চলমান কোটাবিরোধী আন্দোলন নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে এত ক্ষোভ কেন? মুক্তিযোদ্ধাদের নাতি-পুতিরাও পাবে না? তাহলে কি রাজাকারের নাতি-পুতিরা পাবে? আমার প্রশ্ন দেশবাসীর কাছে। তাহলে কি রাজাকারের নাতি-পুতিরা চাকরি পাবে, মুক্তিযোদ্ধারা পাবে না। অপরাধটা কী? নিজের জীবনবাজি রেখে, সংসার সব ফেলে দিয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছে। দিনরাত খেয়ে না খেয়ে, কাদামাটি ভেঙে, রোদ-বৃষ্টি-ঝড় মোকাবিলা করে যুদ্ধ করে এ দেশের বিজয় এনেছে। বিজয় এনে দিয়েছিল বলে সবাই উচ্চপদে আসীন।
চীনের প্রধানমন্ত্রীর আমন্ত্রণে ৮ থেকে ১০ জুলাই দেশটিতে দ্বিপাক্ষিক উপলক্ষে রবিবার (১৪ জুলাই) বিকালে নিজের সরকারি বাসভবন গণভবনে সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন শেখ হাসিনা।
কোটাবিরোধী আন্দোলন নিয়ে প্রশ্ন প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, একবার তারা এ ধরনের আন্দোলন, শুধু আন্দোলন না, যে সমস্ত ঘটনা ঘটাচ্ছিল। আওয়ামী লীগ অফিসে আক্রমণ, মানুষের ওপর আঘাত করা। দেশের জ্ঞানী-গুণী আছে, ঘরের ভেতর বসে মিথ্যা-অপপ্রচার রেকর্ড করে ছেড়ে দিলো। এ সমস্ত দেখে আমি খুব বিরক্ত হয়ে যাই। তখন একপর্যায়ে আমি বললাম, ঠিক আছে কোটা বাদই দিলাম। সেটার উদ্দেশ্য ছিল কোটা বাদ দিলে কী হয় তা দেখা।
তিনি বলেন, এখন কী অবস্থা হয়েছে? বেশি দূর যাওয়া লাগবে না। সর্বশেষ বিসিএসে দেখেন, ফরেন সার্ভিসে দুই জন মেয়ে নিয়োগ পেয়েছে, পুলিশে চার জন। নারী অধিকারের কথা বলি। সব ধরনের ব্যবস্থা করছি।
সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা (ছবি: ফোকাস বাংলা)
বঙ্গবন্ধু নারীদের জন্য ১০ ও মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ৩০ শতাংশ কোটা রেখেছিলেন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা বলেছিলাম যে কোটা পূর্ণ হবে না, যারা তালিকায় পরবর্তী থাকবে তাদের সেখানে নিয়োগ দেওয়া হবে। সেটাই আমরা শুরু করে দিয়েছিলাম। তারপরে যখন আন্দোলন শুরু হলো সব বন্ধ করলাম। বন্ধ করার পর ফলাফল কী দাঁড়াচ্ছে? আমাদের দেশের নারীরা সচিব, ডিসি, এসপি হবে কোনোদিন ভাবেনি। এমনকি কোথায়ও পদায়ন ছিল না। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর প্রথম সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীতে নারী নিয়োগ দিয়েছিলাম। প্রশাসনে প্রথম সচিব আমি করি। ডিসি, এসপি, ওসিসহ সমস্ত জায়গায় নারীদের অবস্থান নিশ্চিত করেছি। অর্থনৈতিকভাবে সামনে আনার জন্য কোটা ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
তিনি বলেন, সেই সময় (২০১৮) যারা আন্দোলন করেছিল, সেখানে নারীও ছিল। যারা বলেছিল নারী কোটা চায় না, মেধা দিয়ে চাকরি করবো, সে কি চাকরি পেয়েছে? সে কি বিসিএস পরীক্ষা দিয়েছে? বিসিএসের প্রিলিমিনারিতে পাস করেছে? এই বড় কথাগুলো না বলতো, কোথাও না কোথাও চাকরি করতো। দেশের সব এলাকা সমানভাবে উন্নত না। অনগ্রসর সম্প্রদায় আছে। সেসব মানুষের কি কোনও অধিকার থাকবে না? সেটা বিবেচনা করে প্রত্যেক জেলা থেকে মানুষ চাকরি পায় সেই ব্যবস্থা। কোটা বন্ধ করার পরে হিসাবটা নেন তাহলে, কোন কোন জেলা, ২৩ জেলার একটা লোকও পুলিশে চাকরি পায়নি বা প্রশাসন বা কোথাও না। ৪২ বিসিএসে বিশেষ নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
কোটা বাতিলে মুক্তিযোদ্ধারা ক্ষুব্ধ হয়ে মামলা করেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মামলার পরে কোর্ট যখন কোনও রায় দেয় সে বিষয়ে নির্বাহী বিভাগের কিছু করার নেই। সেখানে সমাধান করতে হবে। যারা আন্দোলন করছে, তারা তো আইন মানবেন না, আদালত মানবেন না, সংবিধান কি তারা চিনবেন না। বা একটা কাজ করতে হলে কার্যনির্বাহীর কাজ কী, বিধিমালা বা ধারা থাকে...। একটা সরকার কীভাবে চলে সে সম্পর্কে কোনও ধারণা এদের নাই। কোনও জ্ঞানই নাই। ভালো পড়ালেখা করে, ভালো নম্বর পাচ্ছে। কিন্তু ভবিষ্যতে এরা নেতৃত্ব দেবে, তাদের তো ধারণাগুলো দরকার, জানা উচিত। রাষ্ট্র পরিচালনায় কী ধরনের কাজ হয় সেটা কি তাদের জানা আছে? ধারণা তো দেখি না।
তিনি আরও বলেন, যখন আদালতে চলে গেলো, সেটার সমাধান সেখানেই হবে। আদালত তাদের সুযোগ দিয়েছে। তারা আদালতে যাক, বলুক। তা না...। তারা রাজপথে সমাধান করবে। আমাকে বলছে। আদালত যখন কথা বলেছে, রায় হয়ে গেছে, সেই রায়ের বিরুদ্ধে আমার তো দাঁড়ানোর অধিকার নেই, সংবিধানও বলে না। সংসদও বলে না, কার্যপ্রণালি বিধিও বলে না। কিছুই না। যতক্ষণ পর্যন্ত আদালত থেকে সমাধান না আসবে ততক্ষণ আমাদের কিছু করার থাকে না। এ বাস্তবতা তাদের মানতে হবে। না মানলে কিছুই করার নেই।
রাজপথে আন্দোলন করছে, করতেই থাকবে। তবে কোনও ধ্বংসাত্মক কাজ করতে পারবে না। যতক্ষণ তারা শান্তিপূর্ণ করে যাচ্ছে কেউ কিছু বলছে না। কিন্তু এর বাইরে যখন কিছু করবে, পুলিশের গায়ে হাত তোলা, গাড়ি ভাঙচুর, আক্রমণ করতে যায়, তখন তো আইন আপন গতিতে চলবে। আমাদের কিছু করার নেই। কোটা আন্দোলন করার আগে তাদের পরীক্ষার ফলাফল দেখা উচিত ছিল যে কোথায় তারা দাঁড়িয়েছে, যুক্ত করেন প্রধানমন্ত্রী।