যুবদলের সমাবেশে ফখরুল ইসলাম আলমগীর

এক অদৃশ্য শক্তি দেশ চালাচ্ছে

নিজস্ব সংবাদদাতা
  ১২ মে ২০২৪, ১১:১৮

অদৃশ্য শক্তি দেশ চালাচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। আজ শনিবার রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে জাতীয়তাবাদী যুবদলের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে করা মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার এবং যুবদলের সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকুসহ রাজবন্দীদের মুক্তির দাবিতে এই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। ঢাকা মহানগর উত্তর, দক্ষিণ এবং ঢাকা জেলা, গাজীপুর জেলা ও মহানগর, নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর, নরসিংদী ও টাঙ্গাইল জেলা যুবদলের নেতাকর্মীরা এই সমাবেশে যোগ দেন।
সমাবেশ বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আওয়ামী লীগ দাবি করে তারা দেশ চালাচ্ছে। আসলে কি তারা দেশ চালাচ্ছে? তারা দেশ চালায় না। এক অদৃশ্য শক্তি দেশ চালাচ্ছে এবং যাদের নির্দেশে তারা আজকে বাংলাদেশে মানুষের অধিকারগুলো কেড়ে নিয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের রাষ্ট্রযন্ত্র, পুলিশ, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, প্রশাসন, বিচারব্যবস্থা প্রত্যেকটা প্রতিষ্ঠানকে তারা আজকে কুক্ষিগত করেছে, দলীয়করণ করেছে। তাদের লোক ছাড়া কেউ কোথাও যেতে পারে না। চাকরিও পায় না। অনেকে বিসিএস পরীক্ষা দেয় তাদের সবাইকে চাকরি দেওয়া হয় না। তাদের ডিএনএ টেস্ট করা হয়। তারা কোন দলের, তাদের বাবা-মামা-চাচা-ভাই কেউ বিএনপির সঙ্গে জড়িত কি না, কোয়ালিফাই করলেও তাহলে চাকরি হবে না। আর টাকা ছাড়া কোনো চাকরি হয় না। একজন স্কুলের পিয়নের চাকুরি ১৫ লাখ টাকার নিচে হয় না- এই অবস্থায় তারা দেশটাকে নিয়ে এসেছে।’
খালেদা জিয়াকে ওপর সরকারের প্রতিহিংসামূলক নিপীড়ন নির্যাতনের ক্ষোভ প্রকাশ করে অবিলম্বে তার মুক্তির দাবির কথাও সমস্বরে উচ্চারণ করেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
আওয়ামী লীগের সমালোচনা করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘ওরা সম্পূর্ণভাবে নির্বাচনী ব্যবস্থাকে গিলে খেয়ে ফেলেছে। প্রতিবার নির্বাচনে তারা একেকটা নতুন নতুন কৌশল গ্রহণ করে। এবার করেছে ডামি নির্বাচন। ডামি নির্বাচন কী? আওয়ামী লীগ নির্বাচন করবে, সেই সঙ্গে বিরোধী প্রার্থী যাকে বানাবে সেটাও ডামি প্রতিনিধি থাকবে, ডামি প্রার্থী। সেই সঙ্গে গৃহপালিত দল।’
তিনি বলেন, ‘তারা তাদেরকে সিলেক্ট করে দেবে যে আপনার দল থেকে ১০ জনকে আমরা পার্লামেন্টে দেব। যদি না দেওয়া হয় তখন তারা কান্নাকাটি জুড়ে দিয়ে বলে, ‘‘নির্বাচনে যাব না’’। তখন তারা (ক্ষমতাসীনরা) বলে, ‘‘ঠিক আছে, ঠিক আছে। তুমি ১০টাই পাবা, যাও’’। এই একটা অবস্থার মধ্যে নির্বাচনী ব্যবস্থাকে নিয়ে গেছে।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘তারা (আওয়ামী লীগ) বলেন বিভিন্ন সময়ে, এখন নাকি গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এ জন্য যদি গণতন্ত্রের চাপা হয় তাহলে এরশাদ সাহেবরা যাবেন কোথায়? তাহলে হিটলার যাবে কোথায়, তাহলে মুলোলিনী যাবে কোথায়? নমরুদ-ফেরাউন যাবে কোথায়? তারা কেউ টিকে থাকতে পারেনি। এটা ভুলে যাবেন না।’
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যের জবাবে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘‘আবার সন্ত্রাস করবেন না, তাহলে ডাবল শিক্ষা দেব’’। বিএনপি কখনো সন্ত্রাস করে না। সন্ত্রস করেন আপনারা। সন্ত্রাসের মাধ্যমে আওয়ামী লীগের জন্ম। মওলানা ভাসানীকে পিটিয়ে আওয়ামী লীগ থেকে বের করে দিয়েছিলেন। ডেপুটি স্পিকারকে আপনারাই পিটিয়ে পিটিয়ে হত্যা করেছেন। সন্ত্রাসের ইতিহাস আওয়ামী লীগের।’
রক্তের বিনিময়ে বাংলাদেশকে স্বাধীন করা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আজ দেশ স্বাধীন হয়েছে ৫৩ বছর, এখানো দেশের মানুষ স্বাধীন হতে পারেনি। যে ভোটের অধিকার, সেই অধিকার থেকে দেশের মানুষকে বঞ্চিত করা হয়েছে। ২০০৮ সাল থেকে দেশের মানুষ নিরপেক্ষভাবে ভোট দিতে পারে না। এই আওয়ামী লীগ গণতন্ত্রের মোড়কে দেশে একদলীয় বাকশাল কায়েম করতে চায়।’  
 দেশের অর্থনৈতিক দুরাবস্থার কথা তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘দেশের সাধারণ মানুষ বাজারে গিয়ে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনতে পারে না, প্রত্যেকটি জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে। এক বেলা খায়, দুই বেলা খেতে পারে না।’
সমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, ‘দেশের সাধারণ মানুষের হাতে টাকা নেই। কেন নেই? কারণ, ভারতের আদানি শিল্প গ্রুপকে দেওয়া হয়েছে ১০ হাজার কোটি টাকা, আরেক গ্রুপকে ৫-১০ হাজার কোটি টাকার বন্ড, আরেক গ্রুপ ব্যাংক লুট এবং একজন আওয়ামী লীগ নেতার ভাই তো সিঙ্গাপুরের শীর্ষ ধনীদের একজন।’
দলের স্থায়ী কমিটির অপর সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘বাংলাদেশকে তাবেদার মুক্ত করা না গেলে ভুটান-সিকিমের মতো আমরা নিজেদের স্বাধীন ভাবতে পারব না। ফেলানীর মতো বাংলাদেশকে কাঁটাতারের বেড়ায় ঝুলতে হবে। এখন আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে; দেশকে তাবেদার মুক্ত করব, নাকি অক্টোপাসের মতো আরও জড়াব। দেশকে তাবেদার মুক্ত করা না গেলে খালেদা জিয়াসহ দেশের গণতন্ত্র মুক্ত হবে না।’
জাতীয়তাবাদী যুবদলের সিনিয়র সহসভাপতি মামুন হাসানের সভাপতিত্বে সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, প্রচার সম্পাদক শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সদস্যসচিব রফিকুল আলম মজনু, যুবদলের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মোনায়েম মুন্না, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এস এম জিলানী, কৃষক দলের সভাপতি হাসান জাফির তুহিন, যুবদলের সহসভাপতি নুরুল ইসলাম নয়ন, যুবদল ঢাকা মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক শরীফ উদ্দিন জুয়েল, সদস্যসচিব সাজ্জাদুল মিরাজ, দক্ষিণের আহ্বায়ক খন্দকার এনামুল হক এনাম, সদস্যসচিব রবিউল ইসলাম নয়ন প্রমুখ।