এবার ইউরোপীয় দেশগুলোকে তুলাধোনা করলেন মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স। তিনি ইউরোপের গণতান্ত্রিক দেশগুলোর উদ্দেশে আক্রমণাত্মক বক্তব্য দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, এই দেশগুলোর হুমকি রাশিয়া কিংবা চীন নয় বরং তারা নিজেরাই। মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলনে তিনি ইউক্রেন যুদ্ধের সম্ভাব্য অবসানের বিষয়েও কথা বলবেন বলে আশা করা হচ্ছিল। খবর নিক্কেই এশিয়া।
কিন্তু তিনি বক্তৃতার বেশিরভাগ সময়ই ব্যয় করেছেন যুক্তরাজ্যসহ ইউরোপীয় দেশগুলোর সরকারকে দায়ী করে। তার অভিযোগগুলোর মধ্যে ছিল মূল্যবোধ থেকে সরে আসা এবং অভিবাসন ও মুক্ত মতের বিষয়ে ভোটারদের উদ্বেগকে উপেক্ষা করা।
জেডি ভ্যান্সের বক্তব্যের সময় পুরো হল জুড়ে ছিল নীরবতা। তবে পরে সম্মেলনে যোগ দেওয়া রাজনীতিকরা এর নিন্দা করেছেন। জার্মান প্রতিরক্ষামন্ত্রী বরিস পিস্টরিয়াস বলেছেন এটা গ্রহণযোগ্য নয়।
ভ্যান্স বলেন, ইউরোপকে তার নিজের নিরাপত্তার জন্য বড় পদক্ষেপ নিতে হবে। ইউক্রেন যুদ্ধের বিষয়টি তার বক্তব্যে এসেছে। সেখানে তিনি বলেছেন, একটি যৌক্তিক সমঝোতায় পৌঁছানো যেতে পারে। এর আগে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, তিনি ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন শান্তি আলোচনা শুরু করতে সম্মত হয়েছেন।
ভ্যান্সের অভিযোগ ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধিরা মুক্তমতকে দমন করছেন। তিনি ব্যাপক অভিবাসনের জন্যও ইউরোপকে দায়ী করেছেন। একই সঙ্গে ইউরোপের নেতাদের ‘কিছু মৌলিক মূল্যবোধ’ থেকে সরে আসার জন্যও অভিযুক্ত করেন তিনি।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক প্রধান কাজা কাল্লাস একে ইউরোপের সঙ্গে ‘লড়াইকে চাঙ্গা করার চেষ্টা’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। ইউরোপের অনেক দেশ যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ মিত্র।
রাশিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক রাষ্ট্রদূত মাইকেল ম্যাকফাউল পলিটিকোকে বলেছেন ভ্যান্সের এ ধরনের মন্তব্য ‘অপমানজনক’ এবং ‘অভিজ্ঞতার দিক থেকেও সত্য নয়।
যুক্তরাজ্যসহ কয়েকটি ইউরোপীয় দেশের বিষয়ে বলার জন্য ভ্যান্স তার ২০ মিনিটের ভাষণকে ব্যবহার করেছেন। তিনি একটি মামলার বিষয়ও তুলেছেন, যেখানে একজন সাবেক সেনা কর্মকর্তা একটি গর্ভপাত ক্লিনিকের বাইরে প্রার্থনা করায় ১৫০ মিটার সেফ জোনের নিয়ম লঙ্ঘন করার দায়ে অভিযুক্ত হয়েছেন।
এই সেফ জোনের বিষয়টি চালু করা হয়েছে ২০২২ সালের অক্টোবরে। এতে গর্ভপাতের পক্ষে বা বিপক্ষে যে কোনো তৎপরতা, প্রতিবাদ, হয়রানি কিংবা নজরদারি নিষিদ্ধ করা হয়। ভ্যান্স দাবি করেন ‘ব্রিটেনের ধর্মপালনকারীদের মৌলিক স্বাধীনতা’ হুমকির মুখে পড়েছে।
জার্মানিতে একটি উত্তেজনাপূর্ণ জাতীয় নির্বাচনের নয় দিন আগে তিনি দেশটিতে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে কট্টর ডানপন্থী অলটারনেটিভ ফর জার্মানিকে (এএফডি) সহযোগিতা না করার বিষয়টি যে তীব্র বিতর্ক হচ্ছে তা নিয়েও কথা বলেছেন।
নাৎসিদের পরাজয়ের পর গণতন্ত্র পুনঃপ্রবর্তনের কয়েক দশক ধরে দেশটির প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে একেবারে ডানপন্থি দলগুলোর সঙ্গে কাজ না করার বিষয়ে একটি ঐকমত্য ছিল।
তিনি বলেন, গণতন্ত্র এমন একটি নীতি যেখানে মানুষের কণ্ঠস্বর গুরুত্বপূর্ণ। দেয়াল তৈরির কোনো জায়গা নেই। আপনি হয় নীতি মানবেন কিংবা মানবেন না। তার বক্তব্যের পর এএফডির চ্যান্সেলর প্রার্থী অ্যালিস ভাইডেল সামাজিক মাধ্যম এক্সে ভ্যান্সের বক্তব্যের একাংশ শেয়ার করে লিখেছেন ‘চমৎকার’। তারা পরে সাক্ষাৎ করেছেন বলেও গণমাধ্যমে খবর এসেছে।
জার্মান প্রতিরক্ষামন্ত্রী বরিস পিস্টরিয়াস তার বক্তৃতায় বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট পুরো ইউরোপের গণতন্ত্রকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন এবং আমি যদি ঠিকমতো বুঝে থাকি তাহলে তিনি ইউরোপের একাংশ যেখানে স্বৈরতন্ত্র চলছে তার সঙ্গে তুলনা করেছেন- এটা অগ্রহণযোগ্য।
ভ্যান্সও তার বক্তৃতায় রোমানিয়ার নির্বাচনের কথা উল্লেখ করেছেন, যা গত ডিসেম্বরে বাতিল হয়ে যায়। কিছু ডকুমেন্টস থেকে জানা যায় যে নির্বাচনটি রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় হস্তক্ষেপের শিকার হয়েছে।
ওই সম্মেলনে ভ্যান্স বলেন, যদি আপনাদের গণতন্ত্র বিদেশি কোনো দেশের এক লাখ ডলারের ডিজিটাল বিজ্ঞাপনের কারণে ধ্বংস হয় তাহলে সেটি আসলে শুরু থেকেই যথেষ্ট শক্তিশালী নয়। রোমানিয়ার প্রধানমন্ত্রী মার্সেল সিওলাসু বলেছেন, তার দেশ গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের ধারক, যেই মূল্যবোধ ইউরোপ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে শেয়ার করে।
তিনি বলেন, রোমানিয়ার সব প্রতিষ্ঠান নাগরিকদের ক্ষমতায়ন এবং স্বাধীনভাবে ভোট দেওয়ার নিশ্চয়তার মাধ্যমে একটি মুক্ত ও অবাধ নির্বাচনের জন্য অঙ্গীকারাবদ্ধ। পরে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন ভ্যান্স।
জেলেনস্কি বলেছেন, যুদ্ধ অবসানের পরিকল্পনায় আরও কাজ করার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আর ভ্যান্স বলেছেন তারা ফলপ্রসূ আলোচনা করেছেন।