আমার সঙ্গে প্রায় প্রতিদিনই ২-৩ জন আলাদা ব্যক্তির কথা হয় তাদের জীবনের পরিকল্পনা নিয়ে, আমেরিকায় আসার জন্য তাদের ইচ্ছা-সামর্থ্য-স্বপ্নের সমন্বয় নিয়ে। অনেক সময় দেখা যায় আমার সঙ্গে প্রাথমিক যোগাযোগ সবকিছু একজন মহিলা করেন, সেই সাথে ইন্টারনেট ঘেটে যাবতীয় তথ্য সংগ্রহ আর লেখাপড়ার কাজটাও উনি করেন। তারপর দুজনে মিলে সিদ্ধান্ত নেন যে প্রাথমিক আবেদনকারী হিসেবে হাজব্যান্ড দাঁড়াবেন। কারণ, বিদেশের বিষয়গুলো হাসবেন্ড ভালো বুঝবেন এবং ওয়াইফ হয়তো ঘরের টুকটাক কাজ এর বাইরে কখনো কিছু করেন নাই। দেখুন, প্রতিটা মানুষের সামর্থ্য এবং যোগ্যতা আলাদা, প্রতিটা পরিবারের প্রায়োরিটিও আলাদা। তাই গণহারে বলা যায় না নারী নাকি পুরুষের কার প্রাইমারি অ্যাপ্লিকেন্ট হওয়া উচিত। তাই আমি জেনারেলাইজেশন করা থেকে বিরত থাকছি।
প্রথমে আসি টুকটাক ইংরেজি কথা চালাতে পারার দক্ষতায়। এই যোগ্যতা প্রাইমারি আবেদনকারীর থাকতেই হবে কারণ কর্মক্ষেত্রে কাজ বোঝা এবং সহকর্মীর সঙ্গে একত্রে কাজ করার জন্য কমিউনিকেশনের দক্ষতার বিকল্প নেই। কিন্তু স্বামী-স্ত্রী দুজনেই যদি ইংরেজিতে মোটামুটি কথা বলতে পারেন তাহলে মনে রাখবেন দুইজনের মধ্যে যার প্রোফাইল বেশি উজ্জ্বল এবং ডায়নামিক উনি বাদে অন্যজন যেন প্রাইমারি আবেদনকারী হয়।
আমার এই পরামর্শ শুনে অনেকেই অবাক হন। তাদের জন্য বিষয়টা সহজে ব্যাখ্যা করি। যদি কারো ইবি৩ প্রসেসিং করে আমেরিকায় গ্রীন কার্ড সহ আসার যোগ্যতা থাকে, তাহলে বুঝতে হবে তারা যথেষ্ট ভালো আয় রোজগার করেন। যদি এই ইনকামের প্রধান অংশ পুরুষের হাত দিয়ে আসে তাহলে ওই ভদ্রলোক অত্যন্ত স্মার্ট এবং যোগ্যতা সম্পন্ন তা বলার অপেক্ষা রাখে না। আমেরিকার মত উর্বর মাটিতে এই বেশি ডায়নামিক এবং দৌড়েঝাঁপ করতে পারা ব্যক্তিটি সহজে অনেক দূর যেতে পারবেন। এখন যদি এই লোকটাকে সপ্তাহে ৪০ ঘন্টা রেস্টুরেন্টে বার্গার উল্টানোর কাজে আটকা থাকতে হয় তাহলে তার স্ত্রী নতুন চাকরি বা পারিবারিক ব্যবসা চালু করতে হিমশিম খাবেন। তাহলে সামগ্রিকভাবে পরিবারের মোট রোজগার কমে যাবে।
তার চেয়ে বরং ওই ভদ্র মহিলা যদি এক বছর প্রতিশ্রুত কাজের জায়গায় ব্যস্ত থাকেন এবং পরিবারকে বেসিক ইনকাম দিয়ে সহযোগিতা করেন, তাহলে এই একটা বছরে নিজের যোগ্যতায় ভাল একটা চাকরি ম্যানেজ করা, ইনোভেটিভ ব্যবসা দাঁড় করানো, অথবা বাংলাদেশ তার ব্যবসার নতুন এক্সটেনশন আমেরিকায় সম্প্রসারিত করা -- এই সবকিছু কিন্তু বেশি ডায়নামিক এবং কর্মতৎপর ব্যক্তির পক্ষে খুব একটা কঠিন হবে না। দরকার হলে গাড়িটা টান দিয়ে একটা উবার ট্রিপ দিয়ে আসা, অথবা ডোরড্যাশে ফুড ডেলিভারি করে কিছু বাড়তি রোজগার করা, এগুলো করার জন্য বন্ধন মুক্ত, ফ্রি থাকতে হয়। নতুন ব্যবসা, দোকান অথবা একটা ফুড ট্রাক চালু করতেও ৪-৫ মাস সময় লেগে যায়, টানা কাজ করে যেতে হয়। এগুলো থেকে এক সময় অনেক ভালো রোজগার আসবে সত্য কিন্তু প্রাথমিক পর্যায়ে যে শ্রম আর সময় দিতে হয় সেটা বিনিয়োগ করা সম্ভব হবে, যদি বেশি যোগ্যতা সম্পন্ন এবং কর্মতৎপর মানুষটা অ্যাভেইলেবল থাকেন।
আশা করি বুঝতে পারছেন যে আমি নারী পুরুষের মধ্যে জেন্ডার ভিত্তিতে ডিসক্রিমিনেশন করছি না, কিন্তু একটা পরিবারের সামগ্রিক সমৃদ্ধির জন্য যে প্ল্যানিং দরকার সেখানে আমার মতামত জানাচ্ছি মাত্র। অনেক পরিবার আছে যেখানে স্ত্রী স্বামীর থেকে বেশি রোজগার করেন। উন্নত বিশ্বে হাজব্যান্ড ওয়াইফ দুজনেই একসাথে রান্নাবান্না, বাসা বাড়ির কাজ করেন, আবার দুজনেই বাইরে কাজ করে সামর্থ্য অনুসারে ফ্যামিলিকে সাপোর্ট দেন। কালচার পরিবর্তনের সাথে মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি ও অনেকখানি বদলে যায়। আপনার পরিবারের জন্য যেটা ভালো সেই সিদ্ধান্তই আপনার নেওয়া উচিত।
লেখা:মামুন রশিদ।ভার্জিনিয়া,মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র
(ফেসবুক থেকে সংগৃহীত)