গাজা ও সিরিয়ায় ইসরায়েলি সামরিক অভিযান নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর প্রতি অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। হোয়াইট হাউজ জানিয়েছে, এই হামলাগুলো ট্রাম্পকে ‘আচমকা’ বিস্মিত করেছে ও উভয় ক্ষেত্রেই নেতানিয়াহুর সঙ্গে তাৎক্ষণিক ফোনে কথা বলে পরিস্থিতি ‘ঠিক’ করার চেষ্টা করেন তিনি।
হোয়াইট হাউজের সূত্রগুলো বলছে, এ ঘটনাগুলো দুই নেতার মধ্যে চলমান সম্পর্কের উত্তেজনাপূর্ণ পরিবেশের ইঙ্গিত দেয়। বিশেষ করে যখন নেতানিয়াহুর প্রতি ট্রাম্প প্রশাসনের ‘সংশয়’ বা ‘সন্দেহ’ আরও স্পষ্ট হয়ে উঠছে।
গত বৃহস্পতিবার (১৭ জুলাই) গাজার একমাত্র ক্যাথলিক গির্জায় ইসরায়েলি বিমান হামলার পর প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প দ্রুত নেতানিয়াহুকে ফোন করেন ও এ হামলাকে ‘ভুল’ আখ্যা দিয়ে প্রকাশ্যে বিবৃতি দিতে বলেন। ওই হামলায় অন্তত তিনজন নিহত হয়।
একইভাবে সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে সরকারি ভবনে ইসরায়েলি বিমান হামলা নিয়েও ট্রাম্প ক্ষুব্ধ হন। এই সময়টিতে ট্রাম্প প্রশাসন যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরিয়াকে পুনর্গঠনের লক্ষ্যে কাজ করছে।
সোমবার (২১ জুলাই) হোয়াইট হাউজে সাংবাদিকদের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লেভিট বলেন, প্রেসিডেন্ট নেতানিয়াহুর সঙ্গে ভালো কাজের সম্পর্ক বজায় রাখেন ও নিয়মিত যোগাযোগ করেন। তবে গাজা ও সিরিয়ায় সাম্প্রতিক বোমা হামলা তাকে বিস্মিত করেছে।
তিনি আরও বলেন, উভয় ঘটনাতেই প্রেসিডেন্ট তাৎক্ষণিকভাবে নেতানিয়াহুকে ফোন করেন এবং পরিস্থিতি মীমাংসার চেষ্টা করেন।
লেভিট জানান, ট্রাম্প প্রশাসনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও সিরিয়ায় শান্তিপূর্ণ পরিবেশ ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে কাজ করছেন। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সিরিয়ার নতুন প্রেসিডেন্ট, সাবেক বিদ্রোহী নেতা আহমেদ আল-শারাকে সমর্থন দিচ্ছেন ও দেশটির ওপর থেকে কিছু নিষেধাজ্ঞাও শিথিল করেছেন।
নেতানিয়াহুর সঙ্গে ট্রাম্পের সম্পর্ক বরাবরই জটিল ছিল বলে হোয়াইট হাউজ সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে। যদিও ইসরায়েলের মিত্র হিসেবে ট্রাম্প তার পাশে থেকেছেন, কিন্তু দুই নেতার মধ্যে ব্যক্তিগত সম্পর্ক কখনো খুব ঘনিষ্ঠ হয়নি, বরং মাঝে মধ্যেই দ্বিধা-সন্দেহ ছায়া ফেলেছে।
তবুও, চলতি বছরের গ্রীষ্মে ইরানে ইসরায়েলি বিমান অভিযান শুরু হলে যুক্তরাষ্ট্র এতে যোগ দেয়, আর তখন নেতানিয়াহুর সঙ্গে ট্রাম্পের সম্পর্ক আরও ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠে বলে ধারণা করা হয়। এমনকি, চলতি মাসের শুরুতে হোয়াইট হাউজে আয়োজিত নৈশভোজে নেতানিয়াহু নাটকীয়ভাবে ট্রাম্পকে শান্তিতে নোবেল পুরস্কারের জন্য মনোনয়ন দেওয়ার চিঠি উপহার দেন।
ওই সফরে ট্রাম্প আশা করেছিলেন, নেতানিয়াহুর চারদিনের ওয়াশিংটন সফর গাজায় একটি যুদ্ধবিরতির চুক্তি ও হামাসের হাতে আটক বন্দিদের মুক্তির পথে অগ্রগতি বয়ে আনবে। তিনি বারবার বলেছিলেন, সফরের সময়েই তিনি একটি যুদ্ধবিরতির ঘোষণা আশা করছেন।
কিন্তু নেতানিয়াহু কোনো চুক্তি ছাড়াই যুক্তরাষ্ট্র ত্যাগ করেন। এখন, এক সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও হামাস গাজায় যুদ্ধবিরতি ও বন্দিমুক্তির বিষয়ে নতুন প্রস্তাবের আনুষ্ঠানিক জবাব দেয়নি। সিএনএনের দুটি সূত্র জানিয়েছে, মধ্যস্থতাকারীরা প্রস্তাব জমা দেওয়ার পর থেকে সবাই হামাসের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছে। হামাস সোমবার এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, তারা ‘চারদিক থেকে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালাচ্ছে’ একটি চুক্তিতে পৌঁছাতে।
গাজা যুদ্ধের সহিংসতা দেখে ট্রাম্পের উদ্বেগ আরও বেড়েছে, বিশেষ করে গির্জায় নিহত তিনজনের ঘটনায়।
লেভিট বলেন, মধ্যপ্রাচ্যে চলমান এই সংঘাত বহুদিন ধরে চলছে, কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ের নৃশংসতা অত্যন্ত দুঃখজনক। প্রেসিডেন্ট কখনো এ ধরনের প্রাণহানি দেখতে চান না। তিনি চান এই হত্যাযজ্ঞ বন্ধ হোক।
তিনি আরও দাবি করেন, গাজায় মানবিক সহায়তা পৌঁছাতে ট্রাম্প প্রশাসন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে, যদিও ২৫টি পশ্চিমা দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ‘অল্প অল্প করে’ সহায়তা প্রবেশ করানোর জন্য সমালোচনা করেছেন। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, মে মাসের শেষ দিক থেকে সহায়তার জন্য অপেক্ষারত অবস্থায় এক হাজারেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন।
লেভিট বলেন, গাজায় সহায়তা যে এখনো বিতরণ হচ্ছে, তার প্রধান কারণ প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। তিনি চান সহায়তা শান্তিপূর্ণভাবে বিতরণ হোক ও আর কারও প্রাণ না যাক। তিনি আরও বলেন, এটা অত্যন্ত জটিল একটি পরিস্থিতি, যা প্রেসিডেন্ট পেয়েছেন পূর্ববর্তী প্রশাসনের দুর্বলতার কারণে। আমার মনে হয়, প্রেসিডেন্ট প্রশংসার দাবি রাখেন।
লেভিট শেষ কথায় বলেন, প্রেসিডেন্ট শান্তি চান- এটা তিনি বহুবার স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন।
সূত্র: সিএনএন