মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ফ্লোরিডার মার-এ-লাগো রিসোর্ট থেকে গত আগস্টে সরকারি গোপন নথি উদ্ধার হওয়া নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়েছিল। সে সময় যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, ট্রাম্পকে ‘সম্পূর্ণ দায়িত্বজ্ঞানহীন’ বলে কড়া সমালোচনা করেছিলেন। ট্রাম্পের সেই নথি উদ্ধারের বিষয়টির এখনো সুরাহা হয়নি। এর মাঝে সম্প্রতি ওয়াশিংটন ডিসিভিত্তিক ‘পেন বাইডেন সেন্টার ফর ডিপ্লোমেসি অ্যান্ড গ্লোবাল এনগেজমেন্ট’ যেটি বাইডেন ব্যক্তিগত অফিস হিসেবে ব্যবহার করতেন সেখান থেকে উদ্ধার হলো গোপন নথি। ট্রাম্পের গোপন নথি উদ্ধার নিয়ে তিরস্কার করা বাইডেনের নথি উদ্ধার নিয়ে সমালোচনার ঝড় বইছে। এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে #বাইডেনগ্যারেজ চালু হয়ে গেছে। দ্য ইকোনমিস্টের প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, নিশ্চয়ই বাইডেনের গ্যারেজ থেকে সরকারি গোপন নথি উদ্ধারের বিষয়টি ভালো দেখায় না।
সম্প্রতি খবর ছড়িয়ে পড়ে, গত ২ নভেম্বর আমেরিকার মধ্যবর্তী নির্বাচনের এক সপ্তাহ আগে, বাইডেনের ব্যক্তিগত আইনজীবীরা পেন বাইডেন সেন্টার পরিষ্কার করার সময় বেশ কয়েকটি ‘স্পর্শকাতর নথি’ খুঁজে পায়। পরে সেগুলো জাতীয় আর্কাইভে জমা করা হয়। এ ঘটনার পর হোয়াইট হাউজের একজন আইনজীবী রিচার্ড সাউবের আরও জানান, দ্বিতীয় দফায় গোপন নথি ডেলাওয়্যারের উইলমিংটনে বাইডেনের বাড়ির গ্যারেজ ও একটি রুম থেকে পাওয়া গেছে।
ডেমোক্র্যাটদের জন্য, যারা ডোনাল্ড ট্রাম্পকে তার মার-এ-লাগোর রিসোর্ট থেকে পাওয়া গোপন নথি ভুলভাবে পরিচালনার জন্য ফৌজদারি মামলার মুখোমুখি হওয়া উচিত বলে জোর দিচ্ছিলেন, তাদের জন্য এটি ভয়ানক সংবাদ। অপরদিকে, রিপাবলিকানদের জন্য, এটি একটি অপ্রত্যাশিত উপহার, বিশেষ করে ট্রাম্প বিষয়টি উপভোগ করছেন।
‘এফবিআই কি এখন জো বাইডেনের বাড়িতে, এমনকি হোয়াইট হাউজেও অভিযান চালাবে?’ ট্রাম্প তার সোশ্যাল-মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম ট্রুথ সোশ্যাল-এ এমন প্রশ্ন রেখেছেন? অন্যান্য রিপাবলিকানরাও দাবি করছেন, বিচার বিভাগ বাইডেনের সঙ্গে ট্রাম্পের মতোই যেন একই আচরণ করে। নভেম্বরেই মার্কিন অ্যাটর্নি জেনারেল মেরিক গারল্যান্ড ঘটনা তদন্তের তদারকি করার জন্য বিশেষ পরামর্শক নিয়োগ দিয়েছেন।
মেরিক গারল্যান্ড বাইডেনের কেস পর্যালোচনা করার জন্য বিশেষ পরামর্শক রবার্ট হুরকে নিযুক্ত করেছেন। শুধু তােই নয় তদন্ত থেকে উদ্ভূত যেকোনো ফেডারেল অপরাধের বিচার করার জন্য তাকে অনুমোদন দিয়েছেন। হুর একজন আইনজীবী যাকে ২০১৭ সালে ট্রাম্প মেরিল্যান্ডে অ্যাটর্নি হিসাবে কাজ করার জন্য মনোনীত করেছিলেন। ২০২১ সালে তার পদত্যাগ না হওয়া পর্যন্ত এ ভূমিকায় কাজ করছেন তিনি। তবে তিনি ‘ভয়ভীতি বা পক্ষপাত ছাড়াই দ্রুত ও পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে ঘটনা তদন্ত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।’
স্পষ্টতই ট্রাম্প ও বাইডেন উভয়েই একই জায়গায় নেমে এলেন। যুক্তরাষ্ট্রের নিয়ম অনুযায়ী, সরকারি গোপন নথি গ্যারেজ বা ক্লাবে নয়, সুরক্ষিত স্থানে সংরক্ষণ করার কথা। সমস্ত হোয়াইট হাউজ রেকর্ড সরাসরি জাতীয় আর্কাইভে যাওয়া উচিত যখন প্রেসিডেন্টের পদের দায়িত্ব শেষ হয়। যদিও বাইডেনের অফিস ও বাড়ি থেকে পাওয়া নথিগুলোর বিষয়বস্তু এখনো জানা যায়নি। তার আইনজীবীরা দাবি করেছেন তারা উদ্ধার হওয়া নথি হস্তান্তর করার আগে সেগুলোতে উঁকি মারেননি।
এ জাতীয় ঘটনার মিল পাওয়ায় বাইডেনের অধীনে নৈতিক উচ্চতায় ভাটা পড়েছে। যদিও দুটি কেস আলাদা হতেও পারে। তবে ডেমোক্র্যাটদের অভিপ্রায়, নথির ধরন ও পরিমাণের দিক থেকে কিছুটা হলেও বিচ্যুত হয়েছে। ডেমোক্র্যাটরা যে বিষয়টিতে চাপ দিচ্ছিলেন সেক্ষেত্রে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে মামলা চালানোর সম্ভাবনা আরও কমে গেলো।
বাইডেন মিত্ররা জোর দিচ্ছে, দুটি কেস মৌলিকভাবে আলাদা। তারা দাবি করছে বাইডেনের জন্য এটি একটি সৎ ভুলের বিষয় ছিল, যেখানে ট্রাম্প তার বাড়িতে রাখা শত শত নথি উদ্ধার করার যে কোনো প্রচেষ্টাকে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন এবং এতে অনেক সময় লেগেছিল। বাইডেনের দল আরও দাবি করছে, তারা প্রথম দফার নথিগুলো পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সেগুলো হস্তান্তর করেছে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা নথিগুলো বাইডেনের সম্পত্তির অনুসন্ধানের অংশ হিসাবে পাওয়া গেছে যা এফবিআইয়ের ওয়ারেন্টে নয় বরং বাইডেনের নিজের ইচ্ছায়।
যদিও বাইডেনের জন্য বেশ কিছু অস্বস্তিকর প্রশ্ন রয়ে যাচ্ছে। বারাক ওবামার প্রেসিডেন্সির নথিগুলো কীভাবে এসব স্থানে পৌঁছায়? কেন সেগুলো এখনো সেখানে ছিল? এসব নথি কি তথ্য ধারণ করে? প্রথম দফায় নভেম্বরের শুরুতে এবং দ্বিতীয় দফায় ২০ নভেম্বর উদ্ধার হলো, কেন এ সমস্ত কিছু প্রকাশ্যে আসতে সময় লাগলো? তবে একটি বিষয় নিশ্চিত, কংগ্রেসে নতুন ক্ষমতাপ্রাপ্ত রিপাবলিকানরা এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজে বের করাকে তাদের লক্ষ্য হিসাবে নেবে।