যুক্তরাষ্ট্রের ৫৮ শতাংশ নাগরিক স্বাধীন ফিলিস্তিনের পক্ষে

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
  ২১ আগস্ট ২০২৫, ১২:০৫

যুক্তরাষ্ট্রের ৫৮ শতাংশ নাগরিক মনে করেন ফিলিস্তিনকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া উচিত। তারা মনে করেন, জাতিসংঘের সব সদস্য রাষ্ট্রের উচিত ফিলিস্তিনকে একটি স্বীকৃত দেশ হিসেবে মেনে নেওয়া। পাশাপাশি ৫৯ শতাংশ নাগরিক ইসরায়েলের সামরিক অভিযানকে অতিরিক্ত বাড়াবাড়ি বলে মনে করেন। যুক্তরাষ্ট্রে সম্প্রতি পরিচালিত একটি জরিপে এ তথ্য উঠে এসেছে। সংবাদ সংস্থা রয়টার্স ও ফ্রান্সের গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইপসোস যৌথভাবে জরিপটি পরিচালনা করে। 
জরিপে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ৬৫ শতাংশ গাজায় অনাহারে ভোগা মানুষদের সহায়তা করতে যুক্তরাষ্ট্রের সক্রিয় পদক্ষেপ চেয়েছেন। এই ফলাফল যুক্তরাষ্ট্রবাসীদের জনমতের একটি মানবিক ও ন্যায়ভিত্তিক দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিফলন ঘটায়। জরিপটি ৬ দিন ধরে পরিচালিত হয় এবং গত সোমবার শেষ হয়। 
এই জরিপ এমন এক সময়ে এসেছে যখন যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ মিত্র তিনটি দেশ- কানাডা, ব্রিটেন, ফ্রান্স ফিলিস্তিনকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার পরিকল্পনার ঘোষণা দিয়েছে। এর ফলে ইসরায়েলের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ আরও বেড়েছে। একই সময়ে গাজায় মানবিক পরিস্থিতি চরমে পৌঁছেছে এবং সেখানে দুর্ভিক্ষ দেখা দিয়েছে বলে জানিয়েছে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা।
জরিপে আরও দেখা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রের ৬৫ শতাংশ নাগরিক মনে করেন, গাজায় দুর্ভিক্ষের শিকার মানুষদের সাহায্য করতে যুক্তরাষ্ট্রের উচিত কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া। তবে ২৮ শতাংশ এই মতের সঙ্গে একমত নন। বিশেষ করে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের রিপাবলিকান সমর্থকদের মধ্যে এই সাহায্যের বিরোধিতা তুলনামূলকভাবে বেশি। তাদের মধ্যে ৪১ শতাংশ এই ধরনের আন্তর্জাতিক মানবিক সহায়তার বিরুদ্ধে মত দিয়েছেন। 
রিপাবলিকান দল ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতিতে বিশ্বাসী হওয়ায় তারা যুক্তরাষ্ট্রের অর্থ বিদেশে ব্যয় না করে দেশের ভেতরে ব্যয় করার পক্ষপাতী।
জরিপে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উঠে এসেছে। সেটি হলো ৫৯ শতাংশ নাগরিক মনে করেন ইসরায়েলের সামরিক হামলা অতিরিক্ত বল প্রয়োগ ও অমানবিক। শুধু ৩৩ শতাংশ নাগরিক এই মতের সঙ্গে দ্বিমত প্রকাশ করেছেন। এর আগে ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে পরিচালিত একটি জরিপে ৫৩ শতাংশ ইসরায়েলের হামলাকে অতিরিক্ত বলেছিলেন। অর্থাৎ, ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংকটে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের জনগণের মধ্যে সহানুভূতির হার বেড়েছে এবং আরও বেশি মানুষ এখন ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার পক্ষে অবস্থান নিচ্ছেন।
গাজায় চলমান যুদ্ধ শুরু হয় ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর। তখন হামাসের নেতৃত্বে একদল যোদ্ধা ইসরায়েলে হামলা চালিয়ে ১,২০০ জনকে হত্যা করে এবং ২৫১ জনকে জিম্মি করে নিয়ে যায়। এর প্রতিক্রিয়ায় ইসরায়েল গাজায় ব্যাপক সামরিক অভিযান শুরু করে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, এই যুদ্ধে এখন পর্যন্ত ৬২ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন এবং লক্ষাধিক মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়েছেন। পুরো গাজা অঞ্চল মানবিক বিপর্যয়ের মুখোমুখি।
বর্তমানে ইসরায়েল ও হামাস একটি সম্ভাব্য যুদ্ধবিরতির বিষয়ে আলোচনা করছে। প্রস্তাবিত চুক্তিতে ৬০ দিনের জন্য যুদ্ধ বন্ধ রাখা, ইসরায়েলি জিম্মিদের মুক্তি দেওয়া এবং গাজায় মানবিক সহায়তা পৌঁছানোর সুযোগ দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। তবে এখনো কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসেনি।
জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় জানিয়েছে, ইসরায়েল গাজায় পর্যাপ্ত খাদ্য, ওষুধ ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী ঢুকতে দিচ্ছে না। যার ফলে দুর্ভিক্ষ আরও তীব্র হচ্ছে। অন্যদিকে ইসরায়েল বলছে, তারা সাহায্য পাঠানোর চেষ্টা করছে, কিন্তু হামাস এসব ত্রাণ চুরি করছে- যা হামাস অস্বীকার করেছে। সূত্র: রয়টার্স