সিঙ্গাপুর শহরে উপরে যে পরিমাণ অংশ আছে মাটির নিচেও তার চেয়ে কম নয়।সিঙ্গাপুর আকারে ছোট একটি দেশ হলেও উন্নত দেশের দিকে প্রথম সারিতে। এখানকার জীবনযাত্রার মান কতটা উন্নত, যা নিজ চোখে না দেখলে কেউ বুঝবেন না। সিঙ্গাপুর শহরে উপরে যে পরিমাণ জায়গা আছে তার চেয়ে বেশি জায়গা করা হয়েছে মাটির নিচে। মাটির নিচে আছে একাধিক রেল লাইন, শপিং মল, আবাসিক হোটেল, রেস্টুরেন্টসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান।
সিঙ্গাপুরে বেশিরভাগ মানুষ ট্রেনে যাতায়াত করেন। বিশেষ করে শহরের এ প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে যাতায়াতের অন্যতম মাধ্যম ট্রেন। আর প্রতিটি ট্রেন চলাচল করে মাটির নিচে করা রেললাইন দিয়ে। মাটির নিচে এই শহরে অন্তত শতাধিক রেলের রুট আছে। হাজার হাজার মানুষ ট্রেনে যাতায়াত করেন। নিচে নামার জন্য আছে অসংখ্য লিফট। ইজি লিংক কার্ড পাঞ্চ করে সবাই ট্রেনে যাওয়া-আসা করেন।
সিঙ্গাপুরে বসবাস করা প্রবাসী বাংলাদেশী রাজন আলী ও রোকনুজ্জামান মীর্জা বলেন, ‘আমরা প্রায় ১০-১২ বছর ধরে এখানে আছি। অফিসে যাওয়া-আসা, দৈনন্দিন কাজ কর্মে ট্রেন হলো আমাদের যাতায়াতের মাধ্যম। কোনো ঝামেলা ছাড়া মাটির নিচে করা রেল লাইন দিয়ে অনায়াসে সবাই চলাচল করছে।’
এত চমৎকার ও পরিকল্পিতভাবে করা হয়েছে, দেখলে বুঝা যাবে না মাটির নিচে না উপরে। আছে শপিং মল, বিভিন্ন আবাসিক হোটেল, রেস্টুরেন্টসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। সিঙ্গাপুর শহরে উপরে যে পরিমাণ অংশ আছে মাটির নিচেও তার চেয়ে কম নয়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সিঙ্গাপুর আধুনিক যুগের অন্যতম জনপ্রিয় এক পর্যটনকেন্দ্র। সিঙ্গাপুর নাম শুনলেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে একটি কসমোপলিটন শহর। শহরের চারদিক ঝাঁ চকচকে উঁচু উঁচু বিল্ডিং, নামি-দামি শপিং মল, অত্যাধুনিক জীবনযাত্রার এক অসাধারণ উদাহরণ। উপরে যেমন মানুষের কোলাহল, মাটির নিচেও তার কমতি নেই।
শহরের কৃত্রিম জীবনের আকর্ষণে প্রতি বছর লাখ লাখ পর্যটক ছুটে যান দক্ষিণ এশিয়ার এই দেশে। চারদিক পানিতে ঘেরা এই দেশে ছুটি কাটাতে যাওয়া মানেই কয়েকটি দিন বিন্দাসভাবে ঘুরে বেড়ানো। সে দেশের চিড়িয়াখানা, পার্ক, বোটানিক্যাল গার্ডেন হোক কিংবা নৌবিহার সব কিছুতেই আছে পারফেকশনের ছোঁয়া।
আর রাতের সিঙ্গাপুর তো যেন মায়াবী নগরী। আনন্দ-ফূর্তি-উচ্ছাস-উত্তেজনার জন্য এই শহর যেন রাতের অপেক্ষাতেই দিন কাটায়। এক কথায় ইঁট-কাঠ-পাথরকে শিল্পের ছোঁয়া দিয়ে নিজের আকর্ষণ বাড়িয়েছে এই নামজাদা পর্যটককেন্দ্র। নাগরিক জীবন যারা উপভোগ করেন তারা সিঙ্গাপুরে ঘুরতে যেতে ভালোবাসেন বারবার।
তবে এই সিঙ্গাপুরই এবার নিজের রূপের টানে খানিকটা পরিবর্তন আনতে চলেছে। এবার আর ইঁট-কাঠ-পাথর-কাঁচের ঝাঁ চকলকচকে শহর নয়, সিঙ্গাপুর এবার তার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দিয়ে নাকি আকর্ষণ করতে চলেছে প্রকৃতিপ্রেমী পর্যটকদের।
প্রকৃতি ধ্বংস করে যে নাগরিক জীবন স্থাপন করেছে মানুষ তাতেই হয়তো কিছুটা প্রলেপের চেষ্টা করছে এই দেশ। সিঙ্গাপুরের একাংশকে ইকো-স্মার্ট সিটি তৈরি করার লক্ষ্য নিয়েছে সেদেশের সরকার। ইকো-স্মার্ট সিটির পোশাকী নাম হতে পারে ফরেস্ট টাউন বা অরণ্য নগরী।
সিঙ্গাপুরের পশ্চিমাঞ্চলে অবস্থিত তেঙ্গাহ প্রদেশকেই আপাতত অরণ্য নগরী করার লক্ষ্য নেওয়া হযেছে। এটি মূলত সামরিক এলাকা। এখানে আগে কারখানা ও সামরিক ঘাঁটির প্রয়োজনীয় হাব তৈরির পরিকল্পনা ছিল।
তবে নিজেদের জীবনে প্রকৃতির প্রয়োজনীয়তার কথা ভেবেই সিদ্ধান্ত বদল হয়। সেই সিদ্ধান্তের ফলেই আর কিছুদিন এলাকাটি প্রকৃতির নন্দনকাননে পরিণত হবে।
সিঙ্গাপুর মূলত দূষণমুক্ত এক দেশ। শহরে প্রচুর গাছ লাগানো হয়েছে। শহরে গাছের সংখ্যা এতটাই বেশি হবে যে গরম কিংবা আর্দ্রতা কোনোটিই ছুঁতে পারেনা নাগরিক বা পর্যটকদের।