গ্রীষ্মের খরতাপে ৪০ ডিগ্রির ওপরে তাপমাত্রায় সৈকতে বেড়াতে গেলে রীতিমতো ভাজা ভাজা হয়ে যেতে হয়। এ সংকটের অভিনব এক সমাধান বের করেছে দুবাই। সেখানে পর্যটকদের জন্য রাতের বেলায় খুলে দেওয়া হয় সৈকত। ফ্লাডলাইটের আলোয় সৈকতের চারপাশ ঝলমল করে। লাইফগার্ডের সদস্যরা ব্যবহার করেন অন্ধকারেও দেখা যায়—এমন বাইনোকুলার।
দুবাইয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, তাঁদের এ পরিকল্পনা জনপ্রিয় হয়েছে। গত বছর থেকে ১০ লাখের বেশি মানুষ দুবাইয়ে রাতের বেলায় সৈকতে বেড়াতে এসেছেন।
বিশ্বের সবচেয়ে গরম অঞ্চলগুলোর একটি হচ্ছে সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই)। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ওই অঞ্চলে তাপমাত্রা রেকর্ড উচ্চতায় উঠছে।
মধ্যপ্রাচ্য অঞ্চলের বেশির ভাগ অংশেই এখন যুদ্ধ-সংঘাত চলছে। যুদ্ধে ইসরায়েলের মুখোমুখি হামাস, হিজবুল্লাহ ও ইরান। এরপরও সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোর সন্ধ্যা ও রাতে দুবাইয়ের সৈকতগুলোয় ভিড় দেখা যায়।
দুবাইয়ের উম্ম সুকেইম সৈকতে পর্যটকদের ভিড়
পাকিস্তানের ৩২ বছর বয়সী মোহাম্মদ তেমনই একজন পর্যটক। উপসাগরীয় অঞ্চলে সূর্যের চামড়া ঝলসানো তাপ এড়িয়ে সমুদ্র উপভোগ করতে সন্তানকে নিয়ে রাতের বেলা দুবাইয়ের সৈকতে বেড়াতে এসেছেন তিনি।
মোহাম্মদ বলছিলেন, ‘সূর্য অস্ত যাওয়ার পর সন্ধ্যায় তাপমাত্রা কমে যায়। এটা দারুণ!’
দুবাইয়ে প্রায় ৩৭ লাখ মানুষ বসবাস করে। সেখানে জুন থেকে অক্টোবর পর্যন্ত প্রচণ্ড গরম অনুভূত হয়। এ সময়ে তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসও ছাড়িয়ে যায়; সঙ্গে উচ্চ আর্দ্রতা। এ সময়ে বাসিন্দাদের জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বাড়ির বাইরে বের না হওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়।
দুবাইয়ে এখন রাতে খুলে দেওয়ার জন্য ৮০০ মিটারের বেশি দীর্ঘ সৈকত রয়েছে। সমুদ্র থেকে আসা হাঙরের আক্রমণ ঠেকাতে পুরো সৈকতের সামনের অংশ জাল দিয়ে ঘিরে দেওয়া হয়েছে। দৈত্যকার ফ্লাডলাইটের উজ্জ্বল আলোয় সৈকতজুড়ে রীতিমতো আলোর বন্যা!
পাকিস্তানি মোহাম্মদ এক দশক ধরে দুবাইয়ে বসবাস করছেন। তিনি বলেন, ‘যখন পানিতে গোসল করবেন, আপনি আপনার পায়ের পাতার ওপর, হাতে লেগে থাকা বালু থেকে শুরু করে সবই দেখতে পাবেন।’
সৈকতে ২৪ ঘণ্টাই লাইফগার্ডের সদস্যরা দায়িত্ব পালন করেন। সমুদ্রের পানিতে আনন্দে মেতে ওঠা পর্যটকদের ওপর নজর রাখতে এবং তাঁদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে রাতের আঁধারেও দেখা যায়—এমন বাইনোকুলার ব্যবহার করেন তাঁরা। অবশ্য ফ্লাডলাইটের কারণে পুরো সৈকত আলোকোজ্জ্বল থাকে।
‘শরীরজুড়ে শান্তির ধারা’
সম্প্রতি এক শুক্রবারে প্রায় মধ্যরাতে দুবাইয়ের উম্ম সুকেইম সৈকতে পর্যটক গিজগিজ করছিল। তাঁদের বেশির ভাগই প্রবাসী। সংযুক্ত আরব আমিরাতের মোট বাসিন্দার ৯০ শতাংশই বিভিন্ন দেশ থেকে আসা প্রবাসী।
৩৮ বছরের মেরি বেয়ারকা তেমনই একজন। বেলারুশ থেকে আসা এই নারী একজন ‘ফিটনেস কোচ’। তিনি বলেন, ‘একটি দীর্ঘ ও গরম দিনের পর’ তিনি সৈকতে বেড়ানো খুবই উপভোগ করেন। রাত হলেও সাগরের পানি তখনো খানিকটা উষ্ণ।
বেয়ারকা বলেন, ‘আমার মনে হচ্ছে, আমি যেন গোসল করছি।’
পাশেই ফিলিপাইন থেকে আসা লায়া মাঙ্কো নিজের শরীর বালুতে ডুবিয়ে আছেন। মাঙ্কো বিক্রয়কর্মী হিসেবে কাজ করেন। ৩৬ বছর বয়সী এই নারীর কাছে জীবনের জটিলতাকে পেছনে ফেলে খানিকক্ষণ স্বস্তিতে সময় কাটানোর জায়গা এই সৈকত।
হাজারো প্রবাসী শ্রমিক দুবাইয়ের অর্থনীতির চাকা সচল রাখেন।
মাঙ্কো বলেন, ‘প্রতি সপ্তাহান্তে আমরা এখানে আনন্দ করতে আসি। কখনো কখনো বন্ধুদের সঙ্গে আমরা এখানেই ঘুমিয়ে পড়ি। কারণ, দুবাইয়ে কঠোর পরিশ্রম করতে হয়। আপনার তাই বিশ্রামের প্রয়োজন অনুভূত হবে। হ্যাঁ, এটা আমাকে চাপমুক্ত করে।’
দুবাই কর্তৃপক্ষের জন্য রাতের সৈকত পর্যটক আকর্ষণের অন্য একটি অবলম্বন হয়ে উঠেছে; বিশেষ করে গ্রীষ্মকালে, যখন কড়া রোদে মানুষ বেশির ভাগ সময় ঘরের ভেতরে থাকে।
দুবাই পৌরসভার কর্মকর্তা হামাদ শাকের বলেন, ‘আমার বিশ্বাস, বিশ্বের অল্প যে কয়টি নগরে রাতের বেলা জনসাধারণের জন্য সৈকতে এ ধরনের সুযোগ-সুবিধা আছে, আমরা সেগুলোর একটি।’