আজ আন্তর্জাতিক নারী দিবস

প্রশাসনে ১৫৫০ নারী কর্মকর্তা, মাঠ প্রশাসন সামলাচ্ছেন ৭ ডিসি

আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে নারী সমাজ এগিয়ে যাবে: প্রধানমন্ত্রী
ডেস্ক রিপোর্ট
  ০৮ মার্চ ২০২৪, ১১:৪৯

মাঠ প্রশাসন থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ সচিব পদ। সরকারি চাকরির সব ক্ষেত্রেই এখন নারীর জয়োগান।
প্রশাসনে এক হাজার ৫৫০ জন নারী কর্মকর্তা কর্মরত রয়েছেন। ৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস। ‘নারীর সম-অধিকার, সমসুযোগ এগিয়ে নিতে হোক বিনিয়োগ’ প্রতিপাদ্য নিয়ে এবার আন্তর্জাতিক নারী দিবস উদযাপন করা হচ্ছে।  
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বর্তমানে সারা দেশে সরকারি চাকরিজীবী আছেন ১৫ লাখ ৫৪ হাজার ৯২৭ জন। এরমধ্যে চার লাখ চার হাজার ৫৯১ নারী। প্রথম শ্রেণিতে মোট চাকরিজীবী আছেন এক লাখ ৯৫ হাজার ৬৭৯ জন। এরমধ্যে নারী ৩৯ হাজার ৭৮৭ জন। সব মিলে প্রশাসনে এক হাজার ৫৫০ জন নারী কর্মকর্তা কর্মরত রয়েছেন।
বর্তমানে প্রশাসনের সর্বোচ্চ পদ সচিব কিংবা সিনিয়র হিসেবে রয়েছেন মোট ৮৬ জন। এরমধ্যে সচিব ও সচিব পদমর্যাদায় আছেন ১০ জন নারী। শিল্প মন্ত্রণালয়ের সচিব জাকিয়া সুলতানা, কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব ওয়াহিদা আক্তার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের সিনিয়র সচিব মোসাম্মৎ হামিদা বেগম, পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব শাহনাজ আরেফিন, পরিবেশ বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব ফারহিনা আহমেদ, জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সচিব নাসরীন আফরোজ, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব নাজমা মোবারেক, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব ইসরাত চৌধুরী, পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য (সচিব) রেহানা পারভীন এবং দুর্নীতি দমন কমিশনের সচিব খোরশেদা ইয়াসমিন দায়িত্ব পালন করছেন।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের নিয়োগ, পদোন্নতি ও প্রেষণ (এপিডি) শাখার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে ৩২৭ অতিরিক্ত সচিবের মধ্যে ৫৫ জন নারী, ৮৫৮ যুগ্মসচিবের মধ্যে ১৮৬ নারী, এক হাজার ৭০৪ উপসচিবের মধ্যে ৩৯৫ নারী, এক হাজার ৮৬৭ সিনিয়র সহকারী সচিব ও সিনিয়র সহকারী কমিশনারের মধ্যে নারী রয়েছেন ৬৪১ জন। এছাড়া এক হাজার ৪৪২ সহকারী কমিশনার বা সহকারী সচিবের মধ্যে নারী ২৫০ জন কর্মরত।
বর্তমানে মাঠ প্রশাসন সামলাচ্ছেন সাত জন নারী জেলা প্রশাসক (ডিসি)। দেশের ৬৪ জেলা প্রশাসকের মধ্যে সাত জন নারী। এরমধ্যে গাইবান্ধা জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন কাজী নাহিদ রসুল, মানিকগঞ্জ জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট রেহেনা আকতার, মৌলভীবাজারে জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট উর্মি বিনতে সালাম, হবিগঞ্জ জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোছা. জিলুফা সুলতানা, ঝালকাঠি জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ফারাহ্ গুল নিঝুম, ফেনী জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মুছাম্মৎ শাহীনা আক্তার এবং লক্ষ্মীপুর জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সুরাইয়া জাহান দক্ষতার সাথে মাঠ প্রশাসন চালাচ্ছেন।
উপজেলা প্রশাসনে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) পদই সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। তারাই উপজেলায় সরাসরি সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করেন। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এপিডি শাখার তথ্য মতে, এখন সারা দেশে ৪৯২ ইউএনওর মধ্যে ১৬০ জন নারী। দায়িত্বরত ইউএনওর মধ্যে এই হার প্রায় ৩৫ শতাংশ। এছাড়া সারা দেশে ভূমিসংক্রান্ত দপ্তরের দায়িত্বে সহকারী কমিশনার (ভূমি) আছেন ১৩৬ নারী।
মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে নারী সমাজের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন, নারী অধিকার রক্ষা, নারীর ক্ষমতায়ন ও সমতা সৃষ্টির জন্য দিবসটির গুরুত্ব অপরিসীম। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশনা ও নেতৃত্বে দেশে নারীর ক্ষমতায়ন শুরু হয়। বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশে নারীর উন্নয়ন, ক্ষমতায়ন ও সম-অধিকার প্রতিষ্ঠায় সময়োপযোগী বিভিন্ন কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন। শিক্ষা, চাকরি, ব্যবসা ও আত্মকর্মসংস্থান সকল ক্ষেত্রে নারীরা আজ সফল হয়েছে। নারীরা দেশের উন্নয়ন ও অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। যে কারণে সমতাভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠায় ১৪৬টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ ৫৯তম এবং দক্ষিণ এশিয়ায় শীর্ষে রয়েছে।

আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে নারী সমাজ এগিয়ে যাবে: প্রধানমন্ত্রী
চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের যুগে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে দেশের নারী সমাজ এগিয়ে যাবে প্রত্যাশা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, গৃহকর্মে নারীর শ্রম ও অবদানকে জাতীয় অর্থনীতিতে মূল্যায়নের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।  
শুক্রবার (৮ মার্চ) ‘আন্তর্জাতিক নারী দিবস’ উপলক্ষে বৃহস্পতিবার দেওয়া এক বাণীতে তিনি এ কথা বলেন।
 প্রধানমন্ত্রী, বলেন, বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও ‘আন্তর্জাতিক নারী দিবস’ পালন করা হচ্ছে জেনে তিনি আনন্দিত।  
দিবসটি উপলক্ষে তিনি বিশ্বের সকল নারীকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান। দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য- ‘নারীর সমঅধিকার, সমসুযোগ; এগিয়ে নিতে হবে বিনিয়োগ’ যা অত্যন্ত সময়োপযোগী হয়েছে বলেও মনে করেন প্রধানমন্ত্রী।  
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ২০০৯ সাল থেকে ধারাবাহিকভাবে সরকার পরিচালনার দায়িত্ব পেয়ে প্রতিটি কাজে নারী-পুরুষের সম-অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে। বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে নারী-পুরুষ সমতা অর্জন ও নারী ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে বিনিয়োগ এবং জেন্ডার-রেসপনসিভ অর্থায়নকে উৎসাহিত করা হচ্ছে। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে নারীদের এগিয়ে নেওয়ার জন্য এবং ২০৪১ সালের উন্নত স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের লক্ষ্যে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।  
শেখ হাসিনা বলেন, মা ও শিশু স্বাস্থ্য নিশ্চিতকরণ ও নারীদের স্বাবলম্বী করার লক্ষ্যে মা ও শিশু সহায়তা কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। শুধুমাত্র চাকরিনির্ভর না হয়ে প্রতিটি নারী যেন নিজ নিজ ক্ষেত্রে উদ্যোক্তা হিসেবে নিজেকে প্রস্তুত করতে পারেন, সে লক্ষ্যে বিভাগীয়, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে প্রশিক্ষণ কার্যক্রমসহ তাদের উৎপাদিত পণ্য বাজারজাতকরণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। গৃহকর্মে নারীর শ্রম ও অবদানকে জাতীয় অর্থনীতিতে মূল্যায়নের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।  
নারী আন্দোলনের ইতিহাসে দিবসটি এক গৌরবময় দিন উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, দীর্ঘ কর্মঘণ্টা আর মজুরি বৈষম্যের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে নারী আদায় করেছিল তার অধিকার। নারী তার মেধা ও শ্রম দিয়ে যুগে যুগে সভ্যতার সব অগ্রগতি এবং উন্নয়নে করেছে সমঅংশীদারত্ব।  
তিনি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্ত নারীদের পুনর্বাসন ও ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে ১৯৭২ সালে ‘নারী পুনর্বাসন বোর্ড’ গঠন করেন। তিনি জাতীয় জীবনের সকল ক্ষেত্রে নারীর সমানাধিকারের বিষয়টি সংবিধানে নিশ্চিত করেন।  
আজকের শিশু আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। তাই শিশুর অকাল মৃত্যুরোধ, খর্বকায় শিশুর সংখ্যা হ্রাস করে শিশুর পুষ্টি চাহিদা পূরণ, মনোসামাজিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশ সাধনের জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘শিশুর কল্যাণ ও কর্মজীবী নারীদের সুবিধার্থে তৈরি হয়েছে শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্র। বাল্যবিবাহ, যৌতুক, মাদকসহ নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে ইউনিয়ন পর্যায়ে স্থাপন করা হয়েছে কিশোর-কিশোরী ক্লাব। জিসিএ প্রকল্পের মাধ্যমে দেশের উপকূলীয় এলাকায় নারীর জন্য জলবায়ু-সহিষ্ণু বিকল্প জীবিকা এবং সুপেয় পানীয় জলের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে বিভিন্ন সেবা প্রত্যন্ত অঞ্চলের নারীদের হাতের মুঠোয় এনে দেওয়ার জন্য কাজ করছে ‘তথ্য আপা’ প্রকল্প। এ সবই সম্ভব হচ্ছে সরকারের নারী বিনিয়োগবান্ধব নীতি ও নারীবান্ধব বাজেট প্রণয়নের কারণে।
চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের যুগে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে দেশের নারী সমাজ এগিয়ে যাবে- প্রত্যাশা করে তিনি বলেন, দেশের নারী-পুরুষ সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় ২০৪১ সালের মধ্যে জাতির পিতার স্বপ্নের ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত ও উন্নত-সমৃদ্ধ ‘সোনার বাংলাদেশ’ গড়ে তুলব, ইনশাআল্লাহ।