পবিত্র বাইবেলের একটি সুপরিচিত ঘটনা—‘চার হাজার মানুষকে অন্নদান’—গল্প থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে এক ইরানি লেখক প্রশ্ন তুলেছেন— যদি যিশুখ্রিস্ট (ঈসা আ.) আজ বেঁচে থাকতেন, তিনি কি ভ্যাটিকানে থাকতেন—নাকি গাজার উদ্দেশে যাত্রা করা ফ্রিডম ফ্লোটিলার সঙ্গে যেতেন?
হাবিব আহমদজাদে নামের ওই ইরানি লেখক বলেন, আমি একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও মুসলিম লেখক-পরিচালক। যতটা আমি আমার নবী মুহাম্মদ (সা.)-কে সম্মান করি, ততটাই আমি অন্য ধর্মীয় নেতা ও নবীদেরও ভালোবাসি, বিশেষ করে মুসা ও ঈসা (আ.) বা যিশুকে। আমি পুরাতন ও নতুন নিয়মের গ্রন্থ পড়ি এবং আমার ছাত্রদের উদ্ধৃত করি।
তিনি বলনে, ‘অনেক দিন আগে আমি রোমে নতুন পোপের অভিষেকের অনুষ্ঠান দেখেছিলাম। বিশাল ভোজসভা, বিলাসবহুল পোশাক, আর নিস্তব্ধতা—যা শুরু হয় নির্জন মঠে এবং শেষ হয় রোমে।’
এ সময় তিনি যিশুখ্রিস্টকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘কিন্তু হে খ্রিস্ট, নতুন নিয়মে আমি তোমাকে চিনেছি একজন মানুষ হিসেবে, যিনি শুধু লোকদের ক্ষুধা-তৃষ্ণার প্রতি সহানুভূতি প্রকাশই করেননি, বরং শহর থেকে শহরে ঘুরে বেড়িয়েছেন মানুষকে বাঁচানোর জন্য’।
তাহলে আমার মনে প্রশ্ন জাগল: তুমি যদি আজ ভ্যাটিকানে থাকতে, এই সম্মানিত পোপ আর তার বিশাল প্রতিষ্ঠানের জায়গায়, তুমি কি তার মতো রাত ৯টায় উপদেষ্টাদের মাধ্যমে ওয়েবসাইটে একটি অকার্যকর বার্তা লিখে সন্তুষ্ট হতে? তারপর গাজার দানবদের হাতে ক্রুশবিদ্ধ সেই ক্রুদ্ধ মানুষের জন্য একখানা প্রার্থনা করে আরামে বিলাসবহুল বিছানায় ঘুমাতে যেতে? নাকি, সেই একই বাইবেলের কাহিনিগুলো মেনে, আজ তুমি গাজার ক্ষুধার্ত শিশুদের আশীর্বাদ করতে কোনো জাহাজে করে সেখানে রওনা দিতে?
বল, কোনটা সত্য? বাইবেলের বাণী, নাকি তোমার উত্তরসূরির কাজকর্ম?
তোমার উত্তরসূরি যদি সত্যিই বাইবেলকে বিশ্বাস করতেন, তাহলে তাকে এই কাফেলার জাহাজে, সমুদ্রের মাঝে থাকতে হতো।
চার হাজার মানুষকে অন্নদান
বাইবেলের কাহিনী থেকে আহমদজাদে লিখেছেন, একদিন, বিপুল জনতা তার চারপাশে জড়ো হয়েছিল, আর তারা আবার ক্ষুধার্ত ছিল। যিশু তার শিষ্যদের ডেকে বললেন,
‘আমি এই জনতার প্রতি দয়া অনুভব করছি, কারণ তারা টানা তিন দিন ধরে আমার সঙ্গে আছে এবং তাদের কাছে খাওয়ার কিছু নেই। আমি যদি তাদের উপবাসী অবস্থায় বাড়ি পাঠাই, তাহলে তারা পথেই অজ্ঞান হয়ে পড়বে। কারণ অনেকে অনেক দূর থেকে এসেছে।’
তখন শিষ্যরা অবাক হয়ে বলল, ‘এমন নির্জন জায়গায় আমরা কোথায় এত রুটি পাব, যাতে সবার ক্ষুধা মেটে?’
যিশু জিজ্ঞাসা করলেন, ‘তোমাদের কাছে কতগুলো রুটি আছে?’ তারা বলল, ‘মাত্র সাতটি’।
তখন তিনি জনতাকে মাটিতে বসতে বললেন। তিনি ৭টি রুটি নিলেন, কৃতজ্ঞতা জানালেন, ভাঙলেন এবং শিষ্যদের দিলেন। শিষ্যরা তা লোকদের মধ্যে বিলিয়ে দিল। তারা আরও কিছু ছোট মাছ পেল, যিশু তা-ও আশীর্বাদ করে লোকদের সামনে রাখতে বললেন।
সবাই খেয়ে তৃপ্ত হলো। পরে শিষ্যরা সাত ঝুড়ি ভাঙা টুকরো কুড়িয়ে নিল। সেখানে প্রায় চার হাজার লোক ছিল। শেষে যিশু জনতাকে বিদায় দিলেন এবং তৎক্ষণাৎ শিষ্যদের সঙ্গে নৌকায় উঠে দালমানূথার অঞ্চলে চলে গেলেন।
ফারিসিদের অলৌকিক চাহিদা
এদিকে ফারিসিরা শুনল যে যিশু আসছেন। তারা তাকে পরীক্ষা করতে স্বর্গ থেকে কোনো নিদর্শন চাইলো।
যিশু গভীরভাবে দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন,
‘কেন এই যুগ বারবার কোনো নিদর্শন চায়? সত্যি বলছি, আমি তাদের কোনো নিদর্শন দেব না।’
তারপর তিনি নৌকায় উঠে হ্রদ পেরিয়ে গেলেন।
ফারিসি ও হেরোদের খামির
কিন্তু শিষ্যরা যথেষ্ট রুটি আনতে ভুলে গিয়েছিল—নৌকায় তাদের কাছে শুধু একখানা রুটি ছিল।
তখন হ্রদের ধারে হাঁটতে হাঁটতে যিশু বললেন, ‘ফারিসি ও হেরোদের খামির থেকে সাবধান।’
তারা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করতে লাগল যে তারা রুটি আনেনি।
যিশু বুঝতে পেরে বললেন, ‘তোমরা রুটি না থাকার ব্যাপার নিয়ে কেন আলোচনা করছ? এখনো কি বুঝতে পারোনি? তোমাদের হৃদয় কি এতটাই কঠিন? তোমাদের চোখ আছে, অথচ দেখো না? কান আছে, অথচ শোনো না? মনে নেই, আমি যখন পাঁচ রুটি দিয়েই পাঁচ হাজার লোককে খাওয়ালাম, তখন কত ঝুড়ি টুকরো তুলেছিলে?’
তারা বলল, ‘১২টি’।
তিনি বললেন, ‘যখন সাত রুটিতে চার হাজার জনকে খাওয়ালাম, তখন কত ঝুড়ি টুকরো তুলেছিলে?’
তারা বলল, ‘৭টি’।
তখন তিনি বললেন, ‘তবুও কি তোমরা বুঝতে পারছ না?’
ইরানি লেখকের ভাষায়, আমি সাহস করে বলছি, আমার কাছে এই সাহসী নারী-পুরুষেরা—যারা গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা-তে আছে—তোমার প্রকৃত উত্তরসূরি। যেমন- আমি অধিকাংশ মুসলিম দেশের নেতাদেরকে মুহাম্মদ (সা.)-এর প্রকৃত অনুসারী মনে করি না। যেমন নেতানিয়াহুর কাজকর্মকে মুসা বা ইহুদি ধর্মের সঙ্গে যুক্ত করা যায় না। যেমন ট্রাম্প আর পশ্চিমা নেতাদেরকে গণতন্ত্র বা মানবতার প্রতীক বলা যায় না।
তাহলে হে যিশু! ফিরে এসো, আর সত্যের অনুসারীদের সঙ্গে সেই জাহাজে ওঠো।
আজকের বিশ্বে আমরা যিশু খ্রিস্টকে আহ্বান করি—আরামদায়ক প্রাসাদে নয়, বরং সেই নৌযানে ফিরে আসুন যেখানে সাহসী মানুষগুলো মানবতার জন্য যাত্রা করছে গাজার উদ্দেশে।
কারণ প্রকৃত খ্রিস্টধর্ম কেবল প্রার্থনায় সীমাবদ্ধ নয়—বরং ক্ষুধা, যন্ত্রণা ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর নামই খ্রিস্টধর্ম।
সূত্র: মেহের নিউজ