ফিলিস্তিনে ইসরায়েলের আগ্রাসন

কবরস্থানে থাকছেন গাজার বাসিন্দারা

ডেস্ক রিপোর্ট
  ২৪ অক্টোবর ২০২৫, ১২:১৫

সাজানো-গোছানো ঘর ছিল। ঘরের সামনে ছিল উঠোন, খেলার মাঠ, বাগান। গাজায় ফিলিস্তিনিদের সবই ছিল। ইসরায়েলের দুই বছর ধরে চালানো নির্বিচার হামলায় এখন কিছু নেই। চারদিকে কেবল ধ্বংসস্তূপ।
গাজার অধিকাংশ এলাকা দখল করে ইসরায়েল উপকূলীয় ছোট এলাকায় ঘনবসতিপূর্ণ পরিবেশে ফিলিস্তিনিদের থাকতে বাধ্য করছে। উপায়ান্তর না দেখে ফিলিস্তিনিরা এখন কবরস্থানে তাঁবু খাটিয়ে শিশুসন্তান নিয়ে থাকছেন। সেখানে শিশুদের জন্য নেই খেলার জায়গা। তারা গোরস্তানে খেলছে। 
গাজায় যুদ্ধবিরতি হলেও বাসস্থান, খাবার, বিশুদ্ধ পানি ও বিদ্যুৎ নিয়ে দুর্ভোগ কাটেনি ফিলিস্তিনিদের।
ইসরায়েলের হামলায় গাজার ৮০ শতাংশের বেশি বাড়িঘর ধ্বংস হয়ে গেছে। বাসিন্দাদের প্রায় সবাই বাস্তুচ্যুত। 
বৃহস্পতিবার আলজাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়, গাজাজুড়ে বাসস্থান ধ্বংসের পর আশ্রয় বা ফিরে যাওয়ার জন্য কোনো ঘর না থাকা হাজার হাজার বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনি শেষ উপায় হিসেবে কবরস্থানে তাঁবু খাটাচ্ছেন। কারণ, একটি ভঙ্গুর যুদ্ধবিরতি চুক্তি সত্ত্বেও উপত্যকায় মানবিক বিপর্যয় তীব্র আকার ধারণ করেছে।
দক্ষিণাঞ্চলীয় খান ইউনিস শহর থেকে আলজাজিরার হিন্দ খোদারি জানান, এ কবরস্থান জীবিতদের জন্য ছিল না। কিন্তু এখন এটি এমন কয়েক ডজন পরিবারের আবাসস্থল, যাদের আর কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই। খোদারি বলেন, ফিলিস্তিনিরা ‘তাদের ইচ্ছার কারণে নয়, বরং এটিই শেষ খালি জায়গা’ বলে এ স্থানে ক্যাম্প করছে। কবরস্থানগুলো পছন্দের কারণে নয়, বরং হতাশার কারণে আশ্রয়স্থলে পরিণত হয়েছে। 
উত্তর গাজা শহর বেইত হানুন থেকে বাস্তুচ্যুত ১২ সন্তানের বাবা রামি মুসলেহ কবরস্থান ছাড়া অন্য কোনো কার্যকর বিকল্প খুঁজে পাননি। তিনি বলেন, ‘অভিভাবকদের জন্য মানসিক আঘাত ভারী। সমাধিস্তম্ভের মধ্যে সন্তানদের লালন-পালনের মাধ্যমে যুদ্ধের মানসিক আঘাত আরও খারাপ হয়।
আরেক বাসিন্দা সাবাহ মুহাম্মদ বলেন, কবরস্থানগুলো এখন তাদের সব পবিত্রতা হারিয়ে ফেলেছে। গাজায় মৃতদের জন্য জমি এখন জীবিতদের জন্য একমাত্র আশ্রয়স্থল।
জাতিসংঘের মতে, যুদ্ধের সময় গাজা উপত্যকায় কমপক্ষে ১৯ লাখ মানুষ, অথবা জনসংখ্যার প্রায় ৯০ শতাংশ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। অনেকে ১০ বা তারও বেশি বার বাস্তুচ্যুত হয়েছেন।

আল জাজিরা জানায়, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বা ডব্লিউএইচও বলছে, গাজার ১৫ হাজার বাসিন্দাকে চিকিৎসার জন্য জরুরি ভিত্তিতে বিদেশে নেওয়া প্রয়োজন। এ জন্য ইসরায়েলের কাছে অনুমতি চেয়েছে তারা। তবে যুদ্ধবিরতি চুক্তির পর থেকে গাজা ও মিসরের মধ্যে রাফা সীমান্ত ক্রসিং বন্ধ রয়েছে। 
বার্তা সংস্থা আনাদোলু জানায়, ১০ অক্টোবর যুদ্ধবিরতি শুরুর পর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা গাজা থেকে ৪১ জন গুরুতর অসুস্থ রোগীকে অন্য দেশে নিয়ে চিকিৎসা দিচ্ছে। ইসরায়েলের হামলার মুখে গাজার স্বাস্থ্য ব্যবস্থা একেবারে ভেঙে পড়ায় রোগীদের অন্য দেশের নেওয়ার প্রয়োজন পড়ছে।
রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স বলেছেন, ইসরায়েল ও হামাস গাজায় যুদ্ধবিরতি দৃঢ়ভাবে মেনে চলছে। ইসরায়েলে এক অনানুষ্ঠানিক অনুষ্ঠানে ভ্যান্স এ কথা বলেন। 
তিনি বলেন, ‘আমরা আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বলতে পারি, ইসরায়েল যুদ্ধবিরতি মেনে চলছে, হামাস যুদ্ধবিরতি মেনে চলছে। তবে ব্যতিক্রম আছে; সেটা খুব কম। মাঝে মাঝেই কিছু ঘটনা ঘটে। কিন্তু এখনও পর্যন্ত যুদ্ধবিরতি বহাল আছে। 
বিভিন্ন গণমাধ্যমের খবর থেকে জানা যায়, ইসরায়েলের বিরুদ্ধে কয়েক ডজনবার যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠেছে। যুদ্ধবিরতি চলাকালে তারা কয়েক ডজন ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে। গতকালও গাজার বানি সুহেইলি এলাকায় ইসরায়েলের ড্রোন হামলায় এক ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।