নিউইয়র্কে গৃহহীন হতে পারেন ৩ লাখের বেশি মানুষ!

ডেস্ক রিপোর্ট
  ০১ জুন ২০২৫, ১৩:০৬


যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন এমন একটি প্রস্তাব উত্থাপন করেছে, যা বাস্তবায়িত হলে নিউইয়র্ক সিটির সরকারি আবাসন ব্যবস্থায় ভয়াবহ বিপর্যয় নেমে আসতে পারে। নিউইয়র্ক সিটি হাউজিং অথরিটির হিসাবে, এতে ৩ লাখের বেশি মানুষ গৃহহীন হওয়ার ঝুঁকিতে পড়বেন।
একটি গণমাধ্যমকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে মার্কিন কংগ্রেসম্যান রিচি টরেস (ডেমোক্র্যাট-ব্রংক্স) জানান, প্রস্তাবিত নতুন নিয়মে শারীরিকভাবে সক্ষম প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য ফেডারেল রেন্টাল সহায়তা সর্বোচ্চ দুই বছর পর্যন্ত সীমিত করা হবে। এরপর তাদের আর কোনও সহায়তা দেওয়া হবে না।
২০২৬ সালের জন্য ট্রাম্প প্রশাসনের বাজেট পরিকল্পনায় ফেডারেল রেন্টাল সহায়তা খাতে ৪৩ শতাংশ বাজেট ছাঁটাইয়ের প্রস্তাব রাখা হয়েছে। এই কাঁটছাঁটের প্রভাব পড়বে সরকারি আবাসন এবং 'সেকশন-৮' কর্মসূচির ওপর, যার আওতায় সরকার বেসরকারি মালিকদের ভাড়ার জন্য ভর্তুকি দিয়ে থাকে।
প্রস্তাবিত নিয়মে বলা হয়েছে, এই সহায়তা সীমাবদ্ধ থাকবে কেবল ২ বছরের জন্য, আর তা শুধুমাত্র শারীরিকভাবে সক্ষম প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে। প্রবীণ নাগরিক এবং প্রতিবন্ধীরা এই নিয়মের আওতার বাইরে থাকবেন।
নিউইয়র্ক সিটি হাউজিং অথরিটি পরিচালিত অভ্যন্তরীণ বিশ্লেষণে দেখা গেছে, সংস্থাটির অধীন সরকারি ও সেকশন-৮ আবাসনে বসবাসকারী প্রায় ৩ লাখ ১৬ হাজার বাসিন্দা ৬২ বছরের কম বয়সী এবং কোনো ধরনের শারীরিক প্রতিবন্ধকতার তথ্য নেই। অর্থাৎ, এই বিশাল জনগোষ্ঠী দুই বছরের মধ্যে আশ্রয় হারানোর বাস্তব হুমকির মুখে রয়েছেন। এই সংখ্যা নিউইয়র্ক সিটি হাউজিং অথরিটির মোট বাসিন্দার প্রায় ৬১ শতাংশ।
নিউইয়র্ক সিটি হাউজিং অথরিটির চিফ কমিউনিকেশন অফিসার বারবারা ব্রানকাচ্চিও বলেন, “আমরা এই প্রস্তাবকে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে দেখছি। তবে বাস্তবায়নের আগে কংগ্রেসের একাধিক কমিটি এবং সিনেটে অন্তত ৬০ ভোটের অনুমোদন প্রয়োজন হবে।”
মার্কিন হাউজিং অ্যান্ড আরবান ডেভেলপমেন্ট বিভাগ এখনো প্রস্তাব নিয়ে বিস্তারিত কিছু জানায়নি। সংস্থার পক্ষে এক বিবৃতিতে সচিব স্কট টার্নার বলেন, “এই প্রস্তাব রাজ্য ও স্থানীয় সরকারের সঙ্গে বৃহত্তর অংশীদারিত্ব গড়ে তুলবে এবং স্বনির্ভরতা ও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির পথ উন্মুক্ত করবে।”
তবে এই যুক্তিকে নাকচ করেছেন কংগ্রেসম্যান টরেস। তিনি বৃহস্পতিবার এক চিঠিতে সচিবের কড়া সমালোচনা করে বলেন, “এই পরিকল্পনা দেশের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর কাছ থেকে বাসস্থানের সহায়তা কেড়ে নেবে।” তিনি জানান, ব্রংক্সে তাঁর নির্বাচনী এলাকায় নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ইমার্জেন্সি হাউজিং ভাউচার রয়েছে—সংখ্যা ২২০০’র বেশি।
টরেস সতর্ক করে বলেন, “এই প্রস্তাব কার্যকর হলে হাজার হাজার মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়বেন। এতে শহরের হাউজিং বাজারে বড় ধরনের সংকট দেখা দিতে পারে। হাউজিং কোর্টে মামলা বাড়বে, অনেক বাসিন্দা ভাড়ার টাকা দিতে ব্যর্থ হবেন, এবং মাল্টি-ফ্যামিলি হাউজিং খাতে ঋণ খেলাপি বাড়বে।”
এই ঋণ খেলাপির প্রভাব পৌঁছাতে পারে সরকার-সমর্থিত অর্থায়ন সংস্থা ফ্যানি মে এবং ফ্রেডি ম্যাক পর্যন্ত। সম্প্রতি ট্রাম্প এই সংস্থাগুলোর সরকারি সুরক্ষা তুলে নেওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন, যদিও পরে জানান, তারা সরকার-সমর্থিতই থাকবে।
ট্রাম্প প্রশাসনের প্রস্তাব আপাতত প্রস্তাবই, বাস্তবায়নের জন্য কংগ্রেস ও সিনেটের অনুমোদন প্রয়োজন। তবে নিউইয়র্ক সিটি হাউজিং অথরিটি, হাউজিং বিশেষজ্ঞ এবং আইনপ্রণেতারা আশঙ্কা করছেন, এটি কার্যকর হলে নিউইয়র্ক শহরে লাখো মানুষ তাদের আশ্রয় হারাতে পারেন।