ট্রাম্প ও কমলা মধ্যপ্রাচ্য সংকট সমাধানে কি অক্ষম হবে

রবার্ট ইনলাকেশ
  ০৩ আগস্ট ২০২৪, ১৩:০১

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর যুক্তরাষ্ট্র সফরকে অনেক তকমা দেওয়া হয়েছে। তবে বেশির ভাগ বিশ্লেষক একটি সত্য মিস করেছেন। নেতানিয়াহু প্রমাণ করেছেন, হোয়াইট হাউসে যিনিই ক্ষমতায় আসুন, মার্কিন সরকারের পশ্চিম এশিয়া কৌশল একই আত্মবিধ্বংসী পথে চালিত হবে। নীতি গ্রহণে পরিবর্তন ও আপসে অস্বীকৃতি এটাই প্রমাণ করছে। 
মার্কিন করপোরেট মিডিয়া কমলা হ্যারিস ও ডোনাল্ড ট্রাম্পকে একে অপরের পুরোপুরি বিরোধী হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা করেছে। তবুও আরব বিশ্ব ও বৃহত্তর অঞ্চলের প্রতি উভয় পক্ষের গৃহীত কৌশলের উদ্দেশ্য এক। তারা ইসরায়েলকে সামনে রেখে একটি আক্রমণাত্মক জোটের মাধ্যমে এ অঞ্চলে আধিপত্য টিকিয়ে রাখতে চায়। 
বারাক ওবামা প্রশাসন মেয়াদের শেষ পর্যায়ে পশ্চিম এশিয়া নিয়ে একটি কঠিন দোটানায় পড়েছিল। তারা হয় ইরানের সঙ্গে শান্তি স্থাপন করবে অথবা সর্বাত্মক যুদ্ধের ঝুঁকি নিয়ে ইরানকে মোকাবিলা করতে একটি আঞ্চলিক জোট গঠন করবে। সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালাতে গিয়ে লক্ষাধিক মানুষ মারা যায় এবং মার্কিন নাগরিকদের ট্রিলিয়ন ডলার খরচ হয়। এত কিছুর পরও তাদের কর্মকাণ্ডে শুধু মার্কিন আধিপত্যবিরোধীরাই শক্তিশালী হয়েছিল।
আরব বসন্ত নামক অভ্যুত্থানের সময় যুক্তরাষ্ট্র আরব সরকারগুলোকে উৎখাত করতে চেয়েছিল, যারা তার আঞ্চলিক হিসাবনিকাশের প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে দাঁড়িয়েছিল। এই নীতি লিবিয়ায় ন্যাটো আক্রমণের সময় সবচেয়ে স্পষ্ট হয়ে ওঠে। এতে একদিকে প্রেসিডেন্ট মুয়াম্মার গাদ্দাফির ক্ষমতাচ্যুতি ঘটে; অন্যদিকে সিরিয়ায় বাশার আসাদকে ক্ষমতা থেকে অপসারণে ব্যর্থ হয়। এ সময় যুক্তরাষ্ট্র ইয়েমেনের সানায় ক্ষমতা দখলকারী আনসারুল্লাহ পার্টিকে (হুতি) উৎখাত করতে বহুজাতিক সৌদি নেতৃত্বাধীন জোটকেও সমর্থন দেয়। 
ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় থাকাকালে সামরিক ও কূটনৈতিক উভয় ক্ষেত্রে এমন এক পদ্ধতি উপেক্ষা করেছিলেন, যা মার্কিন সরকারকে ওই অঞ্চলে সবার ওপরে রাখত। তিনি একতরফা জেসিপিওএ থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করে ইরানের ওপর ব্যাপক নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। কথিত ‘আব্রাহাম অ্যাকর্ডস’ অনুসরণ করে দুবাই, বাহরাইন, মরক্কো ও সুদানের সঙ্গে ইসরায়েলের সম্পর্ক স্বাভাবিক করার চুক্তি প্রণয়নে কাজ করেছিলেন।
ট্রাম্প প্রশাসন ফিলিস্তিনের সমস্যা সমাধানে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত দ্বিরাষ্ট্র সমাধান পরিত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। তিনি পরিস্থিতি বদলানোর জন্য ফিলিস্তিনিদের কাছে কোনো আশার প্রস্তাব করেননি। অন্যদিকে, ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে মরক্কোর ওপর চাপ দিতে তিনি পশ্চিমা সাহারা নিয়ে আন্তর্জাতিক গোষ্ঠীর দীর্ঘদিনের অবস্থান অস্বীকার করেছিলেন। 
বাইডেন ক্ষমতা গ্রহণ করে আফগানিস্তান থেকে প্রত্যাহারের মধ্য দিয়ে তাঁর পূর্বসূরিদের কাজগুলো সম্পন্ন করেছিলেন। ডেমোক্রেটিক প্রেসিডেন্ট যেভাবে বিপর্যয়কর উপায়ে প্রত্যাহার করে নিয়েছিলেন, তা রিপাবলিকানদের ক্রোধ উস্কে দিয়েছিল। বাস্তবতা হলো, ট্রাম্পও একই পথে হাঁটছিলেন। ইরানের সঙ্গে পরমাণু চুক্তি পুনরুজ্জীবিত করা ও ইয়েমেনে যুদ্ধ শেষ করার প্রতিশ্রুতি দেওয়া সত্ত্বেও প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালনের শুরুতে জো বাইডেন একটি টানেল-ভিশন পদ্ধতির কথা বলেছিলেন। ডোনাল্ড ট্রাম্পও আব্রাহাম অ্যাকর্ডের মধ্য দিয়ে একই কাজ চালিয়ে যেতে চেয়েছিলেন।
যদিও কমলা হ্যারিসকে জো বাইডেনের চেয়ে আরও প্রগতিশীল প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে; তিনি সম্প্রতি বলেছেন, দ্বিরাষ্ট্রীয় সমাধানই ফিলিস্তিন-ইসরায়েলের জন্য ‘একমাত্র পথ’। বাস্তবে তাঁর অবস্থান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন থেকে আলাদা কিছু নয়। 
আরব বিশ্ব ও তেহরানের সঙ্গে ওয়াশিংটনের সম্পর্কে বর্তমান মার্কিন নীতি নিয়ে কমলা হ্যারিস পাল্টা কোনো দৃষ্টিভঙ্গি হাজির করেননি। রাজনৈতিক জীবনের পুরোটা সময় তিনি ইসরায়েল লবিদের কাছ থেকে বিপুল তহবিল পেয়েছেন। তিনি বর্তমানে কঠিন বিপাকে পড়েছেন। তিনি ইসরায়েলপন্থি দাতা ও রাজনৈতিক মিত্রদের যেমন বিরক্ত করতে চাইবেন না; একইভাবে ফিলিস্তিনিদের প্রতি সহানুভূতিশীল ভোটারদেরও হারানোর ঝুঁকি নেবেন না। 
যদিও আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ট্রাম্পকে জনপ্রিয় বলে মনে হচ্ছে; এ অঞ্চলে তাদের কৌশলে উভয়ের মধ্যে মৌলিক পার্থক্য আছে কার্যত এমন কোনো লক্ষণ নেই। তারা দু’জনেই ইসরায়েলকে না বলতে এবং তাদের মিত্রকে যে কোনো ফিলিস্তিনি পক্ষের সঙ্গে চুক্তি করতে বাধ্য করতে অক্ষম। কেউই ইরানের সঙ্গে শান্তিপূর্ণ সমাধান চান না এবং পুরো অঞ্চলকে এখনও একটি দাবার বোর্ড হিসেবে দেখছেন। এখানে তারা চীন ও রাশিয়ার ওপর প্রভাব বিস্তার করতে নিজেদের খেলাটা খেলতে চেষ্টা করেন। এ ক্ষেত্রে তারা বিজয় পেতে অক্ষম। তারা কোনো আত্মসমীক্ষায়ও অক্ষম। সুতরাং প্রতিটি সমস্যায় তাদের সমাধান আরও বেশি সহিংসতামূলক। 
রবার্ট ইনলাকেশ: লন্ডনভিত্তিক রাজনৈতিক বিশ্লেষক, সাংবাদিক ও চলচ্চিত্র নির্মাতা; আরটিডটকম থেকে ভাষান্তর ইফতেখারুল ইসলাম