পাকিস্তানের বিপক্ষে ৩-০ ব্যবধানে ওয়ানডে সিরিজ জয়ের কৃতিত্ব আছে বাংলাদেশের। ২০১৫ সালে মাশরাফি বিন মর্তুজার নেতৃত্বে ঘরের মাঠে পাকিস্তানিদের ৫০ ওভারের ফরম্যাটে ‘বাংলাওয়াশ’ করে ছেড়েছিল টাইগাররা।
কিন্তু টি-টোয়েন্টিতে আগে এক ম্যাচের সিরিজ জেতার রেকর্ড থাকলেও পূর্ণাঙ্গ সিরিজ জয়ের রেকর্ড ছিল না বাংলাদেশের। এবার লিটন দাসের নেতৃত্বে সেই অধরা কৃতিত্ব দেখিয়েছে টাইগাররা। দেশের মাটিতে সালমান আলি আগার পাকিস্তানকে ২-১ ব্যবধানে সিরিজ হারিয়েছে বাংলাদেশ।
গত মে-জুনে পাকিস্তানের মাটিতে এই ২০ ওভারের ক্রিকেটেই পাকিস্তানের কাছে ধবলধোলাই হয়ে এসেছিল বাংলাদেশ। সেখান থেকে এবার প্রথম সিরিজ বিজয়, সেটা অবশ্যই একটা অর্জন, কৃতিত্ব। টাইগাররা সে কৃতিত্বের জন্য ভক্ত-সমর্থকদের কাছে বাহবা পাচ্ছেন, প্রশংসিত হচ্ছেন।
কিন্তু পাশাপাশি কিছু প্রশ্নও উঠেছে। ভক্ত-সমর্থকদের অনেকের মনেই আছে নানা জিজ্ঞাসা। সেই প্রশ্নগুলো অনেকটা এমন, ‘পাকিস্তানের বিপক্ষে এই সিরিজটা কেমন হলো? প্রথম দুই ম্যাচ জিতে সিরিজ নিশ্চিতের পর লিটনবাহিনীর সামনে পাকিস্তানিদের টি টোয়েন্টিতে প্রথমবারের মতো ‘বাংলাওয়াশ’ করার সুবর্ণ সুযোগ এসেছিল। কিন্তু তারা সেই সুযোগ কাজে লাগাতে পারেনি। সেটা সন্তুষ্টি নাকি আক্ষেপের?’
সামগ্রিকভাবে পাকিস্তানের সঙ্গে সিরিজে বাংলাদেশের পারফরম্যান্স কতটা সন্তোষজনক? তার আগে শ্রীলঙ্কায় শুরুতে ৭ উইকেটে হারের পর সাহস, মনোবল ও আস্থা নিয়ে সিরিজে ফেরা এবং দাপুটে পারফরম্যান্সে সিরিজের ট্রফি নিয়ে দেশে ফিরে পাকিস্তানের বিপক্ষে টাইগারদের পারফরম্যান্স কতটা ভালো ছিল?’ বিসিবি পরিচালক নাজমুল আবেদিন ফাহিমের কাছে রাখা হয়েছিল এসব প্রশ্ন।
বোর্ড পরিচালক ফাহিমের কর্মকাণ্ড নিয়ে কিছু প্রশ্নের উদ্রেক ঘটলেও সব ছাপিয়ে তিনি বিসিবির অন্যতম শীর্ষ কর্তা ও নীতি নির্ধারকদের একজন। সবচেয়ে বড় কথা ফাহিম জাতীয় দল পরিচালনা, তত্বাবধায়ক স্ট্যান্ডিং কমিটি ক্রিকেট অপারেশন্সের প্রধান। যে কারণে তার মতামত, অনুভব ও প্রতিক্রিয়াকে বিসিবির প্রতিক্রিয়া হিসেবে ভাবা যেতেই পারে।
ফাহিমের ব্যাখ্যা, ‘কাগজে-কলমে সিরিজ জেতার একটা প্রভাব তো অবশ্যই আছে। আপনি পাকিস্তানকে সিরিজ হারিয়েছেন। কোথায় কীভাবে সেটা কিন্তু দ্বিতীয় বিষয়। প্রথম কথা হলো, আমরা পাকিস্তানকে সিরিজ হারিয়েছি। সেটা অবশ্যই সন্তুষ্টির।’
পাকিস্তানের সঙ্গে সিরিজ জয়কে সন্তোষজনক বলছেন কেন, একটু ভেঙে বলবেন?
ক্রিকেট অপারেশন্স চেয়ারম্যানের ব্যাখ্যা, ‘এ সিরিজ জেতাকে সন্তোষজনক বলার একটি বিশেষ কারণ রয়েছে। তার আগে একটু পেছন ফিরে তাকাই। আরব আমিরাতের সঙ্গে সিরিজ থেকে ধরি। তারপর পাকিস্তানের সঙ্গে লাহোরে তিন ম্যাচের সিরিজে ধবলধোলাই সঙ্গী হয়েছিল। সেই সিরিজের ফল কিছু প্রশ্নের উদ্রেক ঘটিয়েছিল। দ্বিধাদ্বন্দ্বের মধ্যেই ছিলেন অনেকে। বলতে পারেন আমরাও (বিসিবি) খানিক দ্বিধায় ছিলাম।’
‘এরপর শ্রীলঙ্কায় পিছিয়ে পড়েও ঘুরে দাঁড়ানো ও সিরিজ জিতে ফিরে আসাটা একটা ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। সেই ধারাবাহিকতা এবার ঘরের মাঠে পাকিস্তানের সঙ্গে দেখানো সম্ভব হয়েছে। আমার ধারণা, শ্রীলঙ্কার মাটিতে পিছিয়ে পড়ে সিরিজ জয়টা দেশের মাটিতে পাকিস্তানকে হারানোর সাহস সঞ্চার করেছে, আস্থা ও বিশ্বাস বাড়িয়েছে’- যোগ করেন ফাহিম।
কিন্তু শেরে বাংলায় যে উইকেটে খেলা হয়েছে, তা নিয়েও আছে প্রশ্ন, বিতর্ক। যে উইকেটে খেলা হচ্ছে সেটা আদর্শ টি-টোয়েন্টি পিচ না। তারপরও আপনি সন্তুষ্ট?
উত্তরে ফাহিম বলেন, ‘উইকেট নিয়ে কথা হচ্ছে জানি। সমালোচকরা বলবেন, বলছেনও যে উইকেটের সহায়তায় আমরা জিতেছি। এটা সত্য যে, শেরে বাংলার উইকেট-কন্ডিশন আমরা চিনি। আমাদের ক্রিকেটারদেরও চেনা-জানা। পাকিস্তান তেমন চেনে না। তবে আমার মনে হয়, শুধু উইকেটকেই পাকিস্তানের সঙ্গে সিরিজ জয়ের প্রধান ও সহায়ক উপাদান হিসেবে চিহ্নিত করা ঠিক হবে না। আমার মনে হয়, পুরো সিরিজে আমাদের ক্রিকেটারদের জেতার আগ্রহ বেশি ছিল। তাদের শারীরিক ভাষাও ছিল অনেক ইতিবাচক। আমার কাছে সেটাও এক রকমের সন্তুষ্টি।’