রিয়াদ বিমানবন্দরে বাংলাদেশ বিমানের কর্মীর বিরুদ্ধে ঘুষ ও যাত্রী হয়রানির অভিযোগ

ডেস্ক রিপোর্ট
  ২১ জুলাই ২০২৫, ১৩:০৮

সৌদি আরবের রিয়াদ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বাংলাদেশ বিমানের এক কর্মীর বিরুদ্ধে ঘুষ বাণিজ্য, ক্ষমতার অপব্যবহার, যাত্রী হয়রানি ও মালামাল চুরির গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। অভিযুক্ত ব্যক্তি হলেন বাংলাদেশ বিমানের ড্রাইভার কাম ট্রাফিক অ্যাসিস্ট্যান্ট জালাল উদ্দিন। তার বিরুদ্ধে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় ও বিমান কর্তৃপক্ষসহ একাধিক দফতরে প্রবাসীরা লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। অভিযোগ আমলে নিয়ে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষ ইতোমধ্যে একটি তদন্ত শুরু করেছে।
প্রবাসীদের অভিযোগ, জালাল উদ্দিনকে ঘিরে দীর্ঘদিন ধরে একটি সংঘবদ্ধ দুর্নীতিচক্র সক্রিয় রয়েছে, যা বাংলাদেশ বিমানের ভাবমূর্তিকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। তাদের ভাষায়, এটি যেন একটি ‘দুর্নীতির সাম্রাজ্য’, যেখানে সাধারণ যাত্রীরা জিম্মি হয়ে পড়েছেন এক অসাধু কর্মীর হাতে।
অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, বোর্ডিং পাস পেতে অনেক যাত্রীকে জালাল উদ্দিনকে ২ থেকে ৫ হাজার সৌদি রিয়াল পর্যন্ত ঘুষ দিতে হয়েছে। এসব কাজ তিনি প্রকাশ্যেই করে থাকেন।
সম্প্রতি এক নারী যাত্রীকে বিজি ৩৭০ ফ্লাইটে ওঠার আগে তার হ্যান্ডল্যাগেজ ও বোর্ডিং কার্ড কেড়ে নেওয়া হয়। ঘুষ না দিলে তাকে বিমানে উঠতে দেওয়া হবে না বলে হুমকি দেওয়া হয়। পরবর্তী সময়ে অর্থ পরিশোধের পর তিনি বোর্ডিং কার্ড পেলেও বাসায় ফিরে গিয়ে দেখেন— তার ব্যাগ থেকে দুটি নতুন মোবাইল ফোন চুরি হয়ে গেছে।
অভিযোগে আরও বলা হয়েছে, জালাল উদ্দিনের নিয়োগপত্রে নির্দিষ্ট কিছু দায়িত্ব থাকলেও তিনি সেগুলো অতিক্রম করে কাউন্টারে বসছেন, যাত্রীদের হেনস্তা করছেন, বোর্ডিং কার্ড আটকে রাখছেন, এমনকি তাদের হ্যান্ডল্যাগেজ তল্লাশি করছেন।
প্রবাসীদের বক্তব্য অনুযায়ী, তাকে প্রায়ই বিমানবন্দরের ভেতরে এমনকি গেটের কাছাকাছি ঘোরাফেরা করতে দেখা যায়, যা তার দায়িত্বের বাইরে। তিনি যাত্রীদের কাছ থেকে প্রকাশ্যেই অর্থ দাবি করেন এবং টাকা না দিলে ‘বিমান মিস’ করানোর হুমকি দেন।
বাংলাদেশ বিমানের টিকিট বিক্রয় প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি ও প্রবাসী সাইফুল ইসলাম অভিযোগ করে বলেন, ‘আমাদের ধারণা, জালাল উদ্দিন একা নন— তার পেছনে রয়েছে একটি প্রভাবশালী চক্র। এতে বিমানের কিছু অসাধু কর্মকর্তাও জড়িত থাকতে পারেন। এত অভিযোগ সত্ত্বেও এতদিন ধরে তার চাকরি বহাল থাকা সত্যিই বিস্ময়কর।’
সাইফুল আরও জানান, ‘গর্ভবতী ও অসুস্থ নারী যাত্রীদেরও হয়রানির শিকার হতে হয়েছে। প্রয়োজনীয় কাগজপত্র থাকার পরও নানা অজুহাতে তাদের বাধা, দেরি ও ঘুষের মুখোমুখি হতে হয়েছে।’
প্রবাসীরা পাঁচ দফা দাবি উত্থাপন করেছেন, জালাল উদ্দিনকে অবিলম্বে চাকরিচ্যুত করে আইনের আওতায় আনা; একটি স্বতন্ত্র ও উচ্চপর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন; রিয়াদ বিমানবন্দরে ‘অভিযোগ গ্রহণ ও প্রতিকার কেন্দ্র’ স্থাপন; বিমানের কর্মীদের দায়িত্ব ও পদের সীমা স্পষ্টভাবে নির্ধারণ ও তা কঠোরভাবে বাস্তবায়ন এবং সংশ্লিষ্ট চক্রে জড়িত অন্যান্য কর্মকর্তাদের শনাক্ত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত।
বাংলাদেশ বিমানের একজন দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বিভিন্ন দফতর থেকে আমাদের কাছে তদন্তের নির্দেশনা এসেছে। আমরা তা অনুযায়ী কাজ করছি। প্রমাণ পাওয়া গেলে দোষীর বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
তবে অভিযোগের বিষয়ে জালাল উদ্দিনের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন