বঙ্গবাসী এখন ভোটের উৎসবে শামিল

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
  ১২ মার্চ ২০২৪, ১৩:০৭
জনসভায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়সহ অন্যরা

নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগেই ভারতের মোট ৫শ ৪৩টি সংসদ (লোকসভা) আসনের মধ্যে বিজেপি পশ্চিমবঙ্গের ২০ আসনের প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করেছে।
এদিকে রোববার (১০ মার্চ) পশ্চিমবঙ্গের ৪২টি আসনের ৪২ জন প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছে তৃণমূল।
যদিও ভারতের এ ভোট প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনের। ফলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হারা বা জিত নিয়ে কোনো ধরনের প্রভাব পড়বে না পশ্চিমবঙ্গে।
কারণ বিরোধী জোট ভেঙে যাওয়ায় পশ্চিমবঙ্গের ৪২ আসনে তৃণমূল জয় পেলেও আর যাই হোক, মমতার প্রধানমন্ত্রী হওয়া সম্ভবনা নেই। কিন্তু এবারে নির্বাচনে একটা আঞ্চলিক দল হিসেবে তৃণমূলের কাছে একটি প্রেস্টিজ ফাইট। সবগুলো আসন ধরে রাখতে পারলে ভালো, আর না পারলেও আপাতত হারানোর কিছু নেই।
২০২৬ সালে পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনের প্রভাব পড়তে পারে। যদিও শেষ নির্বাচনে (২০১৯) রাজ্যের ৪২ আসনের মধ্যে বিজেপি পেয়েছিল ১৮ আসন। কিন্তু ২০২১ সালের রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপিকে হারিয়ে মমতা ক্ষমতায় আসেন। ফলে ভারতের ভোটের নিরিখে কোনো সমীকরণ কোথায় গিয়ে থামবে, তা সময়ের আগে কিছুই বলা সম্ভব নয়। তবে একটা অনুধাবন করা যায়।
ধারণা করা যায়, বিরোধী জোট নাহলে এবারও ক্ষমতা থেকে নরেন্দ্র মোদীকে টলানো সম্ভব নয়। তেমনটা ধারণা করা যায়নি, শেষ মুহূর্তে বিহারের মুখ্যমন্ত্রী বিরোধী জোট ভেঙে ৩৬০ ডিগ্রি ডিগবাজি খেয়ে বিজেপিতে যোগদান। ঠিক তেমনটা বোঝা যায়নি মুখে জোট আছে বললেও, পশ্চিমবঙ্গে একটি আসনও কংগ্রেস বা সিপিএমকে না ছেড়ে মমতার ৪২ আসনের প্রার্থী ঘোষণা করে দেওয়া। অথবা দিল্লির আম আদমী পার্টির জোট ভেঙে একলা চলার নীতি। ফলে ভারতের নির্বাচনে আগাম ধারণা করা খুবই অসম্ভব বিষয়।
তবে এটা নিশ্চিত যে, একদিকে বঙ্গবাসী যেমন বিভিন্ন অঙ্ক কষবে তেমন বিনোদনপ্রিয় মানুষ যারা রাজনীতির রং নিজেদের লাগতে দেয় না, তারাও ভোট বিনোদনে শামিল হয়েছেন। আর হবে নাই-বা কেন। বিনোদন জগৎও এখন রিল ছেড়ে রিয়েল লাইফে পা ফেলছে। তাই দেখতে বাংলার মানুষ ভিড় করবে। এই যেমন দিদি নম্বর ওয়ানখ্যাত রচনা ব্যানার্জী, যাকে বাড়ির নারীরা রিয়েলিটি শোতে অতিথিদের ‘এবার বলো’ প্রশ্ন শুনতে অভ্যস্ত ছিলেন। তাকে এখন দেখা যাবে বাড়ির দোরগোড়ায়। তিনি হুগলী কেন্দ্রের প্রার্থী। মঙ্গলবার (১১ মার্চ) রচনাকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, যখন বাংলায় একটা অস্থিরতা চলছে তখন টেলিভিশন ছেড়ে কেন রাজনীতিতে। তিনি বলেন, আমি জানি না, দিদি (মমতা) জানেন। দিদি বলেছেন তাই এসেছি।
অপরদিকে বাংলার বহরমপুর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। বাম থেকে তৃণমূল কোনো জমানাই কংগ্রেসের এই ঘাঁটি গড়তে পারেনি। এখানে পাঁচবারের সাংসদ প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি তথা পোড় খাওয়া রাজনীতিবিদ অধীররঞ্চন চৌধুরী। সেই ব্যক্তিত্বর প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন তৃণমূলের প্রার্থী তথা গুজরাটের বাসিন্দা জনপ্রিয় ক্রিকেটার উইসুফ পাঠান। এছাড়া বর্ধমান-দুর্গাপুর কেন্দ্র থেকে প্রার্থী হয়েছেন, একদা ক্রিকেট বিশ্বকাপ জয়ী বিহারের বাসিন্দা কীর্তি আজাদ। ফলে বাংলার খেলাপাগল মানুষগুলোয় শামিল হয়েছেন।
অনেকে তো মজার ছলে প্রশ্ন রেখেছেন, ‘বাংলায় কি প্রার্থী কম পড়িয়াছে?’ কেউ আবার বলেছেন, ‘অস্বাভাবিক না কোনোদিন দিদির তালিকায় দেখবো কোনো হলিউড সেলিব্রেটি’। এছাড়া বিহারের বাসিন্দা শত্রুঘ্ন সিনহা, বাংলার অভিনেত্রী সায়নী ঘোষ, জুন মালিয়া, অভিনেতা দেব এবার টিকিট পেয়েছেন।  প্রার্থী নাহলেও দিদির দলে আছেন অভিনেত্রী সায়ন্তিকা ব্যানার্জী। যদিও ২০১৯ সালে তাকে বাঁকুড়া থেকে তাকে প্রার্থী করা হয়েছিল। কিন্তু তিনি বিজেপির কাছে দাঁড়াতে পারেননি। তারপর থেকে কলকাতাবাসী হলেও সেই বাঁকুড়া জেলায় দাঁতে দাঁত চেপে পড়েছিলেন। এবার যদি হয়! কিন্তু নেত্রী আর তার ওপর ভরসা রাখতে পারেননি। তারপরও সায়ন্তিকা বলেছেন, দিদি (মমতা) যা বলবেন আমি তাই করব।
ফলে বিভিন্ন অঙ্ক কষে রাজ্যের ৪২ আসনের প্রার্থী ঘোষণা করে দিয়েছেন দলনেত্রী। তবে মমতার এ ধরনের প্রার্থী ঘোষণা নতুন কিছু নয়।  বাধা নিয়ম অনুযায়ী, প্রতিবার কিছু মন্ত্রী, কিছু আমলা কিছু বিনোদন জগতের তারকা থাকে মমতার প্রার্থী তালিকায়। ফলে নতুনত্ব কিছু না থাকলেও এবারের একটা চমক দিয়েছেন নেত্রী। চমক রয়েছে পশ্চিমবঙ্গের বিষ্ণুপুর আসনে। কারণ এই আসনে একে অপরের প্রতিদ্বন্দ্বী সাবেক স্বামী-স্ত্রী। স্বামী বিজেপি প্রার্থী সৌমিত্র খা। অপরদিকে তৃণমূল প্রার্থী স্ত্রী সুজাতা খা।
দাম্পত্য জীবনে একে অপরের সাথে দীর্ঘ দিন কাটিয়েছেন দু’জনে। তিন বছর হলো তারা আলাদা। আর সেই স্বামীর পেছনে স্ত্রীকে লেলিয়ে দিয়েছেন তৃণমূলপ্রধান। ফলে এ কেন্দ্রে বিজেপি-তৃণমূলের হারজিত থেকেও নজর থাকবে দুই প্রার্থীর কি কেচ্ছা কেলেঙ্কারি সামনে আসে। কোনো ঘরোয়া বিষয় বেরিয়ে আসবে না তো? এটাই মনে করছেন বঙ্গবাসী। কারণ দাম্পত্য জীবনে কলহ কার বাড়িতে না থাকে?
উল্লেখ্য, ওই বিষ্ণুপুর কেন্দ্রে দু’বারের জয়ী সংসদ সৌমিত্র খা। গত নির্বাচনে অর্থাৎ ২০১৯ সালে এই সৌমিত্রর হয়ে প্রচার করেছিলেন তার স্ত্রী। কিন্তু এবারে ভিন্ন। ফলে স্বামী-স্ত্রীর লড়াই সাক্ষী হতে চলেছে বিষ্ণুপুর লোকসভা কেন্দ্র। ইতোমধ্যে সৌমিত্র জানিয়েছেন, তার পেছনে ফিরে তাকানোর কিছু নেই। পাশাপাশি তিনি এও বলেছেন, লড়াইটা যদি কোন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বর সাথে সাথে হতো, তাহলে বিষয়টা ভিন্ন ছিল। ফলে আমার কিছু বলার নেই। লড়াই হবে এবং আমি রেকর্ড ভোটে জিতবো।
সুজাতার জবাব, গত নির্বাচনে ওটা আমার ভুল ছিল। আমি ক্ষমাপ্রার্থী। আশা করি, এবার বিষ্ণুপুরবাসী তার ঘরের মেয়ে, আমার প্রতি আস্থা রাখবেন। পাশাপাশি তৃণমূল প্রার্থীর হুংকার সৌমিত্র সংসদ তহবিলের যে ১৫ কোটি রুপি পেয়েছে তা কোথায় খরচ করেছে? হিসাব দেখতে চাই। আর তাই বঙ্গবাসী মজা করে বলছেন, কমবেশি সব পরিবারের স্ত্রী, তার স্বামীর কাছ থেকে হিসেব চেয়ে থাকে। ফলে সৌমিত্রর কাছ থেকে হিসাব চেয়ে সুজাতা কি ভুল করেছেন।
এখানেই শেষ নয়, সবার নজর কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের দিকে। তিনি বিচারপতির আসন ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন। এ নিয়েও বহুমত তৈরি হয়েছে। এই বিচারপতির চাকরি ছিল মাত্র পাঁচ মাস। অথচ মালদা-উত্তর থেকে তৃণমূলের প্রার্থী হয়েছেন পুলিশ কর্মকর্তা (আইপিএস) প্রসুন ব্যানার্জি।
তিনি ৯ তারিখ চাকরি ছেড়ে ১০ মার্চ তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। অথচ তার চাকরি ছিল দীর্ঘদিন।  কতটা আত্মবিশ্বাসী নাহলে তিনি এ কাজ করেন। এসব চর্চাতেই বঙ্গবাসী এখন মশগুল। কোনটা ঠিক আর কি ভুল তার, তা নিয়ে হিসাব-নিকেশ চলছে পাড়ার চায়ের আড্ডা থেকে বাড়ির ড্রইং রুমে। আর এখন তা চলতেই থাকবে।