প্রায় দেড় বছর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে প্রকাশ্যে উসকানিমূলক বক্তব্য দিয়ে আলোচনায় আসেন জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক ও সংরক্ষিত নারী আসনের সাবেক এমপি সুলতানা আহাম্মেদ (৫৯)। এ ঘটনায় তার বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা দায়ের করা হয়। আদালতে দাখিল করা মামলার চার্জশিটে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ উল্লেখ করেছে, সুলতানার ওই বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রীর মান-সম্মান ক্ষুণ্ন হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীকে হেয় প্রতিপন্ন তথা বিদ্বেষ ছড়াতেই তিনি এমন উসকানিমূলক বক্তব্য দিয়েছেন।
ঘটনার সূত্রপাত ২০২২ সালের ১ সেপ্টেম্বর। ওইদিন পল্টনে বিএনপির কর্মসূচি চলাকালে এক পর্যায়ে প্রকাশ্যে গণমাধ্যমকর্মীদের সামনে প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে উসকানিমূলক বক্তব্য দেন সুলতানা আহম্মেদ। ডিবির চার্জশিটে বলা হয়েছে, বিদ্বেষপূর্ণ ও উসকানিমূলক বক্তব্য দিয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির লক্ষ্য ছিল বিবাদীর।
চার্জশিটে আরও বলা হয়, বিএনপির এই নেত্রীর এমন বক্তব্যে বিভিন্ন শ্রেণি বা সম্প্রদায়ের মধ্যে শত্রুতা, ঘৃণা, বিদ্বেষ সৃষ্টি করে। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট বা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে। দেশে আইনশৃঙ্খলার পরিস্থিতি অবনতি ঘটে।
প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে এ ধরনের বক্তব্যের অভিযোগে ২০২২ সালের ৬ নভেম্বর রাজধানীর পল্টন থানায় সুলতানার বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেন গোপালগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি আব্দুল হামিদ।
বিদ্বেষপূর্ণ ও উসকানিমূলক বক্তব্য দিয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির লক্ষ্য ছিল সুলতানার। বিএনপির এই নেত্রীর এমন বক্তব্যে বিভিন্ন শ্রেণি বা সম্প্রদায়ের মধ্যে শত্রুতা, ঘৃণা, বিদ্বেষ সৃষ্টি করে। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট বা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে। দেশে আইনশৃঙ্খলার পরিস্থিতি অবনতি ঘটে
মঙ্গলবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট রাজেশ চৌধুরির আদালতে এ মামলার চার্জশিট দাখিল করে ডিবি পুলিশ। চার্জশিটে উল্লিখিত বিষয়গুলো তুলে ধরেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের পরিদর্শক দাউদ হোসেন। পরে ‘চার্জশিটটি দেখিলাম’ মর্মে সই করে বিচারকাজের জন্য বদলির আদেশ দেন আদালত।
মামলার চার্জশিটে বলা হয়, মামলার এজহারনামীয় আসামি সুলতানা আহম্মেদ ২০২২ সালের ১ সেপ্টেম্বর বিএনপির কর্মসূচি চলাকালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকন্যা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হেয় প্রতিপন্ন তথা বিদ্বেষ ছড়াতে এবং বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির লক্ষ্যে প্রকাশ্যে জনসম্মুখে গণমাধ্যমকর্মীদের উপস্থিতিতে উসকানিমূলক বক্তব্য দেন। তার ওই বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগমধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হয়। সুলতানা বিএনপির অজ্ঞাতপরিচয় দলীয় নেতাকর্মীদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মদতে উসকানিমূলক বক্তব্য দেন।
শেখ হাসিনাকে হেয় প্রতিপন্ন তথা বিদ্বেষ ছড়াতে এবং বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির লক্ষ্যে প্রকাশ্যে জনসম্মুখে গণমাধ্যমকর্মীদের উপস্থিতিতে উসকানিমূলক বক্তব্য দেন। তার ওই বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগমধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হয়। সুলতানা বিএনপির অজ্ঞাতপরিচয় দলীয় নেতাকর্মীদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মদতে উসকানিমূলক বক্তব্য দেন
চার্জশিটে ডিবি পুলিশ বলছে, আসামি সুলতানা পরস্পর যোগসাজশে তার বক্তব্য ডিজিটাল মাধ্যমে প্রচার করেন। তার বক্তব্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মান-সম্মান ক্ষুণ্ন করে। এই বক্তব্য আক্রমণাত্মক, মিথ্যা তথ্য প্রচার এবং মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে মিথ্যা ও মানহানিকর তথ্য প্রচার ও বিভিন্ন শ্রেণি বা সম্প্রদায়ের মধ্যে শত্রুতা, ঘৃণা ও বিদ্বেষ সৃষ্টি করে বা সাম্প্রদায়িক সম্প্রতি বিনষ্ট বা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে। যা দেশের আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটিয়েছে।
তদন্তে আসামি সুলতানা আহম্মেদের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮ এর ২১/২৫/২৯/৩১/৩৫ ধারার অপরাধ সত্য বলে প্রমাণিত হয় বলেও চার্জশিটে উল্লেখ করা হয়েছে।
২০২২ সালের ৬ নভেম্বর সুলতানার বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের পর ওইদিনই বরিশালে বিএনপির সমাবেশ থেকে ঢাকায় ফেরার পর গুলশানে যাওয়ার পথে তাকে আটক করে র্যাব-৩। পরে তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়। বর্তমানে তিনি উচ্চ আদালত থেকে জামিনে রয়েছেন।
মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায়, ২০২২ সালের ১ সেপ্টেম্বর বিএনপির কর্মসূচি চলাকালে প্রকাশ্যে গণমাধ্যমকর্মীদের উপস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে বক্তব্য দেন সুলতানা আহম্মেদ। সেখানে তিনি উসকানিমূলক ও আপত্তিকর কথা বলেন। এছাড়া দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির জন্য আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতিসহ স্বাধীনতাযুদ্ধ ও বিচার বিভাগকে প্রশ্নবিদ্ধ করার উদ্দেশে ঔদ্ধত্যপূর্ণ বক্তব্য দেন তিনি।
এই বক্তব্য আক্রমণাত্মক, মিথ্যা তথ্য প্রচার এবং মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে মিথ্যা ও মানহানিকর তথ্য প্রচার ও বিভিন্ন শ্রেণি বা সম্প্রদায়ের মধ্যে শত্রুতা, ঘৃণা ও বিদ্বেষ সৃষ্টি করে বা সাম্প্রদায়িক সম্প্রতি বিনষ্ট বা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে। যা দেশের আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটিয়েছে
এ বিষয়ে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের পরিদর্শক দাউদ হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, সুলতানা আহম্মেদের বিরুদ্ধে করা মামলার তদন্তে ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেছে। তার বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮ এর ২১/২৫/২৯/৩১/৩৫ ধারায় অপরাধ সত্য বলে প্রমাণিত হওয়ায় আদালতে চার্জশিট দাখিল করেছি।
এ বিষয়ে মামলার বাদী আব্দুল হামিদ জাগো নিউজকে বলেন, সাবেক এমপি সুলতানা আহম্মেদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হেয় করার জন্য উসকানিমূলক বক্তব্য দিয়েছেন। তিনি বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে মিথ্যা ও মানহানিকর তথ্য প্রচার করেছেন। তার বক্তব্য বিভিন্ন শ্রেণি বা সম্প্রদায়ের মধ্যে শত্রুতা, ঘৃণা ও বিদ্বেষ সৃষ্টি করে। একই সঙ্গে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রতি বিনষ্ট হয়। এ ঘটনায় আমি ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করি। আমি ন্যায়বিচার প্রত্যাশা করছি।