মালয়েশিয়া ভ্রমণে গিয়ে গেনটিং হাইল্যান্ডে না যাওয়া বৃথা। তাই সেদেশে যারা বেড়াতে যান, তাদের সবার প্রথম পছন্দ এই পর্যটন স্পট। আমরা কুয়ালালমপুর পৌঁছে তাই প্রথমে মনস্থির করি গেনটিং আইল্যান্ড যাওয়ার। শহরের জালান সুলতান এরিয়ার চায়না বাজার থেকে একটি গাড়ি ভাড়া করে রওয়ানা দিলাম গেনটিং হাইল্যান্ডের উদ্দেশ্যে।
যাওয়ার পথে পুরো সড়ক পথই যেন পর্যটন স্পট। দু’পাশে সুউচ্চ অত্যাধুনিক কারুকাজ সম্বলিত বহুতল ভবন যে কাউকে মুগ্ধ করবে। অবশেষে প্রায় দেড় ঘণ্টা পর কাঙ্খিত স্থানে পৌঁছালাম। এরপর টিকিট সংগ্রহ করে লাইন ধরে সবাই উঠে গেলাম ক্যাবল কারে।
ক্যাবলকার ঘিরে আছে বিশাল একটি কর্মী বাহিনী, যারা খুব আন্তরিকতার সঙ্গে আগত পর্যটকের সব ধরনের সহযোগিতা করছে। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৭ হাজার ফুট উঁচু পর্যটন স্পট গেনটিং হাইল্যান্ডে।
উঁচু-নিচু আঁকা বাঁকা অসংখ্য পাহাড়ি পিচঢালা সড়ক ধরে গাড়ি যতো এগিয়ে যায়, ততোই যেন মুগ্ধতা ছড়িয়ে দেয়। আশপাশে সবুজ পাহাড়ে অসংখ্য নান্দনিক কারুকাজ যে কাউকে মুগ্ধ করবে। সবুজ পাহাড়-অরণ্যের বুক চিরে যেন বহমান নদীর মতো এঁকে বেঁকে বয়ে চলে গেছে এই সড়ক।
ক্যাবল কার থেকে নিচের সড়ক। এই ক্যাবল কার পাহাড়ের উঁচু থেকে নিচুতে নামে, আবার নিচু প্রান্ত থেকে ওপরে উঠে যায়। কার থেকে উপভোগ করা যায় পাহাড়ের মাথায় মেঘের ভেলার খেলা।
এই কারে চড়লে নিচের দিকে তাকিয়ে কারও ভয়ও পেতে হতে পারে। কারণ মেঘে ঢাকা পাহাড়ের সবুজ বন তখন কেবল ভৌতিক সিনেমার অন্ধকার জগত মনে হয়। তবে ক্যাবল কারে চড়া খুবই রোমাঞ্চকর।
উঁচু-নিচু পাহাড় আর অরণ্যের বুকে কী সুন্দর পর্যটন কেন্দ্র তৈরি করা হয়েছে- এমন ঈর্ষার আক্ষেপও ঝরলো অনেকের মুখে। ক্যাবল কারে মেঘের রাজ্য গ্যান্টিং হাইল্যান্ডে মালয়েশিয়ার ১২ রিঙ্গিতে স্কাইওয়ে ক্যাবল কার ভ্রমণসহ বাসে আসা-যাওয়া। টিকিট সংগ্রহের সময় ফিরে আসার সময়ও ঠিক করে নিতে হয়।
৩-৪ ঘণ্টাই যথেষ্ট পুরো হাইল্যান্ডটি ঘুরে দেখার জন্য। শুরু হলো খোলা আকাশের নিচে তার বেয়ে এগিয়ে চলা। উপরে যাচ্ছি তো যাচ্ছি! পথ আর শেষ হয় না। একেকটি পিলার কত নিচ থেকে ক্যাবলগুলোকে আটকে রেখেছে। প্রায় ৩৮টির মতো পিলার টপকে তখন আমরা ৭ হাজার ফিট উচ্চতায়।
পৃথিবীর সর্ববৃহৎ ক্যাবল কার ভ্রমণের অভিজ্ঞতা হলো গেন্টিং হাইল্যান্ডে। সময় গড়িয়ে বিকেল আসতেই মেঘে ঢেকে গেলো পুরো হাইল্যান্ড। পাহাড়কে অতিরিক্ত না কেটে ভিত্তিপ্রস্তর বাড়িয়ে পাঁচতলা পর্যন্ত পার্কিংগুলোর কারণে প্রকৌশলীরা ধন্যবাদ পাওয়ার যোগ্য। আরও হোটেল নির্মাণের কাজ চলছে এখানে।
সুউচ্চ ভবনের এই হোটেলগুলোর প্রতিটিতে আছে রেস্টুরেন্ট, ক্যাসিনো, শপিং মলসহ নানাবিধ সুবিধা। হোটেল ফার্স্ট ওয়ার্ল্ড, হোটেল রিসোর্ট, হোটেল থিমপার্ক, ম্যাক্সিমসহ আছে বেশ কয়েকটি নামকরা হোটেল। পর্যটকদের আকর্ষণ করতে কিডস ওয়ার্ল্ড, কফি শপসহ কী নেই এই হাইল্যান্ডে?
আরও আছে শিশুদের খেলার জন্য শত রকমের আইটেম। হাইল্যান্ডের শপিং মলগুলো ঘুরে দেখতে প্রায় দিনের অর্ধেক সময় পার হয়ে যাবে। তবুও দেখার শেষ হবে হবে না।
বাংলাদেশ থেকে ঘুরতে আসা তরুণ উদ্যাক্তা ওমর শরীফ বলেন, ‘স্ব-পরিবারে এখানে এসে আমি অভিভূত। আসার আগে জানা ছিল না ক্যাবল কারে এতো উপরে উঠবো। যতো উপরে উঠছিলাম, ভয়ও হচ্ছিল আবার রোমাঞ্চিতও হয়েছি। পাহাড়ে এমন চমৎকার পর্যটন স্পট ও ক্যাবল কার লাইন গড়ে তোলা সত্যি দারুণ ব্যাপার।’
আরেক ব্যবসায়ী এমদাদ হোসেন তারিফ বলেন, ‘মালয়েশিয়ার গেটিং হাইল্যান্ডের কথা শুনেছি। অনেক দিন ধরে এই স্থানে যাওয়ার ইচ্ছা ছিল। অবশেষে ইচ্ছা পূরণ হয়েছে। অনেক সুন্দর একটি জায়গা। যা নিজ চোখে না দেখলে অপূর্ণতা থেকে যেত।’