ইসরায়েলি হামলায় ঘুমের মধ্যেই প্রাণ গেল গাজার এক ক্ষুধার্ত পরিবারের সবার

আন্তর্জতিক ডেস্ক
  ২৪ জুলাই ২০২৫, ১৬:১৩

ক্ষুধার্ত অবস্থায় ঘুমাতে গিয়েছিলেন আল-শায়ের পরিবারের সদস্যরা, সেই ঘুমই চিরঘুম হল তাদের।
গাজায় ইসরায়েলি হামলায় ঘুমের মধ্যেই এই পরিবারের সব সদস্য নিহত হয় বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
২৪ ঘণ্টায় ইসরায়েলি হামলায় গাজায় যে শতাধিক নিহত হয়েছে, তার মধ্যে ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক ওয়ালা আল-জাবেরি, তার স্বামী ও তাদের ৫ সন্তানের এ পরিবারও আছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা।
বুধবার বোমায় বিধ্বস্ত বাড়ির বাইরে সাদা কাফনে মোড়া অবস্থায় পড়ে ছিল পরিবারটির সদস্যদের নিথর দেহ। কাফনের ওপর কলমের কালিতে লেখা ছিল তাদের নাম। রক্ত চুঁইয়ে বেরিয়ে আসায় কাফনের সাদা কাপড় ধীরে ধীরে লাল হয়ে উঠছিল।
“এটা আমার কাজিন। তার বয়স ছিল ১০। আমরা ধ্বংসস্তূপ খুঁড়ে তাদের বের করেছি,” উদ্ধারের পর একটি মৃতদেহ হাতে নিয়ে এমনটাই বলেছেন আমর আল-শায়ের।
কাছাকাছি বাস করা আরেক আত্মীয় ইমান আল-শায়ের বলেছেন, বোমা পড়ার সময়ও পরিবারটি ক্ষুধার্ত ছিল।
“না খেয়েই বাচ্চগুলো ঘুমিয়েছিল,” বলেছেন তিনি।
ওই পরিবারের বাড়িতে হামলা নিয়ে তাৎক্ষণিকভাবে কোনো মন্তব্য করেনি ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। তবে তারা বলেছে, আগের দিন তারা গাজাজুড়ে ১২০টি নিশানায় হামলা চালিয়েছে, যার মধ্যে আছে, সন্ত্রাসী ঘাঁটি, সামরিক স্থাপনা, সুড়ঙ্গ, ফাঁদ পাতা ভবন এবং অন্যান্য সন্ত্রাসী অবকাঠামো।
আত্মীয়রা বলছেন, বোমা হামলায় আশপাশের কিছু প্রতিবেশী বেঁচে গেছেন, কারণ সেসময় তারা খাদ্যের সন্ধানে বাইরে ছিলেন।
রাতে ক্ষুধায় আরও ১০ ফিলিস্তিনি মারা গেছে বলে জানিয়েছে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। এ ১০ জনকে নিয়ে ভূখণ্ডটিতে ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ক্ষুধায় মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ১১১-তে, যাদের বেশিরভাগেরই মৃত্যু হয়েছে সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বুধবার জানিয়েছে, গাজায় চলতি বছর অপুষ্টিতে যতজন মারা গেছে, তাদের মধ্যে পাঁচ বছরের নিচে ২১টি শিশুও রয়েছে।
তারা জানায়, তারা মার্চ থেকে শুরু করে মে পর্যন্ত প্রায় ৮০ দিন তারা গাজায় কোনো খাদ্য সরবরাহ করতে পারেনি। এরপর সরবরাহ পুনরায় শুরু হলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক অনেক কম।
বুধবার মার্সি কর্পস, নরওয়েজিয়ান রিফিউজি কাউন্সিল ও রিফিউজি ইন্টারন্যাশনালসহ ১১১টি সংস্থা এক বিবৃতিতে বলেছে, ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডটিতে অসংখ্য মানুষ অনাহারে রয়েছে, অথচ গাজার ঠিক বাইরে টন টন খাদ্য, পরিষ্কার পানি ও চিকিৎসা সরঞ্জাম পড়ে রয়েছে, ত্রাণ সংস্থাগুলোকে সেসব নিয়ে ভেতরে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না।