সরকারবিরোধী আন্দোলন 

সর্বস্তরের শ্রমজীবীকে ঐক্যবদ্ধ করবে বিএনপি

নিজস্ব সংবাদদাতা
  ১০ জুন ২০২৪, ১৩:১৭

সরকারবিরোধী আন্দোলন সুসংগঠিত ও গতিশীল করতে এবার সর্বস্তরের শ্রমজীবী মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করার উদ্যোগ নিয়েছে বিএনপি। এ প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে সারাদেশে নিবন্ধিত-অনিবন্ধিত সব শ্রমিককে সংগঠিত করার কর্মসূচি গ্রহণ করেছে দলটি। আগামী ২৯ জুন থেকে দলের ১০ সাংগঠনিক বিভাগ, বৃহত্তর জেলা থেকে প্রতিটি জেলায় বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ কর্মশালা করবে জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দল। গত বুধবার শ্রমিক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে কর্মশালার দিনক্ষণ নির্ধারণ করা হয়। এ কর্মসূচি শেষে নতুন নেতৃত্ব তৈরিতে কাউন্সিলের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় কমিটি গঠনেরও পরিকল্পনা রয়েছে প্রধান বিরোধী দলটির।
বিএনপি ও শ্রমিক দলের সংশ্লিষ্টরা জানান, পৃথিবীর সব দেশেই শ্রমিক আন্দোলন মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে মৌলিক ভূমিকা রেখেছে। বাংলাদেশে ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ এবং নব্বইয়ের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে শ্রমিক শ্রেণি সাহসী নেতৃত্ব দিয়েছে। একটি দেশের স্বপ্ন দেখাতে বুদ্ধিবৃত্তিক আন্দোলনে ছাত্রসমাজ ও শ্রমিকসমাজ প্রধান ভূমিকা পালন করে। কিন্তু গত ১৫ বছর আওয়ামী লীগের শাসনামলে ছাত্রদের সহাবস্থান ধ্বংস করা হয়েছে। অন্যদিকে দেশের শিল্পাঞ্চলও ধ্বংস করে এখন ভাসমান শ্রমিক শ্রেণি তৈরি করা হয়েছে, যারা নিজের অধিকার আদায়ে তেমন সচেষ্ট নয়। এবার সেখানে পরিবর্তন আনা হচ্ছে। নিজেদের অধিকার আদায়ে এবং জাতীয় ইস্যুতে ঐক্যবদ্ধ করা হচ্ছে শ্রমজীবীদের।
শ্রমিক দলের নেতারা বলছেন, পরিসংখ্যান অনুযায়ী দেশে শ্রমিক ৭ কোটি ৩৫ লাখ। এর মধ্যে এক কোটিরও কম নিবন্ধিত শ্রমিক সংগঠনের আওতায়; অন্যরা রয়েছেন বিক্ষিপ্তভাবে। তাদের কোনো সংগঠন নেই, ঐক্যবদ্ধ হওয়ার প্ল্যাটফর্মও নেই। এর মধ্যে বড় সংখ্যক প্রবাসী শ্রমিক ও দিনমজুর। নিবন্ধিতদের মধ্যে গার্মেন্ট, পরিবহন, হকারসহ অনেক সংগঠন রয়েছে। দেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলনে শ্রমিকদের অন্তর্ভুক্ত করতে নিবন্ধিত ও অনিবন্ধিত– সবাইকে টার্গেট করা হয়েছে। তাদের অধিকার বিষয়ে সচেতন করতে, দেশের রাজনীতি ও অর্থনীতি নিয়ে নিজেদের অধিকারের বিষয়ে সোচ্চার করতে কর্মসূচি নিয়েছে বিএনপির হাইকমান্ড।
নেতারা আরও বলেন, এ কর্মসূচির মধ্য দিয়ে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, সর্বগ্রাসী দুর্নীতি, লুটপাট, সর্বত্র দলীয়করণ, জাতীয় বেতন স্কেল, মজুরি কমিশন, সব ক্ষেত্রে ন্যূনতম মজুরি ২৫ হাজার টাকা, শ্রমিক শোষণ বন্ধ, ধনী-গরিবের আয়-ব্যয়ের বৈষম্য দূরীকরণ; পাট, চিনিকলসহ বন্ধ মিলকারখানা চালু, শ্রমিকের জন্য রেশন ও চিকিৎসার ব্যবস্থা, শ্রমিকের সন্তানদের শিক্ষা ও কর্মসংস্থান ব্যবস্থার দাবিসহ গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার, ভোটাধিকার নিশ্চিত, সরকারের পদত্যাগের দাবিতে চলমান সরকারবিরোধী এক দফা আন্দোলনে ঐক্যবদ্ধ শ্রমিক প্ল্যাটফর্ম গড়ে তোলা হবে। যেসব শ্রমিক ও সামাজিক সংগঠন শ্রমিক-কর্মচারী, সমাজের পিছিয়ে পড়া দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য দাবি নিয়ে এবং দেশের গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে রাজপথে সক্রিয় রয়েছে, তাদের সঙ্গেও ঐক্যবদ্ধ হয়ে এ প্রক্রিয়া এগিয়ে নেওয়া হবে বলে শ্রমিক দলের নেতারা জানান।
জানা গেছে, চট্টগ্রাম বিভাগ থেকে এ বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ কর্মশালা শুরু হয়ে প্রতিটি বিভাগে হবে। এর পর বৃহত্তর জেলায় শেষ করে সারাদেশে অন্যান্য জেলায় কর্মশালা হবে। সেখানে প্রতিটি থানা-উপজেলা, পৌরসভা এমনকি ইউনিয়ন পর্যায়ের শ্রমিকদেরও অন্তর্ভুক্ত করা হবে। সকাল ৯টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত হবে এ কর্মশালা।
সূত্র জানায়, এতে আন্দোলন-সংগ্রামে শ্রমিক দলের শক্তি ও দুর্বলতা নির্ধারণ, নিবন্ধিত শ্রমিক সংগঠনের সামাজিক-রাজনৈতিক অবস্থা নিয়ে আলোচনা, পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে কৌশল নির্ধারণ এবং পরবর্তী কাউন্সিলের প্রস্তুতির প্রাথমিক তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করা হবে। প্রশিক্ষণ শেষে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে সনদপত্র বিতরণের সিদ্ধান্তও রয়েছে শ্রমিক দলের।
শ্রমিক নেতা অ্যাডভোকেট শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস বলেন, শ্রমিকদের সংগঠিত ও অধিকার সম্পর্কে সচেতন করে তোলা গেলে দেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলনে বিজয়ের প্রক্রিয়া সহজ হবে। শ্রমিকদের সংগঠিত করার এ উদ্যোগ মানুষের মুক্তির লড়াইকে আরও এগিয়ে নেবে। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার আন্দোলনে যুক্ত হবে নতুন মাত্রা।