চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে দেশের পর্যটন খাত মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বিএনপির ডাকা টানা অবরোধের কারণে পর্যটন মৌসুমের শুরুতেই ধাক্কা খেয়েছেন কুয়াকাটার পর্যটন-সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা। বছরের এই সময়ে প্রচুর পর্যটক থাকলেও গত শুক্রবার ও শনিবার ছুটির দিনে প্রায় ফাঁকা ছিল সূর্যোদয়-সূর্যাস্তের বেলাভূমিখ্যাত এই সমুদ্রসৈকত। হোটেল-রিসোর্ট পর্যটকশূন্য বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
পর্যটন-সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা বলছেন, টানা অবরোধের কারণে পর্যটন মৌসুমের শুরুতেই ধাক্কা খাচ্ছেন তারা। বছরের এই সময়ে কুয়াকাটায় ভিড় করেন দেশি-বিদেশি পর্যটকরা। কিন্তু অবরোধের কারণে সব বুকিং বাতিল করেছেন তারা। দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে আসার পথে গণপরিবহন না পাওয়া ও রাস্তাঘাটে সংঘাত, সংঘর্ষের কথা চিন্তা করে বের হচ্ছেন না ভ্রমণপিপাসুরা। ফলে পর্যটন মৌসুমের শুরুতেই পর্যটকশূন্য হয়ে পড়েছে সাগরকন্যা। অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে অবরোধের মতো কর্মসূচি না দেওয়ার দাবি ব্যবসায়ীদের।
মঙ্গলবার (০৭ নভেম্বর) বিকালে সরেজমিনে দেখা গেছে, কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকতে কোনও পর্যটক নেই। তবে পর্যটন-সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা সব আয়োজন করে রেখেছেন। তারা আড্ডা দিয়ে সময় কাটাচ্ছেন।
হোটেল-রিসোর্ট ও রেস্টুরেন্টের মালিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাদের বেশিরভাগ হোটেল-রিসোর্ট ফাঁকা। রেস্টুরেন্টগুলোতে স্থানীয় লোকজন বসে আছেন। কোনও পর্যটক নেই বললেই চলে।
বিএনপির ডাকা টানা অবরোধের কারণে পর্যটন মৌসুমের শুরুতেই ধাক্কা খেয়েছেন কুয়াকাটার পর্যটন-সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা
পর্যটন ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, দেশের অন্যতম পর্যটনকেন্দ্র কুয়াকাটায় পর্যটন মৌসুম শুরু হয় নভেম্বর মাসে। মার্চ-এপ্রিল পর্যন্ত থাকে সরগরম। এবার মৌসুমের শুরুতেই হরতাল-অবরোধ শুরু হয়েছে। এর আগে গত দুর্গাপূজার ছুটিতে ঘূর্ণিঝড় হামুনের প্রভাবে কুয়াকাটায় আশানুরূপ পর্যটক আসেননি। নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহের শুক্রবার ও শনিবার ছুটির দিনে হোটেল বুকিং করেছিলেন পর্যটকরা। কিন্তু রবিবারের হরতাল ও মঙ্গলবার থেকে টানা অবরোধের কারণে বুকিং বাতিল করেছেন। ফলে মৌসুমের শুরুতেই বড় ধাক্কা খেয়েছেন ব্যবসায়ীরা। রাজনৈতিক সমঝোতা না হলে চলতি বছরের পুরো মৌসুম পর্যটন খাতে ধস নামবে বলে আশঙ্কা তাদের।
টানা হরতাল-অবরোধের কারণে পর্যটন খাতে ধসের আশঙ্কা করছেন কুয়াকাটা আবাসিক হোটেল সি-ভিউ-এর ম্যানেজার মো. সোলায়মান ফরাজী। তিনি বলেন, ‘বর্তমানে কুয়াকাটা পর্যটকশূন্য। গত সপ্তাহের শুক্রবার ও শনিবার হোটেল-রিসোর্টে কোনও বুকিং ছিল না। আগামী শুক্রবার ও শনিবার কোনও বুকিং নেই। তবে দুই দিনের জন্য আমাদের হোটেলে একটি মোবাইল কোম্পানির ১০০ জন বুকিং দিয়েছেন। এখনও বলা যাচ্ছে না, এই বুকিং থাকবে কিনা। হরতাল-অবরোধ থাকলে তারাও বুকিং বাদ করবেন বলেছেন। চলমান অচলাবস্থা অব্যাহত থাকলে আমাদের বড় ধরনের লোকসানের মুখে পড়তে হবে। রাজনৈতিক সমঝোতা না হলে এই অচলাবস্থা কাটবে না। যত দ্রুত সম্ভব হরতাল-অবরোধের মতো কর্মসূচি বালিত করতে হবে।’
কুয়াকাটা হোটেল-মোটেল এমপ্লয়িজ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. জুয়েল ফরাজী বলেন, ‘বর্তমানে কুয়াকাটায় কোনও পর্যটক নেই। হোটেল-মোটেলগুলো ফাঁকা পড়ে আছে। আগামী শুক্রবার ও শনিবার কিছু হোটেল-মোটেলে বুকিং ছিল, সেগুলোও বাতিল হয়ে গেছে। নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে আসতে চাচ্ছেন না পর্যটকরা। রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে মৌসুমের শুরুতে বড় ধাক্কা খাচ্ছি আমরা।’
এভাবে চললে চলতি বছরের পুরো মৌসুম লোকসান গুনতে হবে বলে আশঙ্কা করছেন কুয়াকাটা হোটেল-মোটেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মোতালেব শরীফ। তিনি বলেন, ‘এ বছর ব্যবসা ভালো যাবে না মনে হয়। নির্বাচনের বছর রাজনৈতিক অস্থিরতা থাকে। কিন্তু টানা হরতাল-অবরোধের কারণে ইতোমধ্যে আমাদের অগ্রিম বুকিংগুলো বাতিল করেছেন পর্যটকরা। হরতাল-অবরোধের মতো কর্মসূচি থেকে বেরিয়ে আসা উচিত সবার।’
সমুদ্রসৈকতের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ইদ্রিস মিয়া বলেন, ‘কোনও পর্যটক নেই। বেচাকেনায় ধস নেমেছে। হরতাল-অবরোধের কারণে দূরপাল্লার যানবাহন চলাচল বন্ধ আছে। মানুষজন ঘুরতে বের হন না। এ অবস্থা চলতে থাকলে আমরা মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়বো।’