রাজনীতির বিকল্প খুঁজছেন বিএনপির ত্যাগী কর্মীরা

নিজস্ব সংবাদদাতা
  ১৬ মে ২০২৪, ১১:৩৭

গত বছরের ২৮ অক্টোবরের আগে বিএনপির নানা কর্মসূচিতে জনস্রোতের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক সমর্থন নেতাকর্মীদের ব্যাপক চাঙা করেছিল। কিন্তু দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে আন্দোলন-সংশ্লিষ্ট কার্যকর নেতারা আটক হওয়ায় তারা ঝিমিয়ে পড়ে। বাইরে থাকা নেতারা কর্মীদের সঙ্গে সমন্বয় করে আন্দোলন নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে উদাসীন ছিলেন। অভিযোগ আছে, যোগ্যতা নয় লবিং করে পদ পাওয়া নেতারা কর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেননি। অনেক নেতা আত্মগোপনের নামে একেবারেই নিরাপদ স্থানে ছিলেন। সংগত কারণে নির্বাচন ঠেকানোর কোনো আন্দোলনই হয়নি।
আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা রেখেছেন এমন নেতারা জানান, নিজেদের জীবন বাজি রেখে দলীয় কর্মসূচিতে ভূমিকা রেখেছেন তারা। এমনকি আন্দোলন করতে গিয়ে কারাবন্দী হওয়ার পর তাদের মামলা পরিচালনা থেকে শুরু করে চিকিৎসা, কারাগারের খরচ সবকিছু বহন করতে হয়েছে পরিবারকে। এ কারণে বিরক্ত হয়ে হতাশায় অনেকে রাজনীতিবিমুখ হয়ে নিজেকে গুটিয়ে নিতে শুরু করেছেন। অনেকে নিজের ব্যক্তিগত আর কর্মজীবনকে প্রাধান্য দিতে শুরু করেছেন। বর্তমানে বিএনপির রাজনীতিতে ত্যাগী কর্মীদের কদর কমে তলানিতে এসে ঠেকেছে। দলটির ত্যাগী কর্মীরা এখন চরম অবহেলার শিকার। ক্ষমতায় না থাকার কারণে এলাকার আধিপত্য নিয়ে বিএনপির অধিকাংশ নেতা কৌশলে নিজেদের টিকিয়ে রেখেছেন। অন্যদিকে যেসব নেতাকর্মী জীবন বাজি রেখে সরকারবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকায় ছিলেন, তারা এখন আন্দোলন করে মামলা-হামলায় জর্জরিত। এমন পরিস্থিতিতে যেমন পাশে পাচ্ছেন না কেন্দ্রীয় নেতাদের, তেমনি মূল্যায়ন হচ্ছে না কমিটিতেও। এ কারণে রাজনীতি ছেড়ে তৃণমূলের অনেক নেতাকর্মী স্বাভাবিক জীবনযাপনের জন্য বিদেশে পাড়ি জমাচ্ছেন। আবার অনেকে ব্যবসা-বাণিজ্যের পাশাপাশি বিকল্প পথ খুঁজছেন। অভিযোগ রয়েছে, বড় নেতাদের প্রভাব ও ত্যাগী নেতাদের মূল্যায়ন না থাকায় এমন বেহাল দশা হয়েছে দলটির।
জানা গেছে, বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনে মূল্যায়ন না করার কারণে সক্রিয় অনেক নেতা রাজনীতি থেকে নিজেদের গুটিয়ে নিয়েছেন। কারণ বিএনপির রাজনীতি করে আগের মতো ত্যাগী নেতাকর্মীরা মূল্যায়ন পাচ্ছেন না। কেন্দ্রীয় নেতাদের ইশারায় অদক্ষ ও দুর্বল নেতাদের সমন্বয়ে গঠিত হয় কমিটি। ‘ভাইয়া’ বলয়ের কারণে নিষ্ক্রিয়রা কমিটিতে নাম লিখিয়ে ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতাকর্মীদের বঞ্চিত করা হয়। এমন অবমূল্যায়নে দলের অনেকেই হতাশ ও ক্ষুব্ধ।
বিএনপিতে ছাত্ররাজনীতি শেষে বিভিন্ন অঙ্গ ও সংগঠনের পদে যুক্ত হওয়ার রেওয়াজ রয়েছে। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে বিএনপি তাদের যথার্থ মূল্যায়ন করেনি বলে অভিযোগ করছেন ছাত্রদলের সাবেক নেতারা। তাদের অভিযোগ, এক যুগের বেশি সময় ধরে রাজপথের আন্দোলন-সংগ্রাম আর কারাগারই তাদের ঠিকানা। বিশেষ করে, বিগত সেনাসমর্থিত ওয়ান ইলেভেনের সরকারের আমলে রাজনীতি করতে গিয়ে ছাত্রদলের বহু নেতাকর্মী ও তাদের পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দলীয় পদ না থাকলেও বিএনপির ভ্যানগার্ড হিসেবে খ্যাত ছাত্রদলের সাবেক নেতারা সভা-সমাবেশে সক্রিয়। অবশ্য কেউ কেউ ক্ষোভে অভিমানে রাজনীতি থেকে দূরত্বে থেকে কেবল বড় ধরনের সভা-সমাবেশে অংশগ্রহণ করেন। এরই মধ্যে যুবদল-স্বেচ্ছাসেবক দলের পূর্ণাঙ্গ কমিটি হলেও অনেকেই পদবঞ্চিত হয়েছেন। এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির এক ভাইস চেয়ারম্যান বলেন, দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের পর পদ-পদবির জন্য যেভাবে দৌড়ঝাঁপ চলছে, আন্দোলনের সময় এর কিছু ভূমিকা রাখলে সফলতা আসত। ত্যাগী নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন করা হলে আন্দোলন-সংগ্রামের সময় তারা দলের জন্য কাজ করবে।