নাইজেরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের একটি স্কুলে বন্দুকধারীদের হামলায় অন্তত ২৭৫ জন শিক্ষার্থী নিখোঁজ হয়েছে। এসব শিশুদের অধিকাংশের বয়স ৮ থেকে ১৫ বছরের মধ্যে। তাদের অপহরণ করা হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। নিখোঁজ শিশুদের সন্ধানে একটি অনুসন্ধান ও উদ্ধারকারী দল মোতায়েন করেছে কর্তৃপক্ষ।
দেশটির কাদুনা রাজ্যের স্থানীয় সরকারি কর্মকর্তারার বরাতে মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার (৭ মার্চ) কুরিগা স্কুল থেকে অপহরণের বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়। তবে ঠিক কতজন শিশু অপহরণ হয়েছে, তার কোনো পরিসংখ্যান পাওয়া যায়নি।
শুক্রবার রাজধানী আবুজা থেকে আল-জাজিরার ফিদেলিস এমবাহ জানান, স্কুল কর্তৃপক্ষ রাজ্যের গভর্নরকে জানিয়েছে, অপহৃত শিক্ষার্থীদের মধ্যে ২৫ জনকে তাদের বাবা-মায়ের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু ২৭৫ জন এখনও নিখোঁজ রয়েছে। শিশুদের উদ্ধারের জন্য একটি অনুসন্ধান ও উদ্ধারকারী দল মোতায়েন করা হয়েছিল। নিখোঁজদের মধ্যে ১৭৫ জনের বয়স ৮ থেকে ১৫ বছরের মধ্যে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
আফ্রিকার সবচেয়ে জনবহুল দেশ নাইজেরিয়ায় মুক্তিপণের জন্য অপহরণ একটি সাধারণ ঘটনা। সেখানে ভারী সশস্ত্র অপরাধী দলগুলো অতীতে স্কুল ও কলেজগুলোকে লক্ষ্যবস্তু করেছে। বিশেষত উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে। যদিও এই ধরনের আক্রমণ সম্প্রতি অনেকটাই কমে এসেছে।
কুরিগার স্থানীয় কাউন্সিলর ইদ্রিস মায়ালুরা জানান, বন্দুকধারীরা প্রথমে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ১০০ শিক্ষার্থীকে ধরে নিয়ে গেলেও পরে তাদের ছেড়ে দেয় এবং অন্যরা পালিয়ে যায়।
অভিভাবক ও বাসিন্দারা অপহরণের জন্য এলাকায় নিরাপত্তার অভাবকে দায়ী করেছেন।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল শিক্ষার্থীদের নিরাপদে উদ্ধার এবং অপরাধীদের জবাবদিহিতার আওতায় আনার আহ্বান জানিয়েছে কর্তৃপক্ষকে। তারা বলেছে, স্কুলগুলো হওয়া উচিত নিরাপদ স্থান। কোনো শিশুকে তাদের শিক্ষা ও জীবনের মধ্যে একটিকে বেছে নিতে যেন না হয়। স্কুলগুলোতে হামলা ঠেকাতে, শিশুদের জীবন ও তাদের শিক্ষার অধিকার রক্ষায় অবিলম্বে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানায় মানবাধিকার সংগঠনটি।
অপহরণ করা শিক্ষার্থীদের একজনের মা ফাতিমা উসমান। তিনি টেলিফোনে বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেন, আমরা জানি না কি করা উচিত। আমরা সবাই অপেক্ষা করছি সৃষ্টিকর্তা কী করেন, তা দেখার জন্য!
হাসান আব্দুল্লাহি নামে আরেক অভিভাবক রয়টার্সকে বলেন, স্থানীয় গোয়েন্দারা বন্দুকধারীদের প্রতিহত করার চেষ্টা করেছিল, কিন্তু পরাস্ত হয়। অপহৃত শিক্ষার্থীদের মধ্যে ১৭ জনই আমার সন্তান। আমি খুবই চিন্তিত যে, সরকার আমাদের এই ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ অবহেলা করেছে।
অপহরণের ভয়ে নাইজেরিয়ায় হাজার হাজার শিশু স্কুলে যাওয়া থেকে বিরত থাকছে। ২০১৪ সালে বোর্নো রাজ্যের চিবোক গ্রাম থেকে দুই শতাধিক স্কুলছাত্রীকে অপহরণ করে সশস্ত্র গোষ্ঠী বোকো হারাম।
কাদুনায় সর্বশেষ বড় অপহরণের খবর পাওয়া যায় ২০২১ সালের জুলাই মাসে। সেসময় বন্দুকধারীরা একটি অভিযানে দেড় শতাধিক শিশুকে নিয়ে যায়। মুক্তিপণ দেওয়ার কয়েক মাস পরে তারা পরিবারের সাথে পুনরায় একত্রিত হয়েছিল।
যদিও মে মাসে ক্ষমতায় আসার পর থেকে দেশটির রাষ্ট্রপতি বোলা তিনুবু নিরাপত্তাহীনতা কমে যাওয়ার বিষয়টিকে অন্যতম অগ্রাধিকার দিয়েছেন। তবে সশস্ত্র বাহিনী উত্তর-পূর্বাঞ্চলে দীর্ঘস্থায়ীভাবে এবং আরও কয়েকটি ফ্রন্টে লড়ে যাচ্ছে।
আল জাজিরার সংবাদদাতা এমবাহর ভাষ্য, সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে নাইজেরিয়ায় বেশ কয়েকটি হামলা ও অপহরণের ঘটনা ঘটেছে। সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোকে মোকাবেলা ও পরাস্ত করার মতো অস্ত্রের অভাব রয়েছে।
উত্তর-পূর্ব নাইজেরিয়ার মোদিবো আদামা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর পিস অ্যান্ড সিকিউরিটি স্টাডিজের সহযোগী অধ্যাপক ক্রিস কোয়াজা আল-জাজিরাকে বলেন, অপহরণের এমন পুনরাবৃত্তি কেবল 'উচ্চ স্তরের সমন্বয়, পরিশীলিত এবং প্রাণঘাতীতার দুর্ভাগ্যজনক গল্পই' বলে। ক্ষতিগ্রস্ত সম্প্রদায়ের মধ্যেও কিছু লোকের যোগসাজশ রয়েছে অপহরণকারীদের সঙ্গে। কীভাবে এই ধরনের অভিযান পরিচালনা করতে হয়, তা ওই লোকগুলো জানায়। অপরাধী নেটওয়ার্কগুলো সম্প্রদায়ের মধ্যে এমন লোকদের টার্গেট করে (অর্থ দেয়), যারা সরকার সমর্থিত না। বিশেষ করে ক্ষুধা, অনাহার, দারিদ্র্য ও বেকারত্বের মুখোমুখি হওয়া লোকেরা অপহরণকারীদের সঙ্গে কাজ করে থাকে।