প্রশাসক নিয়োগের বিধান রেখে ইউনিয়ন পরিষদ বিল সংসদে পাস

 ইউপি ‘সচিব’ পদের নাম হবে ‘ইউনিয়ন পরিষদ প্রশাসনিক কর্মকর্তা’

নিজস্ব সংবাদদাতা
  ০২ জুলাই ২০২৪, ১৩:৫৬

বিদ্যমান আইন সংশোধন করে ইউনিয়ন পরিষদেও (ইউপি) প্রশাসক নিয়োগের বিধান যুক্ত করে সংসদে বিল পাশ হয়েছে। স্থানীয় সরকার মন্ত্রী তাজুল ইসলাম গতকাল সোমবার সংসদে ‘স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) (সংশোধন) বিল, ২০২৪’ পাশের প্রস্তাব করলে তা কণ্ঠভোটে গৃহীত হয়। এর আগে বিলের ওপর আনা জনমত যাচাই, বাছাই কমিটিতে প্রেরণ ও সংশোধনী প্রস্তাবগুলো নিষ্পত্তি করেন স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী।
পাশ হওয়া বিলে বলা হয়েছে, কোনো এলাকাকে ইউনিয়ন ঘোষণার পর বা পরিষদের মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার পর কার্যাবলি সম্পাদনের জন্য সরকার একজন উপযুক্ত কর্মকর্তা বা উপযুক্ত ব্যক্তিকে প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ করবে এবং নির্বাচিত পরিষদ গঠন না হওয়া পর্যন্ত প্রশাসক ইউনিয়ন পরিষদের সার্বিক দায়িত্ব পালন করবেন। প্রশাসক নিয়োগ হবে কেবল এক মেয়াদের জন্য। কোনো দৈবদুর্বিপাক, অতিমারী, মহামারী ইত্যাদি বিশেষ ক্ষেত্রে নির্বাচিত পরিষদ গঠন করা সম্ভব না হলে সরকার ঐ মেয়াদ যৌক্তিক সময় পর্যন্ত বাড়াতে পারবে।
বিলে বলা হয়, কোনো চেয়ারম্যান বা চেয়ারম্যানের দায়িত্বপ্রাপ্ত কোনো সদস্য বা প্রশাসক যদি নির্ধারিত পদ্ধতিতে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে দায়িত্ব হস্তান্তর করতে ব্যর্থ হন, তাহলে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা হবে। বিদ্যমান আইনে এটি ১০ হাজার টাকা। এছাড়া ইউনিয়ন পরিষদের ‘সচিব’ পদটির নাম হবে ‘ইউনিয়ন পরিষদ প্রশাসনিক কর্মকর্তা’।
বিলটি পাশের আগে এর ওপর জনমত যাচাই প্রস্তাবের আলোচনায় অংশ নিয়ে স্বতন্ত্র এমপি পংকজ নাথ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, সদস্য এবং চৌকিদার দফাদারদের সম্মানি বাড়ানোর দাবি জানান। তিনি বলেন, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের সম্মানি ৫-১০ হাজার টাকা, আর ইউনিয়ন পরিষদের সদস্যদের সম্মানি মাত্র ৯০০ টাকা। বাস্তবে, চেয়ারম্যান-মেম্বারদের কোনো ক্ষমতাও নেই। সবকিছুই করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এবং থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি)।
নওগাঁ-৪ আসনের এমপি এস এম ব্রাহানী সুলতান মাহমুদ গামা বিল পাশের আলোচনায় বলেন, প্রশাসক নিয়োগের বিষয়টি সাংঘর্ষিক। ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের এলাকার এক প্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্তে যেতে হয়। তারা যেন জনগণের দোরগোড়ায় সেবা পৌঁছে দিতে পারেন, সেজন্য তাদের মোটরসাইকেল দেওয়া উচিত। তাদের সম্মানিও বাড়ানো দরকার।
স্বতন্ত্র এমপি হামিদুল হক খন্দকার বলেন, সম্মানিটা সম্মানজনক হওয়া উচিত। এখন সরকারি টাকা এবং ইউনিয়ন পরিষদের নিজের আয় থেকে মিলিয়ে চেয়ারম্যানের ভাতা ১০ হাজার টাকা। বর্তমান বাস্তবতায় এটি দ্বিগুণ করা উচিত। তিনি বলেন, প্রশাসক নিয়োগের বিধান আগে আইনে ছিল না। এটার সুবিধা যেমন আছে, সরকারের স্বেচ্ছাচারের আশঙ্কাও আছে। স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য গোলাম সরোয়ার বলেন, ইউপি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। তারা প্রত্যন্ত এলাকায় কাজ করেন। তাদের সম্মানি খুবই অসম্মানজনক। এটা সম্মানজনক হওয়া উচিত।
বিরোধী দল জাপার এমপি হাফিজ উদ্দিন আহম্মেদ বলেন, চেয়ারম্যান নির্বাচনে অনেক টাকা খরচ হয়। তারা এ টাকা কীভাবে তুলবে। তখন দুর্নীতি করে। টিআর, কাবিখা বিক্রি করে দেয়। এজন্য দুর্নীতি কমাতে তাদের ভাতা বাড়ানো উচিত। তিনি বলেন, এমপিদের হয়তো অনেক সুবিধা আছে। কিন্তু ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও সদস্যদের সম্মানি খুবই নগণ্য।