ভারত নিয়ে মামদানির গর্ব, তবে মোদির কঠোর সমালোচকও

ডেস্ক রিপোর্ট
  ০৮ নভেম্বর ২০২৫, ১৩:০০


ভারতীয় বংশোদ্ভূত জোহরান মামদানি বিপুল জনপ্রিয়তা নিয়ে নিউইয়র্ক সিটিতে মেয়র পদে জয়লাভ করেছেন। তাঁর জয়ে অভিবাসীরা সবচেয়ে বেশি খুশি। বিশেষ করে ভারতীয়দের জন্য তিনি সম্মান বয়ে এনেছেন। তিনি প্রথম দক্ষিণ এশীয় ও মুসলিম হিসেবে মেয়র হয়ে ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন।
মামদানি তাঁর বিজয়ী বক্তব্যে ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুর বক্তব্য উদ্ধৃতি করেন, যা যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী ভারতীয়দের জন্য বিশেষ মুহূর্ত ছিল। শুধু তাই নয়, মামদানি অনুষ্ঠান শেষ করার সঙ্গে সঙ্গে মঞ্চে বেজে ওঠে বলিউডের জনপ্রিয় ‘ধুম মাচালে’ গান।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কড়া সমালোচক মামদানি। পাশাপাশি তিনি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিরও কড়া সমালোচনা করেন। বিশেষ করে গুজরাট গণহত্যার জন্য ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে তিনি ‘যুদ্ধাপরাধী’ হিসেবেও আখ্যা দিয়েছিলেন।
পৃথিবীর রাজধানী খ্যাত নিউইয়র্ক শহরের মেয়র স্বাভাবিকভাবেই বিশ্ব মঞ্চে বিশেষ গুরুত্ব পান। ট্রাম্পের কট্টোর সমালোচক মামদানি সে হিসেবে আরও বেশি মার্কিন প্রশাসনের রোষানলে পড়তে পারেন। তিনি মোদি ও মোদির বিজেপির একজন কড়া সমালোচক।
মামদানি বিজেপির নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের তীব্র সমালোচনা করেছিলেন। তাঁর মতে, নাগরিকত্বের মানদণ্ডে এই আইন মুসলমানদের প্রতি বৈষম্যমূলক। ২০১৯ সালে কাশ্মীরের স্বাতন্ত্র্য মর্যাদা বাতিল (৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিল) করে মোদি সরকারের জারি করা আদেশের সিদ্ধান্তকে তিনি অস্বীকার করেন।
২০০২ সালে গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন মোদি। সেই সময় মোদির বিতর্কিত ভূমিকার সমালোচনা করতে ছাড়েননি মামদানি। ভয়াবহ সেই সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার জন্য তিনি মোদিকে দায়ী করেন। ওই দাঙ্গায় এক হাজারের বেশি মুসলমানকে হত্যা করা হয়। দোকানপাট, বাড়িঘরে হামলা, লুট ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। মোদির বিরুদ্ধে অভিযোগ এতটাই তীব্র ছিল, বছরের পর বছর তাঁকে যুক্তরাষ্ট্রেও ঢুকতে দেওয়া হয়নি। সমালোচনার কারণে মোদির সমর্থকরা মামদানিকে ধর্মবিদ্বেষী আখ্যা দিয়ে আসছে।
বিজেপির জাতীয় মুখপাত্র সঞ্জু ভার্মা এক এক্স পোস্টে লেখেন, মামদানি একজন চরম মিথ্যাবাদী। তিনি হিন্দুত্ববাদীদের জন্য ক্ষতিকর। বিজেপি রাজনীতিবিদ কঙ্গনা রানাউত মামদানিকে নিয়ে উল্লেখ করেন, ‘মামদানি নামটি ভারতীয়দের চেয়ে বেশি পাকিস্তানি শোনাচ্ছে। তাঁর হিন্দু পরিচয় বা রক্তবংশের সঙ্গে যাই ঘটুক না কেন, তিনি  হিন্দুত্ববাদকে নিশ্চিহ্ন করতে প্রস্তুত।’
তবে অনেক হিন্দু এসব বক্তব্যে একমত নন। দক্ষিণ এশিয়া ও উত্তর আমেরিকায় নাগরিক অধিকারের পক্ষে কাজ করা অলাভজনক সংস্থা হিন্দুস ফর হিউম্যান রাইটসের সিনিয়র পলিসি ডিরেক্টর রিয়া চক্রবর্তী বলেন, মামদানি তাঁর প্রচারণায় দক্ষিণ এশীয় মার্কিনিদের সমস্যাকে গুরুত্ব দিয়ে তুলে ধরেছেন। হিন্দু অ্যাডভোকেসি সংস্থা মোদির হিন্দু জাতীয়তাবাদের বিরোধিতা করে। সংস্থাটি মনে করে, মোদির ধর্মীয় জাতীয়তাবাদ ন্যায়বিচারের মূল্যবোধের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
ভারতীয় বংশোদ্ভূত অভিবাসী মামদানির এই জয় ট্রাম্পের প্রতি একটি শক্তিশালী আঘাত। কারণ ট্রাম্প শুরু থেকেই অভিবাসীদের বিরুদ্ধে নানা কঠোর পদেক্ষেপ নিচ্ছেন। আর যুক্তরাষ্ট্রে বহু ভারতীয় অভিবাসী বাস করেন। নিউইয়র্ক সিটির মেয়র হিসেবে মামদানি ভারতীয় অভিবাসীদের জন্য বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারবেন বলে মনে করেন নাগরিকরা। মুম্বাই শহরের বাসিন্দা গুলফাম খান হুসেন বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে আমরা দীর্ঘদিন ধরে বঞ্চিত রয়েছি। একজন ভারতীয় বংশোদ্ভূত ব্যক্তির এত বড় জয় দেখে সত্যিই ভালো লাগছে।
মামদানির জয় বৈশ্বিক প্রবাসী নেতাদের মধ্যে তাঁকে শীর্ষে স্থান দিয়েছে। এর আগে কমলা হ্যারিস মার্কিন সরকারের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ আসনে (ভাইস প্রেসিডেন্ট) পৌঁছেছিলেন। আটলান্টিক পেরিয়ে ঋষি সুনাক যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন। সাদিক খান লন্ডনের মেয়র পদ লাভ করেন। লিও ভারাদকার আয়ারল্যান্ডের নেতৃত্ব দেন এবং হুমজা ইউসুফ স্কটল্যান্ডে সরকারের নেতৃত্ব দেন।