সকল সেবা চালুর দাবি জানাচ্ছি।
আমবাড়ি থেকে আসা মমতা বেগম বলেন, আমার স্বামীর বুকে ব্যথা। সেজন্য হাসপাতালে নিয়ে এসেছি। কিন্তু আসতেই চিকিৎসকরা বলছেন তারা যেটুকু সেবা দেওয়ার দিয়েছেন, এখন আমার স্বামীকে নিয়ে সিলেট যেতে হবে।
হাসপাতালে রোগী নিয়ে আসা আসমা বেগম বলেন, মেয়েকে নিয়ে ২ দিন ধরে ভর্তি আছি। কিন্তু হাসপাতাল যে পরিমাণ পরিষ্কার থাকার কথা, সেটা নেই। চারদিকে মারাত্মক গন্ধ।
সুনামগঞ্জ সচেতন কমিটির (সনাক) সহ-সভাপতি খলিল রহমান বলেন, ২ কোটি টাকার উপরে খরচ করে হাসপাতালে আইসিইউ স্থাপন করা হলেও সেটির সুবিধা এই অঞ্চলের মানুষ পাচ্ছে না। তাহলে এত টাকা খরচ করে এটি নির্মাণ করে কী লাভ হলো। দ্রুত আইসিইউ সেবা চালু করা হোক, তাহলে সিলেট যাওয়া থেকে অনেক অসহায় পরিবার মুক্তি পাবে।
সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ডা. রফিকুল ইসলাম বলেন, আইসিইউ সেবা চালু, ডাক্তার সংকট নিরসনসহ আমরা ওপর মহলে জানিয়েছি, আশা করি এই সমস্যার সমাধান দ্রুত হবে।