এই পৃথিবীতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে নানা ধরনের বিস্ময়। আর এসব অজানা ও অদেখা সৌন্দর্যই আমাদেরকে ভ্রমণে উৎসাহিত করে। মানব সভ্যতার ইতিহাসের অনেক কিছুই বৈজ্ঞানিক গবেষণার মাধ্যমে আবিষ্কৃত হচ্ছে। তারপরও এখন পর্যন্ত ইতিহাসের অনেক উপাদানই রয়ে গেছে রহস্যাবৃত। তেমনই বিশ্বে এমন কয়েকটি রহস্যময় স্থান আছে, যার রহস্য আজও ভেদ করতে পারেননি গবেষকরা-
যুক্তরাষ্ট্রের সার্পেন্ট মাউন্ড
বিশ্বের বৃহত্তম জীবন্ত আঁকা-বাঁকা পাহাড়ি এলাকা হলো সার্পেন্ট মাউন্ড যার অবস্থান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওহিও রাজ্যের পিবলসে। এটি ১৩৪৮ ফুট দীর্ঘ প্রাচীন সর্পিল পাহাড়ি এলাকা যার ইতিহাস খ্রিষ্ট পূর্ব ৩২০ সালের। বিভিন্ন সমীক্ষা থেকে দেখা গেছে যে, গ্রীষ্মকাল ও শীতকালের মাঝামাঝি সময়ে সার্পেন্ট মাউন্ডের শীর্ষভাগ ও বাঁকগুলো একেবারে সূর্য বরাবর থাকে। এর পাশাপাশি আপনি যদি সার্পেন্টের গায়ে এক মাথা থেকে আরেক মাথা পর্যন্ত একটি লাইন টানেন তাহলে এটি একেবারে উত্তর দিকে হবে।
পেরুর নাজকা লাইনস
নাজকা লাইনস দেখতে হলে আপনাকে ভূমি থেকে বেশ উচ্চতায় থাকতে হবে। দক্ষিণ আমেরিকান দেশ পেরুর নাজকা মরুভূমিতে অবস্থিত নাজকা লাইনস বিশ্বের সবচেয়ে রহস্যময় পাথুরে আঁকিবুকি। এগুলো আকারে অনেক বিশাল। তবে ২০০০ বছর আগে সৃষ্টি হওয়ার সময় এগুলোর সঠিক আকৃতি কেমন ছিল তা কারও জানা নেই। এমনকি বিশাল এই কাঠামো নির্মাণে কত অর্থ কেমন ব্যয় হয়েছিল তাও অজানা।
যুক্তরাজ্যের স্টোনহেঞ্জ
উইলশায়ার কাউন্ট্রিসাইডে অবস্থিত বর্তমানকালের স্টোনহেঞ্জ নির্মিত হয়েছিলো ৯ হাজার বছর আগে। এটি ছিল অনুসন্ধানকারী ও সংগ্রাহকদের সময়। গবেষণা থেকে জানা যায়, স্টোনহেঞ্জের রহস্য সবচেয়ে দীর্ঘ সময় ধরে বিশ্বকে একটি ধাঁ-ধাঁ’র মধ্যে রেখেছিলো। যদিও শেষ পর্যন্ত তা উদঘাটিত হয়েছে। তবে কীভাবে এসব অনুসন্ধানী ও সংগ্রাহকরা স্টোনহেঞ্জের বিশালাকৃতির স্মৃতিস্তম্ভ বানাতে সক্ষম হয়েছিলো ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের সরঞ্জামাদির ব্যবস্থা করেছিলো? তা এখনো রহস্যে মোড়ানো।
মাল্টার গান্তিজা টেম্পলস
ভূ-মধ্যসাগরের ছোট্ট দেশ মাল্টায় অবস্থিত খ্রিষ্টপূর্ব ৩৬০০-২৫০০ সালের গান্তিজা টেম্পলস যুক্তরাজ্যের স্টোনহেঞ্জের চেয়েও পুরোনো। মাল্টিজ ভাষায় ‘গান্ত’ শব্দের অর্থ হলো দৈত্য। ধারণা করা হয়, এই মন্দির নির্মিত হয়েছে দৈত্যদের এক প্রতিযোগিতার মাধ্যমে। এমনও কাহিনি প্রচলিত আছে, নিজের সন্তানকে কাঁধে বহন করে একজন নারী দৈত্য একাই মন্দিরগুলো নির্মাণ করেছিলেন। এখানকার পাথরের কাঠামো বিশালাকৃতির।
স্কটল্যান্ডের স্কারা ব্রায়ে
মনকে নাড়া দেওয়ার মতো আরেকটি প্রাচীন স্থাপনা হলো স্কাইল উপসাগরে স্কটল্যান্ডের মেনল্যান্ড দ্বীপের পশ্চিম উপকূলে অবস্থিত স্কারা ব্রায়ে। এসব ঐতিহাসিক ভবনের মধ্যে আছে বিশ্বের প্রাচীনতম টয়লেট। তবে এখানেই শেষ নয়। বিভিন্ন গবেষণা থেকে জানা যায়, এই স্থাপনা বহু আগেই পরিত্যক্ত হয়ে গেছে। এখানে কোনো মানুষের বসতিই নেই তবে যারা জায়গাটি ছেড়ে গিয়েছিলেন তাদের রেখে যাওয়া অনেক কিছুই পড়ে আছে সেখানে। তবে কেন স্কারা ব্রায়ের বাসিন্দারা সবকিছু ফেলে অন্যত্র চলে যেতে বাধ্য হয়েছেন তা কারও জানা নেই।
তুরস্কের ডেরিঙ্কুয়ু
তুরস্কের ক্যাপাডোসিয়াতে অবস্থিত ডেরিঙ্কুয়ুর আবিষ্কার হয় ঘটনাচক্রে। একদিন একজন মানুষ তার ঘর মেরামত করছিরেণ। তিনি ঘরের দেয়ালগুলোর একাংশ ভেঙে ফেললেই একটি ঘর আবিষ্কার করেন। যেটি পরে চিহ্নিত হলো বিশাল এক পাতালপুরীর একটি ছোট অংশ হিসেবে। আর সেই পাতালপুরীর নামই ডেরিঙ্কুয়ু। যদি কেউ এই মাটির তলার কাঠামোর দিকে তাকান, তাহলে এটিকে তার কাছে অনেকটা পিঁপড়ার বাসার মতোই মনে হবে।
সম্ভবত এটিই পুরো নকশাকে অনুপ্রাণিত করেছিলো। ধারণা করা হয়, কাঠামোটি নির্মাণ করেছিলো প্রথম দিকের ফ্রিজিয়ানরা। একবারে ২০ হাজার মানুষের সক্ষমতাবিশিষ্ট ঘর তৈরির নির্মাতা কে তা নিয়ে বিভিন্ন গুজব প্রচলিত আছে। তবে জানা যায়, মাটির নিচের এই আবাসস্থল কিন্তু যুদ্ধকালীন সময়ে লুকিয়ে থাকার জন্য তৈরি হয়নি, হয়েছিল দীর্ঘদিন বসবাসের জন্যই।