গাজায় ফিলিস্তিনের সশস্ত্র সংগঠন হামাসের হাতে আটক দুই শতাধিক ইসরায়েলিকে উদ্ধার করতে সব ধরনের সহযোগিতা দিতে তেল আবিবে পৌঁছেছেন মার্কিন কমান্ডোরা। গত ৭ অক্টোবর আকস্মিক হামলা চালিয়ে এ ইসরায়েলিদের গাজায় ধরে নিয়ে যায় হামাস।
এরই মধ্যে গাজায় ট্যাঙ্ক ও সেনা নিয়ে প্রবেশ করেছে ইসরায়েল। বিভিন্ন স্থানে হামাস সদস্যদের সঙ্গে তাদের লড়াই চলছে। তবে জিম্মিদের গাজায় কোথায় রেখেছে হামাস– তারা তা শনাক্ত করতে পারছেন না। মার্কিন কমান্ডোরা এ জিম্মিদের অবস্থান শনাক্ত করতেও কাজ করবেন।
মঙ্গলবার মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তর পেন্টাগনের বিশেষ অভিযান পরিচালনা বিভাগের শীর্ষ কর্মকর্তার বরাত দিয়ে নিউইয়র্ক টাইমস এ খবর জানিয়েছে। এরই মধ্যে গাজায় ইসরায়েলের অব্যাহত নৃশংসতার মধ্যেও জিম্মি চার ইসরায়েলিকে মুক্তি দিয়েছে হামাস।
ওয়াশিংটনে সংবাদ সম্মেলনে বিশেষ অভিযান বিষয়ক মার্কিন সহকারী প্রতিরক্ষামন্ত্রী ক্রিস্টোফার পি মাইয়ার জানান, বেশ কিছু বিষয়ে তারা ইসরায়েলিদের সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছেন। এর মধ্যে অন্যতম প্রধান একটি সহযোগিতা হলো ‘যুক্তরাষ্ট্রেরসহ জিম্মিদের (অবস্থান) শনাক্তকরণ’। এটা করা তাদের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে।
বর্তমানে ইসরায়েলে কী সংখ্যক মার্কিন বিশেষ বাহিনীর সদস্য রয়েছেন– এমন প্রশ্নের জবার এড়িয়ে যান মাইয়ার। তবে তিনি বলেন, মার্কিন প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় কয়েক সপ্তাহে বেশ কয়েক ডজন কমান্ডোকে ইসরায়েলের সঙ্গে কাজ করার অনুমোদন দিয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েক কর্মকর্তা ইসরায়েলের হয়ে তাদের বিশেষ অভিযান নিয়ে কথা বলেছেন। তারা জানান, এ কমান্ডোদের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের তদন্ত সংস্থা এফবিআই, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও মার্কিন সরকারের জিম্মি উদ্ধার বিশেষজ্ঞরা যোগ দেবেন। তারা ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনীকে পরামর্শ দেবেন। মাইয়ার জানান, যুক্তরাষ্ট্রের এ বিশেষ বাহিনীর কোনো সদস্য ইসরায়েলের সরাসরি যুদ্ধে অংশ নেবেন না। তারা ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীকে পরামর্শ দেবেন– কীভাবে গাজার কঠিন পরিস্থিতিতে লড়াই চালিয়ে যেতে হবে।
সম্প্রতি ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেন মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড জে অস্টিন। এ সময় তিনি গাজায় স্থল অভিযান পরিচালনা করার ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বনের ওপর জোর দেন। কারণ, গাজা সিটির নিচে হামাস অভ্যন্তরীণ সুড়ঙ্গ নেটওয়ার্ক তৈরি করে রেখেছে। ক্রিস্টোফার পি মাইয়ার জানান, কীভাবে কার্যক্রম চালিয়ে যেতে হবে, সে বিষয়ে পরামর্শ দিতে তারা ইসরায়েলের সঙ্গে কাজ করবেন।
মার্কিন সংবাদমাধ্যমটির প্রতিবেদনে বলা হয়, জিম্মিদের উদ্ধার করতে এরই মধ্যে বেশ কয়েকটি পশ্চিমা দেশ গোপনে তাদের বিশেষ বাহিনীর ছোট ছোট দল ইসরায়েলে পাঠাতে শুরু করেছে। এ দলগুলো সম্ভাব্য উদ্ধার অভিযান ও বৃহৎ পরিসরে লেবাননে নিজ দেশের নাগরিককে স্থানান্তরের প্রয়োজনে কাজ করবে। মার্কিন সহকারী প্রতিরক্ষামন্ত্রী জানান, ইসরায়েলে পাঠানো কমান্ডোরা সেখানে থাকা মার্কিনিদের সহযোগিতা করবেন। সেইসঙ্গে তারা দূতাবাসের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কাজ করবেন।
মধ্যপ্রাচ্যে আরও ৩০০ সেনা পাঠানোর ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। স্থানীয় সময় মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলনে পেন্টাগনের প্রেস সচিব ব্রিগেডিয়ার জেনারেল প্যাট্রিক রাইডার জানান, যুক্তরাষ্ট্রের সেন্ট্রাল কমান্ড অঞ্চলে (মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকার কিছু অংশ) আরও অতিরিক্ত ৩০০ সেনা পাঠানো হবে।
বর্তমানে যেসব সেনাসদস্য এসব এলাকায় আছেন, নতুন সেনারা তাদের দক্ষতা, বিস্ফোরণ নিয়ন্ত্রণ সক্ষমতা, যোগাযোগ বাড়ানোসহ নানা বিষয়ে সহযোগিতা দেবেন। এ অতিরিক্ত সেনাসদস্যরা ইসরায়েলে যাচ্ছেন না বলেও নিশ্চিত করেন তিনি। যুক্তরাষ্ট্রের সেন্ট্রাল কমান্ড অঞ্চলের মধ্যে রয়েছে ২০টি দেশ।
এর মধ্যে ইরাক, ইরান, পাকিস্তান, আফগানিস্তান, আরব উপদ্বীপের সব দেশ, লোহিত সাগরের উত্তরাঞ্চল এবং মধ্য এশিয়ার পাঁচটি প্রজাতন্ত্র রয়েছে। প্যাট্রিক রাইডার জানান, মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিন মার্কিন সিনেটে দেওয়া বক্তব্যে ইসরায়েলকে অব্যাহতভাবে প্রতিরক্ষা সহায়তা দেওয়ার কথা পুনর্ব্যক্ত করেছেন।