এসএসসির ফলে অকৃতকার্য হওয়ায় ৮ শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা

নিজস্ব সংবাদদাতা
  ১৩ মে ২০২৪, ১৩:৩৫

এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে রোববার (১২ মে)। ফলাফলে অকৃতকার্য ও প্রত্যাশিত রেজাল্ট না হওয়ায় সারা দেশে ৮ শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছে বলে জানা গেছে।
তাদের মধ্যে নোয়াখালীতে গণিতে ফেল করায় গলায় ওড়না পেঁচিয়ে ফাঁস দিয়ে তানজিনা আক্তার জ্যোতি, নীলফামারীতে জিপিএ-৫ না পাওয়ায় একইভাবে রাফসান জানি এমিল (১৬), ঠাকুরগাঁওয়ের হরিপুরে পরীক্ষায় অকৃতকার্য হওয়ায় মিতু (১৫) গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে।
এ ছাড়া ঝিনাইদহ, ময়মনসিংহ, গোপালগঞ্জ, হবিগঞ্জ ও মাগুরা জেলায় আরও ৫ শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছে।
নোয়াখালী : নোয়াখালীতে এসএসসি পরীক্ষার ফলাফলে গণিতে অকৃতকার্য (ফেল) হওয়ায় তানজিনা আক্তার জ্যোতি (১৬) নামের এক শিক্ষার্থী গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে। রোববার (১২ মে) দুপুর দেড়টার দিকে নোয়াখালী পৌরসভার ৯ নং ওয়ার্ডে এ ঘটনা ঘটে।
মৃত তানজিনা আক্তার জ্যোতি নোয়াখালী পৌরসভার ৯ নং ওয়ার্ডের  সল্যা ঘটাইয়া গ্রামের আলী আজ্জন বেপারি বাড়ির আব্দুল করিমের মেয়ে। সে এসএসসি পরীক্ষায় কালীতারা মুসলিম গার্লস একাডেমি থেকে মানবিক বিভাগ থেকে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছিল।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, দুপুরে এসএসসি পরীক্ষার ফলাফল ঘোষণার পর পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গে তানজিনা আক্তার জ্যোতি বাড়িতে ছিল। ফলাফল খারাপ হওয়ায় সে মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে।  পরিবারের সদস্যরা পাশের বাড়িতে গেলে তানজিনা আক্তার জ্যোতি নিজের গলার ওড়না পেঁচিয়ে ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে। পরিবারের সদস্যরা ঝুলন্ত মৃতদেহ দেখতে পেয়ে স্থানীয় লোকজনের মাধ্যমে জনপ্রতিনিধি ও সুধারাম মডেল থানায় খবর দেন। পরিবারের পক্ষ থেকে কোনো অভিযোগ না থাকায় মৃতদেহ ময়নাতদন্ত ছাড়াই পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
সুধারাম মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা  (ওসি) মীর জাহেদুল হক রনি বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। পরিবারের পক্ষ থেকে কোনো অভিযোগ না থাকায় মৃতদেহ ময়নাতদন্ত ছাড়াই হস্তান্তর করা হয়েছে। রাত সাড়ে আটটায় তাকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে।
নীলফামারী : এসএসসি পরীক্ষার ফলাফলে জিপিএ-৫ না পাওয়ায় নীলফামারীতে রাফসান জানি এমিল (১৬) নামের এক শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছে। নিজ বাড়ির  সিলিং ফ্যানের সঙ্গে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে সে। রোববার দুপুরে উপজেলার বাঙালীপুর নিজপাড়ায় এ ঘটনা ঘটে। রাফসান একই এলাকার আব্দুর রহিমের ছেলে।
পুলিশ ও পরিবার জানায়, এ বছর সৈয়দপুর লায়ন্স স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয় রাফসান। পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পাওয়ার আশা করেছিল সে। কিন্তু প্রকাশিত ফলাফলে জিপিএ ৪ দশমিক ৮৯ পয়েন্ট আসায় কান্নাকাটি করতে থাকে। একপর্যায়ে সে ঘরে গিয়ে দড়ি দিয়ে গলায় ফাঁস দেয়।
সৈয়দপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহা আলম বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে ঘরের দরজা ভেঙে তার ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
ঠাকুরগাঁও : ঠাকুরগাঁওয়ের হরিপুরে এসএসসি পরীক্ষায় অকৃতকার্য হওয়ায় মিতু (১৫) নামের এক স্কুলছাত্রী গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে।  
মিতু উপজেলার কামারপুকুর গ্রামের মুসা আলীর মেয়ে ও কামারপুকুর মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রী। রোববার দুপুরে নিজ বাড়িতে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে।
মিতুর বাবা মুসা জানান, ৩ ছেলেমেয়ের মধ্যে মিতু তাদের দ্বিতীয় সন্তান। পরীক্ষার ফল প্রকাশের পর সে আত্মহত্যা করে।
হরিপুর থানার ওসি (তদন্ত) মুহা. শরিফুল ইসলাম জানান, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে।
ঝিনাইদহ : এসএসসি পরীক্ষায় অকৃতকার্য হওয়ায় ঝিনাইদহের হরিণাকুন্ডু উপজেলার সাবেক বিন্নী গ্রামে আত্মহত্যা করেছে এক কিশোরী। নুপুর আকতার (১৬) নামে ওই পরীক্ষার্থী গ্রামের আসাদুল ইসলামের মেয়ে। এবার উপজেলার দুর্লভপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছিল।
পরিবারের সদস্যদের বরাতে হরিণাকুন্ডু থানার ওসি মো. জিয়াউর রহমান বলেন, রোববার ফল প্রকাশের পর ফেল করার খবর পেয়ে নুপুর মনমরা হয়ে পড়ে। পরে পরিবারের অগোচরে ঘরে ঢুকে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে সে আত্মহত্যা করে।
দুর্লভপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আলতাফ হোসেন বলেন, ‘মেয়েটি শান্ত প্রকৃতির ছিল। তার আত্মহত্যার খবর শুনে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা মর্মাহত।’
ওসি জিয়াউর বলেন, খবর পাওয়ার পর ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। এ ব্যাপারে একটি অপমৃত্যু মামলা রেকর্ড করা হয়েছে।
ময়মনসিংহ : ময়মনসিংহের ধোবাউড়ায় এসএসসি পরীক্ষায় অকৃতকার্য হয়ে এক শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছে। রোববার দুপুরে উপজেলার পুরাকান্দলিয়া ইউনিয়নের বতিহালা গ্রামে এই ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছন ধোবাউড়া থানার ওসি চান মিয়া। মৃত শোহেদা আক্তার (১৭) ওই গ্রামের ছমেদ আলীর মেয়ে। সে বতিহালা উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ছিল।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আলকাছ মিয়া বলেন, ‘ঘটনাটি দুঃখজনক। শোহেদা আক্তার গত বছর এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে এক বিষয়ে অকৃতকার্য হয়েছিল। এরপর এবার সে এক বিষয়ে পুনরায় পরীক্ষা দিয়েও অকৃতকার্য হয়।’
ওসি চান মিয়া বলেন, এ ঘটনায় থানায় অপমৃত্যু মামলা দায়ের করা হবে।
গোপালগঞ্জ : এসএসসি পরীক্ষায় এক বিষয়ে ফেল করায় প্রিন্স হাসান মাহাতী নামের এক শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছে। রোববার (১২ মে) পরীক্ষার ফলাফল ঘোষণার পর বেলা সাড়ে ১১টার দিকে গোপালগঞ্জ শহরের মোহাম্মদ পাড়ায় বোন বৈশাখী বেগমের ভাড়া বাসায় ফ্যানের সঙ্গে ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করে সে।
প্রিন্স সদর উপজেলার মেরী গোপিনাথপুর গ্রামের শরীফ মহসিন আলী বেল্টুর ছেলে। সে এ বছর মেরী গোপিনাথপুর খন্দকার শামসুদ্দিন স্মৃতি উচ্চবিদ্যালয়ের বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয়।
গোপালগঞ্জ সদর থানার এসআই বিপ্লব কুমার দাস বলেন, প্রিন্স হাসান মাহাতী এসএসসি পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর গোপালগঞ্জ শহরের মোহাম্মাদ পাড়ায় বোনের বাসায় বেড়াতে আসে। রোববার বেলা ১১টার দিকে এসএসসি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হয়। সে গণিত বিষয়ে অকৃতকার্য হওয়ায় বেলা সাড়ে ১১টার দিকে মনের কষ্টে সবার অগোচরে বোনের ভাড়া বাসার ৫ম তলার একটি কক্ষে দরজা-জানালা বন্ধ করে সিলিং ফ্যানের সঙ্গে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করে।
তিনি আরও বলেন, দুপুরে ঘটনাস্থলে গিয়ে দরজা ভেঙে ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। পরিবারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ময়নাতদন্ত ছাড়াই মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
হবিগঞ্জ : এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় অকৃতকার্য হওয়ায় এক কিশোরী বিষপান করে আত্মহত্যা করেছে। একই কারণে পৃথক ঘটনায় বিষপান করে হবিগঞ্জ জেলা সদর আধুনিক হাসপাতালে ভর্তি আছে আরও দুই কিশোর।
হবিগঞ্জ সদর আধুনিক হাসপাতালের চিকিৎসক বিভারবী দাস জানান, রোববার এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফলাফল ঘোষণার পর বিষপান করার ঘটনায় তিন কিশোর-কিশোরীকে হাসপাতালে নিয়ে আসেন পরিবারের সদস্যরা।
এর মধ্যে মাইশা আক্তার (১৭) নামের এক কিশোরীকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে মৃত ঘোষণা করা হয়েছে। আর অপর দুই কিশোরকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তাদেরকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
মাইশা আক্তার কিশোরগঞ্জ জেলার অষ্টগ্রাম থানার আদমপুর গ্রামের মজিদ মিয়ার মেয়ে। স্থানীয় দেওয়ান আলী উচ্চ বিদ্যালয়ের এই শিক্ষার্থী দুই বিষয়ে ফেল করেছে বলে জানিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আরেক কিশোর শুভ হবিগঞ্জ সদর উপজেলার পইল গ্রামের বাসিন্দা। সে স্থানীয় উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে এক বিষয়ে ফেল করেছে।
অন্যদিকে বাহুবল উপজেলার মহব্বতপুর গ্রামের কিশোর মেহেদী হাসান স্থানীয় একটি মাদরাসা থেকে দাখিল পরীক্ষায় অংশ নেয়। সে এক বিষয়ে ফেল করায় বিষপানে আত্মহত্যার চেষ্টা চালায়।
মাগুরা : এসএসসি পরীক্ষায় অকৃতকার্য হওয়ায় কথা সাহা (১৬) নামের এক শিক্ষার্থী চতুর্থ তলা থেকে লাফিয়ে আত্মহত্যা করেছে। রোববার (১২ মে) দুপুরে মাগুরা জেলা শহরে রিমপি সাহা নামে এক আত্মীয়ের বাসায় বসবাসরত চতুর্থ তলার ছাদ থেকে সে লাফিয়ে পড়ে। গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে প্রথমে মাগুরা সদর হাসপাতালে, পরে ফরিদপুর মেডিকেলে ভর্তি করানো হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় বিকেল চারটার দিকে সে মারা যায়।
কথা সাহা মাগুরার মহম্মদপুরের বিনোদপুর গ্রামের রাজেশ সাহার মেয়ে। সে মাগুরার মহম্মদপুরের বিনোদপুর বালিকা বিদ্যালয় থেকে এ বছর এসএসসি পরীক্ষায় বিজ্ঞান বিভাগ থেকে অংশ নিয়েছিল। জানা যায়, সে অঙ্ক বিষয়ে অকৃতকার্য হয়েছে।
মহম্মদপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) বোরহান উল ইসলাম জানান, উপজেলার বিনোদপুর গ্রামের রাজেশ সাহার মেয়ে কথা সাহা এবারের এসএসসিতে এক বিষয়ে ফেল করায় ছাদ থেকে লাফিয়ে আত্মহত্যা করে।