যুক্তরাষ্ট্রে সিরিয়ার সাবেক ২ গোয়েন্দা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ

ডেস্ক রিপোর্ট
  ১০ ডিসেম্বর ২০২৪, ২১:২২

সিরিয়ার ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট বাশার আল–আসাদ সরকারের অধীন কাজ করা দুই উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ এনেছে যুক্তরাষ্ট্র। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর  জানিয়েছে।
খবরে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগ সোমবার (৯ ডিসেম্বর) এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানিয়েছে।
গতকাল যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় অঙ্গরাজ্যের নর্দার্ন ডিস্ট্রিক্ট আদালতে অভিযোগ–সম্পর্কিত তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে। ওই দুই সাবেক গোয়েন্দা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধ চলাকালে বেসামরিক বন্দীদের ওপর নৃশংস ও অমানবিক আচরণের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত থাকার অভিযোগ আনা হয়েছে। ওই বন্দীদের মধ্যে মার্কিন কর্মকর্তারাও আছেন।
কৌঁসুলিদের তথ্য অনুযায়ী, ওই দুই অভিযুক্ত হলেন সিরীয় বিমানবাহিনীর গোয়েন্দা কর্মকর্তা জামিল হাসান (৭২) ও আবদুল সালাম মাহমুদ (৬৫)।
মার্কিন বিচার বিভাগ বলেছে, আসামিদের গ্রেফতার করতে পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। তারা পলাতক। তাৎক্ষণিকভাবে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বক্তব্য জানা যায়নি।
বিচার বিভাগ আরও বলেছে, দামেস্কের কাছে মেজেহ সামরিক বিমানবন্দরের (মেজেহ কারাগার) বন্দীশালায় মার্কিন নাগরিকসহ অন্য বন্দীদের প্রতি নিষ্ঠুর ও অমানবিক আচরণ করেছেন ওই দুই কর্মকর্তা। এর মধ্য দিয়ে যুদ্ধাপরাধ করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছিলেন তারা।
যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাটর্নি জেনারেল মেরিক গারল্যান্ড বলেন, ওই কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ হলো ২০১২ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত তারা তাদের (নিপীড়নের শিকার মানুষদের) বেত্রাঘাত করেছেন। শুধু তাই নয় লাথি, বৈদ্যুতিক শক দিয়েছেন ও পুড়িয়েছেন। দীর্ঘ সময় ধরে দুই হাতের কবজি বেঁধে তাদের ঝুলিয়ে রেখেছেন; ধর্ষণ ও মৃত্যুর হুমকি দিয়েছেন এবং মিথ্যা বলেছেন যে তাদের পরিবারের সদস্যরা নিহত হয়েছেন।
সিরিয়ায় ৫০ বছরের বেশি সময় ধরে আসাদ পরিবারের শাসন চলছিল। সপ্তাহান্তে বিদ্রোহীরা সে শাসনের অবসান ঘটিয়েছে। সিরিয়ায় আসাদ পরিবারের শাসনের শুরু হয় ১৯৭০ সালে হাফেজ আল-আসাদের ক্ষমতা গ্রহণের মাধ্যমে। ৫৪ বছর ধরে এই পরিবার দেশটির রাজনীতিতে একক আধিপত্য ধরে রাখে। তাদের শাসনামল চিহ্নিত হয়েছে গৃহযুদ্ধ, গণহত্যা এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য।
হাফেজ আল-আসাদ ১৯৭০ সালে একটি অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করেন। তিনি সিরিয়ার বাথ পার্টির একজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা ছিলেন এবং সামরিক বাহিনীতে তার শক্তিশালী অবস্থানের কারণে ক্ষমতা পাকাপোক্ত করেন। তার শাসন ছিল কেন্দ্রীয়করণ এবং কঠোর নিয়ন্ত্রণের প্রতীক।
১৯৮২ সালে হামা শহরে মুসলিম ব্রাদারহুডের বিদ্রোহ দমনে তার আদেশে যে গণহত্যা চালানো হয়, তাতে ১০ থেকে ২০ হাজার মানুষ নিহত হয়। এই ঘটনা তার শাসনের এক কালো অধ্যায় হিসেবে ইতিহাসে লেখা রয়েছে।
২০০০ সালে হাফেজ আল-আসাদের মৃত্যুর পর তার পুত্র বাশার আল-আসাদ ক্ষমতায় আসেন। পেশায় একজন চক্ষু বিশেষজ্ঞ বাশারকে প্রথমে একজন সংস্কারপন্থী নেতা হিসেবে দেখা হলেও, ক্ষমতায় আসার পর তিনি তার পিতার মতোই কঠোর নীতি অনুসরণ করেন।
২০১১ সালে আরব বসন্তের ঢেউ সিরিয়ায় পৌঁছানোর পর বাশার আল-আসাদের বিরুদ্ধে ব্যাপক বিক্ষোভ শুরু হয়। জনগণ তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার এবং মুক্তির দাবিতে রাস্তায় নেমে আসে, যা আসাদের শাসনের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে ওঠে।
তবে, আসাদ সংলাপের পরিবর্তে কঠোর দমননীতি গ্রহণ করেন। শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভকারীদের ওপর সামরিক অভিযান, বোমাবর্ষণ এবং রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহারের কারণে দেশটি ধীরে ধীরে গৃহযুদ্ধের মধ্যে ডুবে যায়। 
পরবর্তীতে বাশার আল আসাদকে বাঁচাতে এগিয়ে আসে রাশিয়া, ইরান ও লেবাননের হিজবুল্লাহ। এতে বিদ্রোহীরা পিছু হটতে বাধ্য হয়।
কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে লেবাননের শিয়া সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহ দুর্বল হয়ে যাওয়া, ইরান তার চিরশত্রু ইসরায়েলের দিকে মনোনিবেশ ও ইউক্রেন নিয়ে রাশিয়ার ব্যস্ত থাকার সুযোগে বিদ্রোহীরা আবারও তৎপর হয়ে উঠে। সম্প্রতি বিদ্রোহীরা সরকারি বাহিনীর বিরুদ্ধে তীব্র হামলা শুরু করে এবং এই হামলার মুখে আজ রবিবার নাটকীয়ভাবে দামেস্ক ছেড়ে প্রেসিডেন্ট আসাদ পালিয়েছেন বলে জানিয়েছে রয়টার্স।