কাশ্মীর বিষয়ে ‘বিচ্ছিন্নতাবাদ প্রচারের’ অভিযোগ তুলে জম্মু ও কাশ্মীরের স্বরাষ্ট্র দপ্তর এক আদেশে ২৫টি বই নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। এসব বইয়ের লেখকদের মধ্যে রয়েছেন বিশিষ্ট লেখক ও মানবাধিকারকর্মী অরুন্ধতী রায়, সংবিধান বিশেষজ্ঞ এজি নূরানি, আন্তর্জাতিক গবেষক হাফসা কানজোয়াল, সাংবাদিক অনুরাধা বাসিন, ইতিহাসবিদ সুমন্ত্র বোসসহ অনেকে।
বৃহস্পতিবার (৭ আগস্ট) এক প্রতিবেদনে এ খবর দিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, স্বরাষ্ট্র বিভাগের প্রধান সচিব চন্দ্রকান্ত ভরতির জারি করা নির্দেশনাটি এলজি মনোজ সিনহার অনুমোদনে প্রকাশিত হয়।
এতে বলা হয়, ‘সরকারের নজরে এসেছে যে, কিছু বই মিথ্যা বিবরণ এবং বিচ্ছিন্নতাবাদ প্রচার করছে। এই সাহিত্য যুবসমাজের মনে অভিযোগ, নিপীড়নের বোধ ও সন্ত্রাসবাদী ভাবমূর্তি সৃষ্টি করছে।’
অরুন্ধতী রায়ের এই বইটি এখন ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে নিষিদ্ধ
তথ্য বিকৃতি, সন্ত্রাসবাদে উস্কানির অভিযোগ
নির্দেশনায় আরও বলা হয়, এই বইগুলো ইতিহাস বিকৃতি, সন্ত্রাসীর প্রশংসা, নিরাপত্তা বাহিনীকে হেয় করা, ধর্মীয় চরমপন্থা, জনগণের মধ্যে বিচ্ছিন্নতা ও সহিংসতায় উসকানি দিচ্ছে। এসব কারণে বইগুলো ভারতীয় ন্যায় সংহিতা ২০২৩-এর ১৫২, ১৯৬ ও ১৯৭ ধারায় রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব ও অখণ্ডতার জন্য হুমিকর বিবেচনায় নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
নিষিদ্ধ তালিকায় থাকা গুরুত্বপূর্ণ কিছু বই হলো:
১. The Kashmir Dispute: 1947-2012– এজি নূরানি
২. Azadi – অরুন্ধতী রায়
৩. Kashmir at the Crossroads ও Contested Lands – সুমন্ত্র বোস
৪. In Search of a Future: The Kashmir Story – ডেভিড দেবদাস
৫. A Dismantled State – অনুরাধা বাসিন
৬. Colonizing Kashmir – হাফসা কানজোয়াল
৭. Resisting Occupation in Kashmir – হেলি ডুশিনস্কি ও অন্যান্য
৮. Kashmir in Conflict – ভিক্টোরিয়া স্কোফিল্ড
৯. Independent Kashmir – ক্রিস্টোফার স্নেডেন
১০. Do You Remember Kunan Poshpora? –essar বতুল ও সহলেখক
১১. Resisting Disappearance – আথার জিয়া
১২. Kashmir: The Case for Freedom – তারিক আলী, অরুন্ধতী রায়, পঙ্কজ মিশ্র প্রমুখ
এছাড়াও জামায়াতে ইসলামী প্রতিষ্ঠাতা মাওলানা আবুল আ’লা মওদুদীর আল-জিহাদ ফিল ইসলাম এবং মুসলিম ব্রাদারহুডের হাসান আল বান্নার মুজাহিদের আজান বই দুটিও নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
‘অভিপ্রায় হলো তরুণদের মনোভাব নিয়ন্ত্রণ’
নির্দেশনায় আরও বলা হয়, এই বইগুলো তরুণদের মধ্যে ‘বিচ্ছিন্নতাবাদী চেতনা’, ‘রাষ্ট্রবিরোধী মনোভাব’ এবং ‘সন্ত্রাসকে গৌরবান্বিত করার’ প্রবণতা তৈরি করছে, যা রাজ্যের নিরাপত্তা ও সামাজিক স্থিতিশীলতার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ।
বই বাজেয়াপ্তের নির্দেশ
স্বরাষ্ট্র দপ্তরের নির্দেশ অনুযায়ী, এই বইগুলোর যেকোনো কপি বা সংশ্লিষ্ট প্রকাশনা বাজেয়াপ্ত করা হবে ভারতীয় নাগরিক সুরক্ষা সংহিতা ২০২৩-এর ৯৮ ধারা অনুযায়ী।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এই নিষেধাজ্ঞা কাশ্মীর সংক্রান্ত মতপ্রকাশের পরিসর সংকুচিত করবে এবং আন্তর্জাতিক পরিসরে ভারতের গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ নিয়েও প্রশ্ন উঠতে পারে।