ফি বছরের মতো আবারও রমজান এসেছে গাজায়। কিন্তু এবার উৎসবমুখর সেই আনন্দ নেই। চারদিকে শুধু ধ্বংসের স্তূপ। ক্ষুধার্ত ফিলিস্তিনিদের হাহাকার। খাবার নেই কোথাও। খাবার থাকলেও আবার সেই খাবার কেনার টাকাও নেই অনেকের। টমেটো, শসা আর শুকনো মটরশুঁটি দিয়েই প্রথম রোজা ভাঙলেন গাজাবাসী। যুদ্ধ, দুর্ভিক্ষে একেবারে আনন্দহীন ইফতার গাজায়-এবারই প্রথম। বিধ্বস্ত উপত্যকাটিতে সোমবার থেকে রোজা শুরু হয়েছে।
মঙ্গলবার এএফপির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গাজার দক্ষিণ সীমান্তে রাফাহ শহরে আশ্রয় নেওয়া ১৫ লাখ মানুষ দিনের শেষে ইফতারের জন্য টিনজাত খাবার এবং মটরশুঁটি খেয়েছেন। খান ইউনিস থেকে বাস্তুচ্যুত বাসিন্দা মোহাম্মদ আল-মাসরি বলেছেন, ‘আমাদের কাছে কিছুই নেই। বাস্তুচ্যুতদের কী আছে? আমরা রমজানের আনন্দ অনুভব করি না।’ খান ইউনিস থেকে বাস্তুচ্যুত আরেক বাসিন্দা ওম মুহাম্মদ আবু মাতারও এএফপিকে বলেছেন, এই বছর রমজানে শুধু রক্ত, দুঃখ, বিচ্ছেদ এবং নিপীড়নের স্বাদ আছে। জাকি আবু মনসুর এএফপিকে বলেছেন, রোজা শুরুর আগে আমার কাছে খুব অল্প পরিমাণ খাবার ছিল। এখন শুধু শসা ও টমেটো আছে। পরবর্তী সময়ে কী খাব জানি না। আমার কাছে কিছু কেনার টাকাও নেই। সমগ্র অঞ্চলে গাজাবাসীরা রমজান মাসে আরও বেশি অভাব অনুভব করছে।
সাহায্য গোষ্ঠীগুলো কয়েক সপ্তাহ ধরে গাজায় দুর্ভিক্ষের ঝুঁকি সম্পর্কে সতর্ক করে আসছে। কিন্তু জাতিসংঘ খাদ্য ও অন্যান্য সাহায্য সরবরাহের জন্য অঞ্চলটির উত্তরে প্রবেশ করতে বিশেষ অসুবিধার কথা জানিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্য দেশগুলো সোমবার উত্তর গাজায় আবার ত্রাণ সরবরাহ করেছে। মঙ্গলবার ভোরে প্রায় ২০০ টন খাবার নিয়ে গাজার উদ্দেশে যাত্রা শুরু করেছে স্প্যানিশ দাতব্য সংস্থার জাহাজ ওপেন আর্মস। মার্কিন দাতব্য সংস্থা ওয়ার্ল্ড সেন্ট্রাল কিচেন (ডব্লিউসিকে) জানিয়েছে, সাইপ্রাসের লারনাকা বন্দর ছেড়ে গাজার পথে রওয়ানা দেয় জহাজটি।
এত এত ধ্বংসযজ্ঞের মধ্যেও গাজাজুড়ে আক্রমণ অব্যাহত রয়েছে বলে জানিয়েছে ইসরাইলি সেনাবাহিনী। একটি সামরিক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সোমবার গাজার দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর খান ইউনিসের হামাদ এলাকায় চলমান হামলায় চার যোদ্ধা নিহত হয়েছেন। এ দিন লেবাননের ভূখণ্ডেও হামলা চালিয়েছে ইসরাইল। এতে একজন নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন বালবেক-হারমেল অঞ্চলের গভর্নর। এছাড়া মঙ্গলবার ইসরাইলি বসতিকারীরা আবারও অধিকৃত পূর্ব জেরুজালেমের আল-আকসা মসজিদ প্রাঙ্গণে হামলা চালায়। যুক্তরাষ্ট্র, কাতার এবং মিসরীয় মধ্যস্থতাকারীরা সপ্তাহব্যাপী আলোচনার মাধ্যমে রোজার আগে যুদ্ধবিরতি এবং জিম্মি বিনিময় চুক্তি আনতে ব্যর্থ হয়েছে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় মঙ্গলবার জানিয়েছে, ৭ অক্টোবর যুদ্ধ শুরুর পর থেকে কমপক্ষে ৩১,১৮৪ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ৭২ হাজার ৮৮৯ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় কমপক্ষে ৭২ জন নিহত হয়েছেন। এছাড়াও হামাসচালিত গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে জাতিসংঘ জানিয়েছে, অপুষ্টি ও পানিশূন্যতার কারণে ২৫ জন মারা গেছে। যাদের অধিকাংশই শিশু। সোমবার জাতিসংঘের সেক্রেটারি জেনারেল অ্যান্তোনিও গুতেরেস মুসলিমদের পবিত্র মাসে বন্দুক বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছেন। বলেছেন, সংঘাত অব্যাহত থাকায় তিনি আতঙ্কিত ও ক্ষুব্ধ।