মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে নিয়ে যত সমালোচনা হয়েছে, তার তুলনায় কবিতার প্রতি তার অনুরাগ কম আলোচিত। তবু একটি কবিতা আছে যা ট্রাম্প অত্যন্ত পছন্দ করেন এবং জনসম্মুখে নিয়মিত আবৃত্তি করেন। হোয়াইট হাউস গত মাসে এটিকে সংক্ষিপ্ত চলচ্চিত্রে রূপান্তর করেছে। চলচ্চিত্রটির নাম ‘দ্য স্নেক’, যা মূলত অস্কার ব্রাউন জুনিয়রের লেখা একটি গান।
এই কবিতা ট্রাম্পের নীতি এবং চিন্তাধারার সঙ্গে আশ্চর্যজনকভাবে মিলে যায়। কবিতার শুরু হয় একটি অর্ধেক-বরফ জমা সাপ দিয়ে, যা শিশিরে ভিজে কাঁপছে এবং উষ্ণতার জন্য ভিক্ষা চাইছে। এক ‘দয়ালু নারী’ সাপটিকে মোটা সিল্কের কম্বলে জড়িয়ে আগুনের পাশে রাখে, সঙ্গে মধু ও দুধও দেয়। কিন্তু সাপটি কৃতজ্ঞতার বদলে নারীকে কামড়ে ফেলে।
এই ছন্দগুলো ট্রাম্পবাদের সারমর্ম প্রতিফলিত করে, বাইরের কাউকে অতিরিক্ত আপন করে নিলে সে বিষাক্ত প্রতিশোধ দিতে পারে। এভাবেই তিনি ব্যবসা, রাজনীতি এবং অভিবাসনকে দেখেন। হোয়াইট হাউসের ভিডিওতে তার আবৃত্তির উপর ওভারলে করা হয়েছিল ‘হাতকড়া পরা বাদামী ত্বকের মানুষদের টেনে নিয়ে যাওয়ার দৃশ্য’।
সম্প্রতি জাতিসংঘে তার ভাষণ শুনার সময় আবারো ‘দ্য স্নেক’ কবিতাটি মনে পড়ল। এটি ট্রাম্প ও ব্রিটিশ প্রতিষ্ঠানের সম্পর্কের নিখুঁত প্রতিচ্ছবি – যেখানে ট্রাম্প নিজেই বিষাক্ত সাপ।
গত সপ্তাহে ট্রাম্প ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের অতিথি ছিলেন, উইন্ডসর ক্যাসেলে ভোজে অংশ নিয়েছিলেন এবং রাজা চার্লস তাকে ‘নিকটাত্মীয়’ বলে অভিহিত করেছিলেন। দেশে ফিরে ট্রাম্প যুক্তরাজ্যকে ‘পুরোনো দুনিয়ার নরকের দেশ’ হিসেবে উল্লেখ করেন।
কবিতার শেষ লাইন মনে করিয়ে দেয়—‘তুমি আমাকে কেন কামড়ালে? তুমি তো জানো, তোমার কামড় বিষাক্ত, আর তোমার কামড়ে আমি মরতে যাচ্ছি।’ প্রায় এক বছর ধরে স্টারমার ট্রাম্পকে যতটা সম্ভব কাছে টেনে রাখার চেষ্টা করেছেন, যার মধ্যে ছিল দ্বিতীয় রাষ্ট্রীয় সফর, দুর্গে রাতযাপন, চেকার্সে একদিন কাটানো ও রাজপরিবারের সঙ্গে ফটোসেশন। সবই কেবল বিনিয়োগ ও অর্থের আশায়।
যুক্তরাষ্ট্র-যুক্তরাজ্য টেক চুক্তিকে ডাউনিং স্ট্রিট ‘রেকর্ড-ব্রেকিং বিনিয়োগ’ ঘোষণা করেছে। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন, এক বছরের বেশি আগে ঘোষিত প্রকল্পগুলোকে আবার নতুন করে তুলে ধরা হচ্ছে, যেখানে যুক্তরাজ্যের সাধারণ জনগণ লাভের পরিবর্তে প্রভাবিত হতে পারে।
বিশেষ করে এম ২৫-এর ধারে ব্ল্যাকস্টোন ও গুগলের ডেটাসেন্টারগুলোতে বড় ধরনের কর্মসংস্থান হবে না। নির্মাণকালে সর্বোচ্চ ১,২০০ কর্মী লাগলেও স্থায়ীভাবে প্রতিটি ডেটাসেন্টারে কাজ করবে মাত্র ৪০ জন। এসব ডেটাসেন্টার মূলত ডেটা সংরক্ষণ করবে, উৎপাদন নয়।
উত্তর নর্থাম্বারল্যান্ডের ব্ল্যাকস্টোন স্থাপনা ৫ লাখ বর্গমিটারের বেশি জায়গা নিয়ে সর্বোচ্চ ১০টি ডেটাসেন্টার অন্তর্ভুক্ত করবে। এসব স্থাপনাগুলো সিলিকন ভ্যালির নিয়ন্ত্রণে থাকবে, যেখানে ব্রিটিশ সরকার ও জনগণ প্রভাবিত হবে।
ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের এআই বিশেষজ্ঞ সিসিলিয়া রিক্যাপ উল্লেখ করেছেন, ‘এগুলো ব্রিটিশ ভূমিতে আমেরিকান সামরিক ঘাঁটির সমতুল্য।’ লন্ডনের পূর্বাঞ্চলীয় টাওয়ার হ্যামলেটস ইতিমধ্যেই সতর্ক করেছে, ডেটাসেন্টারের অতিরিক্ত সংযোগ বিদ্যুৎ ও পানির উপর চাপ বাড়াবে, যা ভবিষ্যতে বাড়ি নির্মাণে ব্যাঘাত ঘটাবে।
সাবেক ব্যাংক অফ ইংল্যান্ড ডেপুটি গভর্নর জন কানলিফ বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র আন্তর্জাতিক পেমেন্ট সিস্টেমে আধিপত্যকে অস্ত্রে রূপান্তর করতে পারে এবং হোয়াইট হাউসের নির্দেশ অমান্যকারী যেকোনো দেশকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।
শেষ পর্যন্ত, ট্রাম্প ও তার সমর্থিত প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোকে প্রতিশ্রুতির চেয়ে বাস্তবিকভাবে আরও বেশি ‘বিষাক্ত’ হিসেবে দেখা যায়—সঠিক সংরক্ষণ, ন্যায্য ভাগ বা স্থায়ী কর্মসংস্থান নয়, বরং নিজস্ব স্বার্থ এবং নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা। যেমন কবিতার সাপটি, যাকে আশ্রয় দেওয়া হয়েছিল, শেষ পর্যন্ত কামড়ে ফেলে।
লেখক: দ্য গার্ডিয়ানের কলামিস্ট আদিত্য চক্রবর্তী